ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ এবং অতঃপর

শাখাওয়াৎ নয়ন, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১২
হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ এবং অতঃপর

হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত উপন্যাস ‘দেয়াল’ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পটভূমিকায় রচিত। উপন্যাসটির দুটি পর্ব ছাপা হওয়ার পরপরই ইতিহাস বিকৃতির জোর আলোচনা উঠেছে।

বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াতে শোরগোল পড়ে গেছে। এই শোরগোল খেলায় কে কত বড় চ্যাম্পিয়ন কিংবা কার আগে কে যেতে পারে তার একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি সেদিনের ছেলেরাও হুমায়ূন আহমেদের মত লেখককে ‘ছবক’ দিতে শুরু করেছে। এমনকি যারা হুমায়ূন আহমেদের শুভাকাঙ্খী, যারা হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য নিয়ে লেখালেখি করেন, তাদেরকে পর্যন্ত মিডিয়াতে আক্রমন করতে ছাড়ছে না।

লক্ষ্যণীয় বিষয়- একটি উপন্যাসের মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা ছাপা হয়েছে, এখনও পুরোটাই বাকি। অথচ সেই উপন্যাস নিয়ে সকল মহলের কী তড়িৎ প্রতিক্রিয়া! আমরা হুমায়ূন আহমেদের শুভাকাঙ্খীরা দাঁতে দাঁত চেপে প্রতীক্ষায় থেকেছি। দেখা যাক, হুমায়ূন আহমেদ কী বলেন? অতঃপর তিনি বলেছেনÑ ম্যাসকারেনহাস এর ‘লিগ্যাসি অব ব্লাড’ এবং হালিমদাদ খানের ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭২-৭৫’ বই দুটি থেকে তিনি তথ্য নিয়েছেন। বলেছেন, ‘ভুলে ভরা এই বইগুলো আগেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ ছিল। ’

প্রশ্ন হচ্ছে- উক্ত বই দুটি এখনও কেন নিষিদ্ধ করা হয়নি? ওখানে কি ইতিহাস বিকৃত হয়নি? নাকি অন্য কেউ করলে অসুবিধা নেই? যারা হুমায়ূন আহমেদের লেখায় এত বড় ভুল খুঁজে পেয়েছেন, তারা কি অন্যদেরটা একটওু দেখবেন না? আমার বিশ্বাস, নিশ্চয়ই তারা দেখবেন। ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। বাজারে এমন অনেক বই পাওয়া যাবে, যে গুলোতে এমন অনেক ভুল তথ্যে ভরপুর। এখন কি তাহলে বিদগ্ধ মহলের সেই গুলি খুঁজে দেখা উচিৎ নয়? বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের পুর্বে বাংলাদেশে এমন বহু পুস্তক রচিত হয়েছে। সেই সব পুস্তক যদি থেকেই যায় তাহলে ভবিষ্যতে একই রকম ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ হয়তো বলবেন, আদালতের সাক্ষ্য বিবরণীই এক্ষেত্রে একমাত্র নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসাবে পরিগণিত হবে। তাহলে সরকারের উচিৎ উক্ত মামলার নথিসমুহ পুস্তক আকারে প্রকাশ করা।

যারা হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য সম্পর্কে নুন্যতম খোঁজ-খবর রাখেন, নিশ্চয়ই তারা জানেন। তিনি একজন দরদী লেখক। সকল চরিত্রের প্রতি তার অসম্ভব মায়া-মমতা। তিনি কারো প্রতি নির্দয়-নিষ্ঠুর নন। তার লেখায় সকল চরিত্রই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ‘দেয়াল’ উপন্যাসে তিনি কর্নেল ফারুক চরিত্রকে প্রথমেই অনেকখানি ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিতর্ক সৃষ্টিতে এটাও একটা বিষয়। প্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে, ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের শুরুতেই মন্টু একটা মস্তবড় চন্দ্রবোড়া সাপ মারে। মাস্টার চাচা বলেন, যে সাপটা রয়ে গেছে, সেটা পুরুষ সাপ। উপন্যাসের পুরো ভাগে মাস্টার চাচা চরিত্রটি পরিবারের সকলের কাছে ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ। উপন্যাসের শেষে সেই মন্টুই মাস্টার চাচাকে মাছকাটা বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ফালা ফালা করে ফেলে।  

প্রিয় পাঠক, একবার ভেবে দেখুন- ‘দেয়াল’ উপন্যাসে কত রকমের মোচড় থাকতে পারে? তা সহজেই অনুমেয়। আলোচ্য বিষয়টিতে, যে কোনো কারণেই হোক সরকার ভালো রকম সম্পৃক্ত হয়েছে। এতখানি দরকার ছিল কিনা ভেবে দেখার আছে। তবে এতকিছুর মধ্যেও উক্ত বিষয়ে একটি ভালো লেখা চোখে পড়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন একটি দৈনিকে ‘ইতিহাসের কাছে উপন্যাসিকের দায়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ একজন মোহন যাদুকর। তার হাতে এখনও অনেক যাদু আছে। ’   

লেখক, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অষ্ট্রেলিয়া।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।