ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

হতাশ মানুষ কাউকেই বিশ্বাস করে না

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, মে ২, ২০১২
হতাশ মানুষ কাউকেই বিশ্বাস করে না

একদিকে সরকার, অন্যদিকে বিরোধীদল। আমরা দেখছি কেবলই বৈরিতা।

বাংলাদেশের মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে কেমন হওয়া উচিৎ এদের পারস্পরিক সম্পর্ক? ১৯৯০-এর গণঅভ্যূত্থানের পর থেকে সংসদীয় ধারায় দেশ ফিরলেও সরকার-আর বিরোধী দলের মধ্যকার সংঘাতময় রাজনীতি এখন জনগণের দিন-রাতের উদ্বেগ।

গণতন্ত্র এই দেশে সফল হবে কিনা এমন প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নের উত্তর শুধু সরকারের কাছে চাইলেই হবে না। বিরোধীদলকেও দিতে হবে।

সংসদীয় ধারায় সরকার আর বিরোধী দলের সম্পর্কটা যেমন হওয়া দরকার তা হয়নি, হচ্ছে না। ফলে গণতন্ত্রও সেভাবে দানা বাঁধেনি। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলেই (শুধু ইলিয়াস আলী নিঁখোজ হওয়ার মতো বড় ঘটনা নয়) সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে তৎপর হয়ে ওঠে। বিরোধীরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্রুত। এরপর শুরু হয় কথার খেলা, শুরু হয় রাস্তায় সাধারণ মানুষের সম্পদের ওপর হামলে পড়া, দেশকে অস্থিতিশীল করা। কি ভয়ংকর অবিশ্বাস সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে। কতটা দানবীয় তার প্রকাশ।

কোনো ঘটনায় সরকার দায়িত্ব এড়াতে চাইলে বিরোধী পক্ষ ঝাঁপিয়ে পড়বেই। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা কি অর্থে স্বাভাবিক? সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চরিত্র কি হবে তা ভেবে দেখা দরকার। সংসদীয় গণতন্ত্র যেখান থেকে এসেছে সেই গ্রেট ব্রিটেনে বিরোধী দলকে বলা হয় হার ম্যাজেস্টিজ রয়্যাল অপজিশন। তার মানে সেখানে বিরোধী দলও সরকারেরই অংশ। বিরোধী পক্ষেও একটি আনুগত্য থাকে, সরকারের প্রতি নয়, দেশের  প্রতি, জনগণের প্রতি।    

বাংলাদেশে সেই ১৯৯১ সাল থেকে যে সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র চালু হয়েছে তাতে দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি এই আনুগত্যের দেখা মেলা ভার- তা বিরোধী দল হোক বা সরকারি দল হোক। এখানে নির্বাচনে যারা জেতে তারা দেশের মালিক বনে যায়। আর সেই মানসিকতা থেকে জন্ম নেয় গ্রাম্য দলাদলি, পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীবাজি আর লুট-পাটের এক রাজত্ব।      

সরকারি দল আর বিরোধী দল-এর পারস্পরিক আস্থা খুব জরুরি জাতীয় উন্নয়নের জন্য। আর এই আস্থা আসে  গণতন্ত্রের ওপর আস্থা থেকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। একটাই চেষ্টা কে কাকে ঘায়েল করতে পারে। প্রকারান্তরে এটি গণতন্ত্রের ওপরই অনাস্থা।

গণতন্ত্রে কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। আজ যারা ক্ষমতায়, তারা যদি তা ভাবেন, বুঝতে হবে গণতন্ত্রেই তারা বিশ্বাস করেন না।   জনগণই যেখানে বিধাতা সেখানে জনগণের আশা আকাঙ্খার বাইরে গিয়ে চিন্তাভাবনা করা গণতন্ত্রবিরোধী মানসিকতা। তেমনিভাবে বিরোধী দলের ভাবনা যদি এই হয় যে দেশকে নিয়ে শুধু তারাই ভাবেন, শুধু তাদেরই দেশপ্রেম আছে, আর কারো নেই, তা হলে বুঝতে হবে তাদের ভাবনাচিন্তাও গোলমেলে। এটা বাংলাদেশের গণতন্তের একটা ব্যাধি, এর চিকিৎসা কি কেউ বলতে পারে না।

দলগুলোর ভাবনা-চিন্তা অনেক আত্মঘাতি। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে অবৈধ প্রতিপন্ন করা, অদেশপ্রেমিক বলার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করা হয়। আর এর ফাঁকা দিয়েই চলে আসে ১/১১-এর মতো রাজনীতি বিরোধী শক্তি।

রাজনীতিবিদদের ভাবা দরকার গণতন্ত্রের চর্চাটা কোথায় হবে? রাজপথ দখল নাকি সংসদ?

দেশে মানুষ এখন সারাক্ষণ সরকারকে গালমন্দ করে।   তার অর্থ কি এই যে তারা বিরোধী পক্ষকে বিশ্বাস করে? বাংলাদেশে গত ২১ বছরে দুটি দল বা জোট (যাই বলি না কেন) কে দেখে এতোটাই হতাশ যে মানুষ এখন কাউকেই বিশ্বাস করে না, এদেরও না,  ওদেরও না। ফলে একটা ফাঁকা তৈরি হয়। এখানেই গণতন্ত্রের সংকট। যদি মানুষ দুটি বড় রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে, তাহলে পরিণতিটা কি একবারও কি ভাবছেন নেতা-নেত্রীরা?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: পরিচালক, বার্তা, একাত্তর টেলিভিশন

বাংলাদেশ সময় : ১১৪২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।