পুলিশের হাতে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতন নিয়ে আমরা যখন সবাই ব্যস্ত, এই ফাঁকে সংসদ অধিবেশনে যোগদানের কথা বলে জামিনে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল দেশের অন্যতম ধূর্ত প্রকৃতির রাজনীতিবিদ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক-বিচারাধীন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী! সংসদ অধিবেশনকে সামনে রেখে জামিন পেয়েছেন বিএনপির আটক আরও কয়েকজন সংসদ সদস্য। কিন্তু তারা সংসদে যোগ দেননি।
আমাদের ভিন্ন ব্যস্ততার সুযোগে অবশ্য সাকার ‘বেয়াদব’ আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ট্রাইবুন্যাল! দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার বিবেকের তাড়নায় স্বতঃপ্রণোদিত হয় সাক্ষী দিতে গেলে প্রকাশ্য আদালতে তাকে ‘মিথ্যুক’ বলে ধৃষ্ট ভৎসনা করেছেন সাকা’র এই ‘বেয়াদব’ আইনজীবী! এটি হয়তো যুদ্ধাপরাধী পক্ষের পরিকল্পিত একটি এ্যাসিড টেস্ট ছিল! যাতে মান সম্মানের ভয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের মাপের আর কেউ ট্রাইবুন্যালে না আসেন! কিন্তু ট্রাইবুন্যাল তা আমলে নিয়ে এ ব্যাপারে তাকে নোটিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার কারণে তাকে মাপ করে দেয়া হয়েছে!
বাংলাদেশের আদালতগুলোতে এমন সব সময়ই যেন আইনজীবীরা বিশেষ একটি প্রায়োরিটি এনজয় করেন! তা প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মারা থেকে শুরু করে এজলাসের উদ্দেশে ট্রে ছুঁড়ে মারা সবকিছুতে! নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলেই তাদের সব দোষ মাপ! এক্ষেত্রে ট্রাইবুন্যাল হয়তো বৃহত্তর স্বার্থ দেখেছেন আগে। বৃহত্তর স্বার্থ বলতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। মাঝখানে অন্য কিছু নিয়ে তারা ব্যস্ত অথবা সময় নষ্ট করতে চাননি। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ট্রাইবুন্যালের এই সিদ্ধান্তটিও মেনে নিলাম। নিঃশর্ত আনুগত্যে। কারণ আমরা এই ট্রাইবুন্যালের কাছে শুধু চাই যুদ্ধাপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার। আর কোন দাবি নাই।
আমরা যখন সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদ নিয়ে ব্যস্ত তখন বিএনপি ছাড়াই চট্টগামে একা একা হরতাল ডেকে তা করেছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত! স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের অভাবনীয় বিচার শুরু হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের এই দলটি গর্তে ঢুকে গিয়েছিল! প্রথম দিকে বিচার হবে না হবে না বলে এরা নানান কনফিউশন সৃষ্টির চেষ্টা করেছে! বিচার শুরুর পর রা’ তুলেছে এটা আন্তর্জাতিক মানের(!) হতে হবে। এসব নিয়ে দেশের মানুষের কোন সমর্থন না দেখে তাদের শেষ ভরসা হয়েছে বিএনপির ছত্রছায়া! বিএনপির আজকের দলীয় মুখপাত্র ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একদিন প্রেস কনফারেন্স করে বলেছিলেন, এ বিচার আর ট্রাইবুন্যালের কাজকর্ম বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হলে তারা এ ব্যাপারে কৌশল পাল্টায়! সে কারণে জোটের যুদ্ধাপরাধী শরীক জামায়াতের প্রাণ পুরুষ নেতা গোলাম আযমকে গ্রেফতারের পরেও তারা কোন প্রতিক্রিয়া দেয়নি। গত বেশ কিছুদিন আন্দোলন কর্মসূচিতেও জামায়াতকে কৌশলে সরিয়ে রাখা হয়েছে! যেন তাদেরকে এই বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই সব হবে! বন্ধ হবে এই বিচার! জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী সব নেতারাও বেরিয়ে যাবে! অনেকের ধারনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতেও বিএনপির একাট্টা অবস্থানের পিছনেও জড়িত যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিচারাধীন জামায়াত নেতাদের স্বার্থ! তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ডের কথা বলে হাইকোর্টের মাধ্যমে একাত্তরে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অপরাধী জামায়াতের এই নেতাদেরও বের করে নেবার ফন্দি-ফিকির তাদের আছে! আমাদের পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রেখে ব্যস্ত দেখে জামায়াতও চট্টগ্রামে নিজেদের একলা শক্তি দেখানোর এ্যাসিড টেস্টটি করাতে চেয়েছে! হালে অবশ্য পানি পায়নি তাদের সে টেস্ট।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় ১০৪২ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১২
এমএমকে