স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবত দেশের কোনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই নির্বিঘ্নে সুখে শান্তিতে সময় পার করতে পারেননি। প্রয়াত মনসুর আলী থেকে সাহারা খাতুন পর্যন্ত বিস্তৃত এই তালিকায় এমন কিছু ফানি (হাস্যকর) নাম ও ঘটনা আছে যা পৃথিবীর সভ্য দেশে বা ভদ্র সমাজে আগে কখনো দেখা যায় নি।
একেকজনের একেক রেকর্ড। কারো আমলে পুলিশের বেপরোয়া ভাব, কারো নির্দেশে লাঠি চালানোর ভেলকিবাজী, কারো সময় প্রতিপক্ষকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটানোর ইতিহাসে আমাদের এই মন্ত্রণালয়টি সব সময় খবরের তুঙ্গে। মানতেই হবে গরীব দেশে অপরাধপ্রবণ সমাজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটিই সবচেয়ে দুরূহ।
ঢাকার জনসংখ্যা, দরিদ্রতা, ভাসমান-আশ্রয়হীন মানুষ, ফুটপাতে-বস্তিতে থাকা মানুষ; আর অপরাধ করার যাবতীয় সুলভতা পরিস্থিতি আরো খারাপও করে তুলতে পারতো। খুন, জখম, রাহাজানি, ধর্ষণের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে পিছিয়ে পরা মানুষ তথা দরিদ্র শ্রেণীর প্রতিশোধস্পৃহায় লোমহর্ষক নগরীও হয়ে উঠতে পারতো ঢাকা। যেমন দেখছি ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা বা পৃথিবীর নানা দেশের ছোট বড় শহরগুলোয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই দেশের গরীব মানুষরাই শান্তি বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রাসাদ বা আকাশছোঁয়া শপিংমল অথবা ফ্ল্যাটবাড়ির তলায় স্যাঁতস্যাঁতে বস্তিতে বাস করেও সুখি তারা। জীবনে আনন্দ সুখ সচ্ছলতা এমনকি ন্যায্য প্রাপ্যবঞ্চিত হবার পরও এরাই শান্তিপ্রিয়। পরকাল বা মৃত্যুপরবর্তী জীবনের আশা ও আশ্বাসে এরা শান্ত।
অন্যদিকে অঢেল প্রাচুর্য্ ও কথিত সুখের আগ-পাশ-তলা ভোগ করা মানুষগুলোই শান্তি বিনষ্ট করছে। পেতে পেতে, খেতে খেতে গলা অব্দি ভরে যাওয়ার পরও এরা অশান্ত। বাড়ি-গাড়ি-নারী আর ক্ষমতার লোভে ওরা উন্মাদ। সবচেয় বেশি বেপরোয়া হয়ে আছে ক্ষমতার জায়গাটি। যে যখন ক্ষমতায় তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়টি তখন হয়ে ওঠে দিশেহারা। রাজপথে পুলিশের সাম্প্রতিক অপকর্ম দেখে মনে হয় আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ জনগণ ও সংবাদকর্মীরা। প্রায় প্রতিদিনই রাজপথ রঞ্জিত হচ্ছে, মানুষের টুঁটি চেপে ধরেছে পুলিশ। শিক্ষক লাশ হয়ে উঠছেন কাঁধে, এত বর্বরতা আর জাতির প্রতি এতো ক্রোধ আগে দেখা যায়নি। কেনো এমন বর্বরতা ও অসভ্য আচরণ? হঠাৎ এই ক্ষেপে ওঠার মূল রহস্যই কোথায়?
অতীতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের চেয়ে আদলে ও লিঙ্গে যেমন, কথায়ও তেমনি আলাদা সাহারা খাতুন। রহস্য ভেদ করার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা-আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ার পর বেলুনের মতো চুপসে যান। সকালে যা বলেন বিকেলে বলেন তার ঠিক উল্টো কথা। ‘বেডরুমের দায়িত্ব নেবো না’-- সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির এই মন্তব্যের অতি হালকা ভার্সন আমাদের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে কোনো অবুঝ বা বেকুবও বোঝে তিনি আসলেই ক্ষমতাহীন, সুতোর টানে নাচেন। মুশকিল হচ্ছে, এমন সুতোর টানে নাচা অনেক মন্ত্রীকেই দেখেছি আমরা। চুলে জেল লাগিয়ে যুবক সাজা তরতাজা বাবর এখন কোথায়? পুলিশ লেলিয়ে বিরোধী দল ও জনগণ দমনে পটু ‘সম্রাট বাবর’ এখন হাজতের অসহায় কয়েদি। প্রতাপশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিমের কথাও ভুলে যাইনি আমরা। তাঁর পুলিশই মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছিলো তাকে। হাড্ডির ভাঙ্গার পরও মন্ত্রীরা অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গান্। পুলিশ কেন বেপোরোয়া বা উগ্র, কেনই বা তার এই অস্থির আচরণ?
যে রাজনীতি তার উদ্গাতা, যে রাজনীতি সাংবাদিক ও জাতির বিবেক বা নিরীহ জনতাকে পিটিয়ে ক্ষমতা পোক্ত করতে ভালোবাসে, সেই বলতে পারে: এই পুলিশ জনবান্ধব। কতটা অকাট হলে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে খবর সংগ্রহের পরামর্শ দিতে পারেন কোনো মন্ত্রী? যে যাই বলুক, সাহারা খাতুন উদ্ভট ও আজগুবি কথায় চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন তিনি ভাঁড়ামি ও দায় অস্বীকারে। এমন ক্লাউন চরিত্র (যা কেবল ছবি বা চলচ্চিত্রে মানায়) জাতির জন্য ভয়ংকর ও হাস্যকরও বটে। দুর্ভাগ্য বাঙালির পুলিশমন্ত্রীর আচরণ ও কথাবার্তাও অবোধ্য।
অজয় দাশগুপ্ত: সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
dasguptaajoy@hotmail.com
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
Jewel_mazhar@yahoo.com