মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা না বলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেটাই ভালো ছিলো।
সাদা চোখে দেখলে বোঝা যায়, তিনি পুলিশকে উৎসাহ দিয়েছেন। (অবশ্য নিন্দুকেরা বলছে, পুলিশ যে চরম খারাপ তা নিয়ে মন্ত্রীর কোনো সন্দেহ নেই। তাই হয়তো তিনি ‘এখন পুলিশ ভালো’ বলে বোঝাতে চেয়েছেন, আগে তারা আরো খারাপ ছিলো। )
পাতিলের চেয়ে ঢাকনা গরম। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যা বললেন, তাতো আরো আশঙ্কার। আগে দেখতাম, বাড়ির গেটে লেখা থাকে: কুকুর হতে সাবধান। এবার যেন সেই কথাটাই মনে করেই দিলেন টুকু। সাংবাদিকদের বললেন: পুলিশ থেকে দুরে থাকুন।
মঙ্গলবার সংসদে কথা উঠলো। কথাটা তুললেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল আজিম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাম্প্রতিক সাংবাদিক নির্যাতন বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মন্ত্রীকে কথা বলতে দেননি স্পিকার। নিজেই বললেন। বললেন মানে, বেশ কিছু সবক দিলেন। প্রথম আলো-কিংবা বিডি নিউজে হামলার ঘটনার ধারে কাছেও গেলেন না। বরং এসময় তার বাগানের আম-কাঁঠাল নিয়ে কোন পত্রিকা কি নিউজ করেছে, তা নিয়ে রাখলেন দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতা।
স্পিকার কিংবা ফজলুল আজিম জানতেন না, এই বক্তৃতার কিছুক্ষণ আগে আবারো পুলিশ গায়ে হাত তুলেছে সাংবাদিকদের। এক বিচারপ্রার্থী নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলো পুলিশ সদস্যরা। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খেতে হলো সাংবাদিক ও আইনজীবীদের।
হতাশাবাদীরা বলছেন, এগুলো একটা ধারাবাহিক ঘটনা। তার মানে, আগামী দিনগুলোতে আরো বাড়বে। যেমনটা হয়েছিলো, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর---- চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করা, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে করাবন্দি করা, শীর্ষ নিউজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, কিংবা দেশব্যাপী সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের রোলার চালানোর একের পর এক ঘটনা।
আফসোসের বিষয় হলো, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পেছনে সবচে বড়ো অবদানটাও ছিলো মিডিয়ার। আজ সে মিডিয়ার মুখ বন্ধ রাখতে চাইছে সরকার। বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ হয়েছে, সংসদে একাধিপত্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করা; সব কিছুই হচ্ছে সাজানো ছক বেধে। শুধু এক মিডিয়াকে কব্জায় আনতে পারছে না সরকার। তাই হয়তো আতঙ্কটা ছড়িয়ে দিতে চাইছে তারা। সাংবাদিকদের জন্য সরকারের মেসেজ তবে কি ‘ হয় লাইনে আসো, না হয় কেটে পড়ো’ টাইপের?
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একথাও জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, গণমাধ্যম সরকার ও পুলিশের প্রতিপক্ষ কিনা? তিনি বলেছেন, মানুষ বিপদে পড়ে পুলিশের কাছে আসলে, তাদের তো তারা নির্যাতন করে না। তার মানে দাঁড়ালো, সাংবাদিকরা বিপদে পড়ে পুলিশের কাছে আসে না বলে, অভিমান করে তাদের পিটিয়ে আসে পুলিশ!!
এইসব কথা তর্কের খাতিরে তর্কের জন্য। বাস্তবতা হলো-এদেশে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিংবা বাহিনী হিসেবে পুলিশ যেমন থাকবে, তেমনি গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকরাও থাকবেন। হয়তো কিছুটা অশনি সংকেত তৈরি হবে, বৈরি বাতাসে পাল কেঁপে উঠবে, কিন্তু গন্তব্যে ঠিকই পৌঁছাবে।
এটা ক্রান্তিকাল। তাই সময়টা মনে রাখুন। এদেশের তরুণ প্রজন্ম মনে রাখুন, এখন সাংবাদিকরা বিচার পাচ্ছেন না। একের পর এক নির্যাতন চালিয়ে তাদের কোমর ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
তবু আমরা বলছি, আমরা সরকারের প্রতিপক্ষ নই। আমরা প্রতিপক্ষ অন্যায়ের, দুর্নীতির, দু:শাসনের। দেখুন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপ্ন দেখিয়ে তরুণদের ভোটেই ক্ষমতায় এসেছিল এই সরকার। আমরা যারা তরুণ সংবাদকর্মী, তারা অন্ধ দলবাজী করতে জানি না, এটা আমাদের অপরাধ হতে পারে। তাই বলে কি রাস্তায় ফেলে মারবেন না কি? আমাদের পরিবার, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথাটা মনে রাখুন। সংখ্যার বিচারে তারা কিন্তু কম নয়। আগামী নির্বাচনে তারা ভোটার। তাই মিনতি করে বলছি, আমাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না, প্লিজ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাংবাদিক পেটানোর পরও আপনি পুলিশকে “ভালোর” একটা সার্টিফিকেট দিতে চেয়েছিলেন। যত খুশি দেন। তবে ছোট্ট মেঘের(সাগর-রুনির পুত্র) জন্যও একটা উত্তর দয়া করে রেখে যাবেন। বড়ো হয়ে সে হয়তো আপনার কবরের কাছে গিয়ে একটা প্রশ্ন করতে পারে। জিজ্ঞেস করতে পারে, কেন তার বাবা-মা হত্যার বিচারটা আপনি করেননি। তার উত্তরটাও দয়া করে রেখে যাবেন।
এহসান জুয়েল, সিনিয়র রিপোর্টার, সময় টেলিভিশন
ahasan311@yahoo.com
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
Jewel_mazhar@yahoo.com