ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

কাদের মোল্লা- কামারুজ্জামান প্রেসক্লাবের সদস্য থাকবেনই?

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১২
কাদের মোল্লা- কামারুজ্জামান প্রেসক্লাবের সদস্য থাকবেনই?

জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিকদের জন্য একটা সুখবর আছে! তাহলো যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা এবং কামারুজ্জামানের সঙ্গে আরও অনেক দিন তারা দেশের সাংবাদিকদের সবচেয়ে কুলিন প্রতিষ্ঠানটির সদস্য থাকতে পারবেন! আগামীতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসতে পারলে আবার তাদের সঙ্গে বসে খেতে পারবেন গরম গরম ডালপুরি-সিঙ্গারাও!

তথ্যটি আমাকে জানিয়েছেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, আমার সাবেক সহকর্মী জনাব সৈয়দ আবদাল আহমদ।

মানবতাবিরোধী অভিযোগে বর্তমানে কারাবন্দী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য থাকবেন কিনা বা থাকতে পারেন কিনা, এ প্রশ্ন তুলে সম্প্রতি আমি বাংলানিউজে লিখেছি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আবদাল ভাই আমাকে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন।

সেখানে তিনি বলেছেন, ‘কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের সদস্যপদ বাতিল করার এখতিয়ার তো আমার একার নেই। কোর্ট তো তাকে এখনো যুদ্ধাপরাধী হিসাবে রায় দেয়নি’।

আরেকটি বিশেষ তথ্য দিয়েছেন আবদাল ভাই। তাহলো কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান প্রেসক্লাবের সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিক শফিকুর রহমান প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়!

এ ব্যাপারে আমি শফিকুর রহমান ভাই’র সঙ্গেও কথা বলেছি। তাতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা তথা পেশাদারিত্বের বদলে দলীয় বিবেচনায় তারা কীভাবে সদস্যপদ দেন, সে বৃত্তান্তও উঠে এসেছে! রাজধানী ঢাকা ভিত্তিক দেশের প্রায় সব প্রধান সাংবাদিক এই জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য।


দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল সব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পেশাদারিত্ব-জবাবদিহি নিয়ে যারা পান থেকে চুন খসলে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন-লিখেন, তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানটি এমন পেশাদারিত্বের বদলে দলীয় ফোরাম বিবেচনায় চলে আসছে!

দলীয়-ফোরাম বিবেচনায় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন জামায়াত নেতা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কারাবন্দী কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান। তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিকরা এসবের ছবি তুলছেন, নিউজ লিখছেন, প্রচার করছেন। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সদস্য সেখানে থাকলেও তাদের সঙ্গে সদস্যপদ প্রাপ্ত দুই যুদ্ধাপরাধীকে অপসারণের জন্য কিছু করছেন না!

বা কেউ কিছু করে থাকলেও তা দেশের মানুষ জানে না! দেশবাসীর উদ্দেশে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে একটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসা দরকার।

আমার লেখায় আমি লিখেছিলাম, দেশবাসীর চোখে এমন খারাপ এ দুই ব্যক্তির সদস্যপদ জাতীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ বাতিল করতে না চান, আপাতত স্থগিত তো করতে পারেন! শুধুমাত্র তিন মাস সদস্য চাঁদা না দেওয়া সহ নানা কারণেও তো সেখানে অনেকের সদস্যপদ চলে যায় বা স্থগিত হয়ে যায়।

দেশের প্রধান কবি প্রয়াত শামসুর রহমানের সদস্য চাঁদা তিন মাস বকেয়া থাকায় এই প্রেসক্লাব তার সদস্যপদ বাতিল করেছিল। তাকে আর কখনও তার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি!

সেখানে দু’জন সদস্য যাদের এখন মানবতাবিরোধী কাজের সাথে সম্পৃত্ততার অভিযোগে বিচার চলছে, তাদের কেন জাতীয় মর্যাদার প্রতীক এ প্রতিষ্ঠানটির সদস্যপদ বর্মে প্রটেকশন দিয়ে রাখা হবে, সে ব্যাপারে তাদেরকে দেশবাসীকে বলতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের যোগ্যতার একটি শর্তে জানতে চাওয়া হয় আবেদন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোথাও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ছিলো কিনা। এক্ষেত্রে বিচারে দোষী সাব্যস্ত তথা কনভিক্ট শব্দটিও ব্যবহার করা হয়নি।

যুদ্ধাপরাধ অথবা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়টি এমন যে কোন সভ্য দেশ-সমাজে এতটাই স্পর্শকাতর। কিন্তু আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বেশ আস্থার সঙ্গেই বলতে চেয়েছেন, ‘কোর্ট তো তাকে এখনো যুদ্ধাপরাধী হিসাবে রায় দেয়নি’। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগটি অফিসিয়ালি আসার পরও তা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই বা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সদস্য থাকতে তাদের কোন রকম ওজর-আপত্তি-অস্বস্তি নেই!

তা তারা দেশের বিরুদ্ধে-পাকিস্তানিদের পক্ষে যত খুন-খারাপিই করুক না কেন, বা তাদের এলাকার লোকজন খুনি হিসাবে তাদের যত খারাপই ভাবুক না  কেন!

