একের পর এক সাংবাদিক খুন, নির্যাতন! ঢাকার রাজপথে তিন ফটো সাংবাদিককে পিটিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেবার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলার সময়েই আবার কোর্টপাড়ায় সাংবাদিক-আইনজীবীদের পিটিয়েছে পুলিশ! সব মিলিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে সরকারের এক রকম মুখোমুখি অবস্থা! আওয়ামী ফোরামের সাংবাদিক যারা আছেন দেশে তারাও আছেন চরম বেকায়দায়! মনের মধ্যে আওয়ামী লীগ, কিন্তু মুখ ফুটে প্রকাশ্যে বলার অবস্থা নেই! বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকররা এতটাই তেতে আছেন যে, তেমন প্রকাশ্যে বলতে গেলেই যেন মার খাবেন!
একটা কথা বিভিন্ন সময়ে লিখেছি যে, মিডিয়ার এত সাপোর্ট নিয়ে এর আগে কোনো সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেনি! এখনও এ সরকারের পিছনে যে মিডিয়ার সাপোর্ট আছে তা ১৯৭৪-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের পিছনেও ছিলো না। এরপরও সরকারের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক আজ এমন কেন? কী বলবেন মন্ত্রী? এসব বিরোধীদলের চক্রান্ত? সরকারের এই পড়ন্ত বেলায় দেশের মানুষ আর তা শুনবে কেন? সাংবাদিক নির্যাতনকারী পুলিশের এসব সদস্য কী বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট? এসব বলেও এখন আর পার পাওয়া যাবে না।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক বিজয়ের পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদল শিক্ষানবীশ কচিকাঁচাকে (!) নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মুসা ভাই তখন লিখেছিলেন, শিক্ষানবীশ দিয়ে দল চালানো যেতে পারে, সরকার চালানো যায় না। দেশের বাস্তবতা প্রমাণ করে প্রবীণ সাংবাদিক মুসা ভাই’র সে ভবিষ্যতদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি এক লেখায় দেশবরেণ্য শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল লিখেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়ায় বিএনপি দেশ শাসনের অধিকার হারিয়েছে। কিন্তু শেয়ারবাজার, ড. ইউনুস, আবুল হোসেন, শাহজাহান খান, ছাত্রলীগসহ কি কি কারণে আওয়ামী লীগ তার ভোটব্যাংক আর বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন হারিয়েছে, তাও সাদাসিধা লিখেছেন জাফর ইকবাল স্যার।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? কেউ যদি মনে করে সে কম জানে, তখনইতো আরেকজনের কথা শোনে বা শোনার চেষ্টা করে! কিন্তু কেউ যদি মনে করে সে সব জানে অথবা সবচেয়ে ভালো জানে, তাকে তো কিছু জানানোর চেষ্টা করাও বোকামি। কিন্তু এভাবে বেশি জানতে জানতে তো পদ্মা সেতুর এ অবস্থা! এ সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি দৌড়ানোর কথা বলে গত নির্বাচনে আওয়ামী দেশের মানুষের ভোট নিয়েছে। কিন্তু এ আমলে সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন নিয়েই সরকারের গলদগর্ম অবস্থা! ঢাকার মাথার ওপর দিয়ে কি কারণে মনোরেল চলতে পারলো না, কি অসুবিধার কারণে শেয়ারবাজার লুটেরাদের ধরা-বিচার করা হলোনা, কি কারণে আবুল হোসেন-সুরঞ্জিত সেনগুপ্তদের মন্ত্রিসভার ছায়া দিয়ে রাখা হলো, এসবের জবাব তো আগামী নির্বাচনে ভোট চাইতে গেলে পাবলিককে দিতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি! প্রশ্নের মুখে রাগ করে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে এসেছেন! অনেকটা ‘কুকুর হইতে সাবধান’ ঢং’এ সাংবাদিকদের পুলিশ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ! কচিকাঁচা মন্ত্রীদের মুখে এসব কী কথাবার্তা? এর আগে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান দেশের মানুষকে কম খেতে বলেছিলেন! এর সবই কিন্তু আগামী নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ার হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে চাইলে সাহারা খাতুনকে সাফ সাফ জবাব দিতেই হবে। সাগর-রুনি’র খুনিদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ধরার প্রতিশ্রুতি কেন তিনি রাখেননি, কেন তার পুলিশ বিনা উস্কানিতে সাংবাদিক পেটাচ্ছে--- এ জবাব তাকে দিতেই হবে। রাগ করে অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গেলে পার পাওয়া যাবে না। রাগ থাকলে মন্ত্রিসভা থেকে চলে গেলেই বরং দেশ বাঁচবে। এ ধরনের ব্যর্থ মন্ত্রী পোষার সামর্থ্য গরিব বাংলাদেশের নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুব শিগগির অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে আসছেন। ভ্রমণ বললাম এ কারণে যে পাসপোর্টের যে ছোটখাটো বিষয় উদ্বোধনের জন্য তিনি আসছেন, তার জন্য মন্ত্রীর আসা লাগে না। ঢাকা থেকেই অনলাইনে তা করা যায়। ডিজিটাল সরকারের মন্ত্রীর তা-ই করা উচিত। এখন দেশের একশ সমস্যা বাদ দিয়ে সরকারি টাকা খরচ করে অস্ট্রেলিয়া দেখার তার যদি এতই সখ জাগে, আখেরে কিন্তু এসবের লেনাদেনা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই!
অতঃপর পুলিশকে খুবই খারাপ কিছু হিসাবে স্বীকৃতি দিলেন দেশের ডেপুটি পুলিশ মন্ত্রী! এরপর তিনি নিজে পুলিশের ওখানে থাকেন কি করে? বা পুলিশইবা কি করে তাকে সালাম দেবে? এরপর সাংবাদিকরাই বা তাদের নিরাপত্তার জন্য কার কাছে যাবেন? এমন ভূমিধস-বিজয়ের এত বিপুল প্রত্যাশার একটি সরকারের এমন করুণ অবস্থা হবে তা কি কেউ ভাবতে পেরেছে? কচিকাঁচাদের মন্ত্রিসভা গঠনের পর অনেকে বলেছিলেন, এদের কোচিং দেয়া হবে। কোচিং যে ঠিকমতো হয়নি, তাতো এর মাঝে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। মার্কিন স্টাইলে উপদেষ্টাদের নিয়ে সরকার পরিচালনার পরীক্ষা-নিরীক্ষাটিও চরম ব্যর্থ হয়েছে। আগামী নির্বাচনে এসব নিয়ে কিন্তু সাহারা-টুকু-কামরুলদের কেউ ধরবে না, জিজ্ঞেস করবে না। ধরবে-জিজ্ঞেস করবে শেখ হাসিনাকে। কিন্তু শেখ হাসিনা এসব নিয়ে যে ভাবিত, দেশের মানুষের কাছে এমন কোনো বার্তা নেই। বার্তা একটাই আছে তাহলো, সম্ভাব্য এসব পরিস্থিতির আশংকাতেই তিনি তত্ত্বাবধয়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছেন না। আর আমার ধারণা বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ছাড়াও নির্বাচনে যাবে। নির্বাচন মিস করবে না।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় ১০৪৩ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১২
এমএমকে- menon@banglanews24.com; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
Jewel_mazhar@yahoo.com