ঢাকা: গত ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি মারা যাবার পর বেশ ক’টা রাত আমার যেমন লেগেছিল গত রাতে ঠিক সেই রকম অনুভূতি হচ্ছিল। একই সঙ্গে শীত লাগছিল, গরম লাগছিল, অস্থির লাগছিল, ইচ্ছে করছিল ভেঙ্গে ফেলি সবকিছু, ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে কাঁদি, ইচ্ছে করছিল যতো গালি জানি জোরে জোরে সেগুলো বলে রাগটা কিছুটা হলেও কমাই।
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড, প্রথম আলোর তিন ফটো সাংবাদিককে পেটানো, বিডি নিউজে হামলা করে সাংবাদিক সহ অফিস কর্মীদের কোপানো, আবার মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ক্লাবের ভেতর বিচারপ্রার্থী এক নারীর শ্লীলতাহানি, এ ভয়ংকর ঘটনার প্রতিবাদ করায় তিন সাংবাদিক ও দুই আইনজীবীকে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা--- এসবকিছু কেড়ে নিয়েছে ঘুম।
আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশি নির্যাতনে আহত তিন সাংবাদিক হলেন, কালের কন্ঠের আদালত প্রতিবেদক এম এ জলিল উজ্জ্বল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আদালত প্রতিবেদক তুহিন হাওলাদার ও প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক প্রশান্ত কর্মকার।
কোতোয়ালী থানার ওসি সালাহউদ্দীন খান ও এসি রাজিব আল মাসুদের নির্দেশেই পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতরা।
কী হচ্ছে, কী হচ্ছেটা কী দেশে? আমরা কোন দেশে বসবাস করছি? সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের তৃতীয় চোখ। চোখের ওপর এভাবে হামলা হলে দেশ তো অন্ধ হয়ে যাবে! একটি অন্ধকার দেশে কী কোন সভ্য সমাজ বাস করতে পারে?
সাগর-রুনি নিহত হবার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা এখনো শেষ হয় নি, বিডি নিউজে হামলার পর তিনি এবার সর্তকতা অবলম্বন করেছেন, বলেছেন শিগগিরই গ্রেপ্তার হবে। আল্লাহ মালুম..তার ‘শিগগিরই’ কতো দিনে হয়!!!!
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেডরুম পাহারা দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এবার বেডরুম নয়, যতো গুলো ঘটনার কথা উপরে বলা হয়েছে প্রতিটি ঘটেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাজপথে, আর দেশের প্রথম সারির বার্তা সংস্থার বিডিনিউজের ঘটনাটি ঘটেছে এর মুল অফিসে। তাহলে কী আপনি দয়া করে বলবেন, আপনি যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, যে সংবিধানে ছুঁয়ে শপথ নেবার সময় আপনি বলেছিলেণ, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব আপনার, কোথায় সেই দায়িত্ব পালন হচ্ছে, দয়া করে বলবেন কী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা এসি শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিজে পিটিয়েছেন একই সঙ্গে তার অধিনে পরিচালিত পেটোয়া বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন এই বলে যে, পেটা, সাংবাদিক পেটালে কিচ্ছু হয় না, সেই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের কী নিরাপত্তা দেবে? রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেই দেশে মধ্যযুগ অবতীর্ণ হতে কী খুব বেশি সময়ের দরকার হয়?
এদিকে আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এক অমর বাণী নিয়ে আর্বিভুত হয়েছেন আমাদের ত্রাণকর্তা রূপে। সাংবাদিকতার দিক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। সাংবাদিকদের ব্যাপারে তার নতুন ফর্মুলা হলো, পুলিশের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।
এ বিষয়ে মিল্টন আনোয়ার নামের একজন সাংবাদিক ফেসবুকে বলেছেন, ‘আগের দিনে বাড়িতে লেখা থাকতো কুকুর হইতে সাবধান...স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কি পুলিশকে এরকম কিছুর সঙ্গে তুলনা করলেন?’
অপরদিকে দেশজুড়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন। তবে তার আগে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি কেবল যে অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, সে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত প্রশ্নেরই উত্তর দেবেন, অন্য কোনো প্রশ্নের নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণার কারণ হলো, তিনি জানতেন, তার কাছে সাংবাদিকরা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইবেন।
কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সে ঘোষণায় কর্ণপাত না করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
আমার ভীষণ ভয় করছে। কী করবো এখন? একজন সাংবাদিকতার নতুন সিলেবাস দেবেন, আরেকজন কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে যাবেন। তাহলে আমরা যাবো কোথায়? কার কাছে যাবো? নাকি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেব?
বাংলাদেশ সময় ২১৫৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১২
জেএ/সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
Jewel_mazhar@yahoo.com