জনাব, সোহেল তাজ, নিশ্চয়ই এক মহাতৃপ্তির মধ্যে আছেন। জানি, এ তৃপ্তির রেশ এক জীবনেও হয়তো কাটবে না, আর কাটারও কথা নয়।
একদিকে আপনি একজন পরীক্ষিত বাবা, অন্যদিকে আদর্শ পুরুষ, এই দু’য়ের মিশ্রণে আপনি নিশ্চই এখন আমাদের কাছে স্বর্গদূতের মতো। এ কারণে আপনাকে অভিবাদন জানানো এখন আমাদের মহাদায়িত্ব আর মহাকর্তব্যেরই অংশ, যা আমরা কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না।
যাই হোক, আপনাকে আমরা ‘পরীক্ষিত বাবা’ বলেছি এ কারণেই যে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় আপনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছিলেন, এখানে সময় দেওয়ার চেয়ে আপনার দু’সন্তানকে সময় দেওয়া অনেক উত্তম।
আসলে আমরাও তাই মনে করি। এমন বাবা জগতে ক’জন আছেন, যে স্বদেশের ১৬ কোটি সন্তানের চেয়ে তার ঔরসজাত দু’সন্তান আর স্ত্রীকে উত্তম মনে না করেন। আর এ কারণে আপনি আপনার স্ত্রী-সন্তানদের কাছে মহাসম্মানের পাত্র হতেই পারেন।
জনাব সোহেল তাজ, আমি আপনাকে দৃঢ়তার সঙ্গে আজ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, উল্লেখিত বক্তব্যের পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীতো নয়ই বরং একজন সাধারণ সংসদ সদস্য হিসেবেও সেদিন আপনি আপনার সব যোগ্যতা হারিয়েছিলেন। তাই নতুন করে আপনাকে হারানো কিংবা ফিরে পাওয়ার বাসনা নিশ্চয়ই আর কারোরই নেই।
অন্যদিকে আপনাকে আদর্শ পুরুষ বলেছি এ কারণেই যে, আপনি এরই মধ্যে খুব চমৎকারভাবে তরুণদের আশা আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করে, তাদের মানসিক দৃঢ়তা আর স্বাজাত্যবোধকে গলা টিপে হত্যা করে স্বদেশের ১৬ কোটি সন্তানকে বঞ্চিত করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুদূর মহাস্বর্গে স্বর্গসুখে দিন কাটাচ্ছেন স্বদেশের এক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল মানুষের কাছে আদর্শ পুরুষ সেজে।
জনাব সোহেল তাজ, আপনি আপনার খোলা চিঠিতে দেশপ্রেমের কথা বলেছেন, সেবার কথা বলেছেন, বলেছেন আদর্শ আর সম্মানের কথা আর মুখ ভরে শুনিয়েছেন কাপাসিয়ার মানুষের অনুরোধে স্বর্গ থেকে নরকে আসার কাহিনী। আপনি বলেছেন, সম্মান রক্ষার্থে আপনি পদত্যাগ করেছেন। জনাব সোহেল তাজ, আপনি কোন সম্মান আর আদর্শের কথা বলছেন? আপনি আজ কাদের কাছ থেকে এতো সম্মান অর্জন করেছেন, যা রক্ষা করার জন্য এত ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন?
জনাব সোহেল তাজ, কি করবেন এতো সম্মান দিয়ে? আপনি কি সেই রাষ্ট্রের সেই নাগরিকদের সম্মানে এতটা সম্মানিত বোধ করছেন যেখানে একজন বৈধ রাষ্ট্রপতি হত্যার বিচার হতে ৪০ বছর সময় লাগে? আপনি কি তাহলে সেই ভূ-খণ্ডের সেই সম্মানে সম্মানিত বোধ করছেন যেখানে জেলহত্যার মত জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হওয়াকে অপরাধ মনে করা হয় না? জনাব সোহেল তাজ, যেখানে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার, যেখানে আজ চিকিৎসার অভাবে মানুষ ধুকে ধুকে মরছে, যখন মানুষ আইন আদালতে পাচ্ছে না সঠিক বিচার আর যখন দরকার এগুলোর পরিবর্তন ও সংশোধন, ঠিক তখনই আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বীয় পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর। তাও আবার নিছকই সম্মান আর আদর্শ রক্ষার্থে!
আসলে আপনার রাজনৈতিক দুর্বলতা আর মানসিক দীনতা-হীনতা’র কথা ভেবে আমরা আজ অবাক না হয়ে পারি না। জনাব সোহেল তাজ, এতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর মানসিক দৃঢ়তা নিশ্চই আপনার থাকা দরকার যে, আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে এতটা স্পর্শকাতর হয়ে অন্তত প্রগতির কথা যেমন বলা যায় না, তেমনি জাতীয় কোনো আদর্শকেও লালন করা যায় না। এজন্য চাই রাজনৈতিক একনিষ্ঠতা আর দৃঢ়তা। এছাড়াও পিতৃহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতা যাকে বয়ে বয়ে বেড়াতে হয়, তার মুখে নীতি, সম্মান আর আদর্শের কথা যেমন শোভা পায় না, তেমনি শোভা পায় না স্বীয় পদ থেকে দূরে সরে গিয়ে সম্মান আর আদর্শ রক্ষা করার কথা বলা।
আপনি বলেছেন, “আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি, সব সময় অনিয়ম আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। ’’ হ্যাঁ জনাব সোহেল তাজ, আপনি আপনার মায়ের কাছ থেকে যথার্থই শিখেছেন কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আপনার বাবার কাছ থেকে কিছুই শেখেন নি, শেখেন নি কিভাবে, কখন, কাদের বিরুদ্ধে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করতে হয়; শেখেন নি আপনার প্রিয় স্বর্গভূমি মার্কিন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকেও। যা হোক, আপনার স্ব-পদের সক্রিয় ভূমিকা হয়তো আমাদের কিছুটা উপকারে এলেও করতে পারতো, তবে আপনার চলে যাওয়াতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। এ রকম অনেক স্বর্গদূত এমন অনেক স্বর্গীয় বাসনা নিয়ে আসে আর যায়, এতে মানুষের মনে স্বর্গীয় সুষমার এক আপেক্ষিক স্পর্শ লাগলেও মানুষের শাশ্বত মনে শাশ্বত কোন স্পর্শ লাগে না। কারণ স্বর্গদূতেরা চায় শুধু স্বর্গ। কিন্তু মানুষ ছাড়া যে স্বর্গ অসম্ভব, তা স্বর্গদূতদের কে বোঝাবে? যদি স্বর্গদূত নিজেই না বোঝেন। আপনার শুভ কামনায়..............
লেখক: ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত
বাংলাদেশ সময় : ১৮০০ ঘণ্টা, ২৮ এপ্রিল, ২০১২
এমিল রুনি, অতিথি লেখক / সম্পাদনা : জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর