ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

কোন পথে হাঁটবো আমরা?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
কোন পথে হাঁটবো আমরা?

বাংলাদেশে মানুষের নাকি দু’ধরনের রক্ত- ‘এ’ আর ‘বি’। এর বাইরে আর কোনো ব্লাড গ্রুপ থাকলে তারা সংখ্যালঘু।

সমাজে রাজনৈতিক বিভক্তি এমন চরম আকার নিয়েছে যে, এখন আর কাউকে নিরপেক্ষ থাকা বা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যেন সবার জন্য এমন চরমপন্থী অবস্থান বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে আমাদের সমাজে।

এই সংস্কৃতি এখন নেই কোথায়? সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী সবখানে, এমনকি টেলিভিশনের টক-শোতে জাতিকে জ্ঞান দিতে এসেও জাতির জ্ঞানী-গুণীরা জানিয়ে দিচ্ছেন কে কোন দল করেন বা সমর্থন করেন।

কিন্তু শিক্ষক, সাংবাদিক বা আইনজীবীদের জন্য দর্শনটি কি হওয়া উচিৎ? সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা যে কেউ করতেই পারেন। তার অর্থ কি এই যে তিনি বিএনপি সমর্থক? আবার বিরোধীদলের সমালোচনা করলে কি তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন? সরকারের বা বিরোধীদলের সমালোচনার অর্থ কি একজন সমালোচক সামগ্রিকভাবে সেই সংশ্লিষ্ট  দলের সমালোচক?

আত্মমর্যাদা আছে, চিন্তার জগতে মনুষ্যত্ববোধ আছে, সংস্কৃতি আছে এমন মানুষের জন্য এ এক কঠিন সময়। তারা কি করবেন? ‘এ’ আর ‘বি’ এর মাঝে অবস্থান নিয়ে মধ্যপন্থা বেছে নেবে, নাকি চরম সত্যটা বলে দু’পক্ষের রোষানলে পড়বে?

আমাদের দেশে পালাক্রমে দুটি দল ক্ষমতায় আসছে। নির্বাচনে জেতার পরপরই শাসকদলের কর্মীরা মরিয়া হয়ে ওঠে সবকিছু দখলে নেওয়ার জন্য। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও মদদ দেয় এসব কাজে। আর যে নেতা-নেত্রীরা থাকেন ওপরের সারিতে, তারা হয়ে ওঠেন দূরের কোনো মানুষ। কিংবা ক্ষমতার স্পটলাইটে তাদের চোখ এতোটাই ধাঁধিয়ে যায় যে তারা নিজেদের রঙিন জীবন ছাড়া আর কিছু দেখতে পান না।

আর যারা ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তাদের কাজ হচ্ছে,  কত তাড়াতাড়ি সরকারকে হেয় করা যায় আর টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানো যায়। এ জন্য জ্বালাও, পোড়াও করে মানুষের জীবনকে অস্থির করে তোলেন তারা।

এ অবস্থা চলছে কয়েক দশক ধরে। মানুষ এখন ভাবছে, এই দুই চরমপন্থী অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় কি করে? মানুষের প্রত্যাশা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা নতুন পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হোক। কারণ মানুষ দেখছে এরা সবাই সামাজিক, প্রশাসনিক, মানবিক মূল্যবোধের ওপর স্থান দিচ্ছে দলীয় স্বার্থকে। তারা পালাক্রমে ক্ষমতায় আসেন, আর মানুষকে বুঝতে ভুল করেন। আমরা ভাবি, মানুষতো ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়। কিন্তু তা আর হয় না। আবার ভুল। আবার অরাজকতা।

কিন্তু এ কথা তো মানতেই হবে যে, দেশে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি বা প্ল্যাটফরম এখনো প্রস্তুত নয়। তাই গণমাধ্যম বা সুশীল সমাজের দায়িত্ব কি হবে? সজাগ থাকা, যাতে দেশ নৈরাজ্যের দিকে চলে না যায়।

এক কঠিন সময় আজ আমাদের জন্য। যে সংঘাতময় রাজনীতি আমরা দেখছি, তা দেশকে শুন্যতার দিকে নিয়ে যায় কিনা এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এক দিকে শাসকের মঞ্চে যারা আছেন, তাদের সুশাসনের সমস্যা। অন্যদিকে যারা এর বিরোধিতা করছেন, তাদের জোটে আছে এমন শক্তি, যারা সবসময় এদেশের প্রগতির পথের অন্তরায় এবং সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার।

যারা দেশ নিয়ে ভাবেন, নতুন করে ভাব‍ার সময় এসেছে তাদের। কোনো একদিকে একতরফা কথা বললে, রাজনীতির পসরা ঘরে তুলবে প্রতিক্রিয়াশীর চক্র। সমাজে যদি এই ধারণ প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাহলে প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা দূর হবে, যে স্থানে যে তৎপরতা দরকার প্রশাসন তা করবে, তবেই মানুষ কিছুটা হলেও সুশাসনের সুঘ্রাণ পাবে। হবে কি তা? আশা নিয়েই তো বাঁচে মানুষ।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বার্তা পরিচালক, একাত্তর টেলিভিশন

সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর  
Jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।