প্রেসক্লাবের এই দুই যুদ্ধাপরাধী সদস্যের গ্রেফতারের প্রতিবাদ অথবা মুক্তি দাবি করে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ কোন বিবৃতি বা কর্মসূচি দেয়নি বা দিতে পারেনি কেন, সে প্রশ্নটিও আমি লিখেছিলাম। কিন্তু বোধগম্য কারণে এর উত্তরও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন যদি উঠে তাহলে তারা কেন এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির নানা কর্মসূচির ছবি তুলছেন, নিউজ লিখছেন, প্রচার করছেন? প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিকদের উদ্দেশে তারা কি এমন কোন সার্কুলার দিয়েছেন যে তারা যাতে তাদের সদস্য যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন ছবি-নিউজ যাতে প্রচার না করেন?

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিক নেতা শফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি ওই যুদ্ধাপরাধীর প্রেসক্লাবের সদস্য হবার গল্প বলেন। গিয়াস কামাল চৌধুরী-রিয়াজ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ তখন বিএনপি-জামায়াতপন্থী ফোরামের সাংবাদিক নেতা। ইকবাল সোবহান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান মিলন প্রমুখ তখন নেতৃত্বে আওয়ামী লীগপন্থী ফোরামের।

দুইপক্ষ যার যার ফোরামের তিরিশ জন করে নাম দেন সদস্যপদের জন্যে! জাতীয় প্রেসক্লাবে এমন অনেক বছর ধরেই চলে আসছে। এমনিতে একজন যত বড় সাংবাদিক হোন কেন যেই একজন ভেটো তথা ব্ল্যাকবল দিলেই তিনি আর প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারেন না! যেহেতু এখানে সদস্যপদ দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়, সেজন্য দুটি রাজনৈতিক পক্ষ সমঝোতায় ভাগাভাগি করে নাম জমা দেন। আমাদের অতজন, তোমাদের অতজন! আমাদের তিরিশ- তোমাদের তিরিশ! আমাদের আওয়ামী লীগ-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তিরিশ জন, আমাদের শহীদ জিয়া-গোলাম আযম পক্ষের তিরিশ জন!

শফিকুর রহমান ভাই বলতে চান, ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকার নামে এভাবেই বিএনপি-জামায়াত ফোরাম এই দুইজনকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য করে নিয়েছে! তিনি বলতে চান পরে তারা সোনার বাংলা’ পত্রিকার খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মুক্তিযুদ্ধের পর লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির কাজ করার সময় গোলাম আযম পত্রিকাটি করেন। পরে সেটি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

এদের সদস্যপদ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত ফোরাম এক  ধরনের জালিয়াতি করেছে, প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এক সময় ছাত্র শিবির করতেন, এসবও বলতে চান শফিক ভাই। কিন্তু আমি তাকে বলেছি এতদিন পরে এসে এ ধরনের বক্তব্য কে শুনবে। কারণ দু’পক্ষ যার যার ফোরামের নাম দিয়েছেন। দু’পক্ষ দু’পক্ষের জমা দেওয়া তালিকায় কাদের কাদের নাম আছে তা পড়েছেন।

সে তালিকায় দেশজুড়ে চিহ্নিত এমন দু’জনের নাম থাকা সত্ত্বেও কেন তখন এর বিরোধিতা করা হয়নি, কেন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আজ তাদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে, এরপরও কেন এমন চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা বা তাদের ফোরামও কেন এ ব্যাপারে দাবি তুলছেনা, আন্দোলনও করছেনা, এ  বিষয়গুলোই তার কাছে জানতে চেয়েছি।

শফিকুর রহমান ভাই খুব শিগগির বিষয়টি সাংবাদিকদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আমার আগের লেখাটি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ ভাই ই-মেইলে পাঠানো তার বক্তব্যটি ইনবক্সে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ফেসবুক বন্ধুদের একজন তা আমার ম্যাসেজ বক্সে হুবহু পাঠান! আমাকে লেখা চিঠি তিনি এটি কোথায়-কিভাবে পেলেন তা জানতে চাইলে কোন জবাব দেননি! এতে মনে হয়েছে আমাকে পাঠানো ই-মেইল বক্তব্যটি তিনি আরও অনেককে দিয়েছেন!

তাই পুরো চিঠি অথবা বার্তাটি এখানে উল্লেখ করছি। এতে আমার লেখাটি বুঝতে পাঠককে সাহায্য করবে। আবদাল ভাই লিখেছেন, ‘ফজলুল বারী, আপনার লেখা পড়ি। আজও পড়েছি। কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন সাংবাদিক শফিকুর রহমান যখন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তখন। জনাব শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগ পন্থী সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে দু’বার আওয়ামী লীগের টিকেটে মনোনয়ন নিয়ে এমপি পদে নির্বাচন করেছেন।

যাই হোক জাহানারা ইমাম সম্পর্কে আমাকে জড়িয়ে যে কথা লিখেছেন তা কোথায় পেয়েছেন? বরং তার সম্পর্কে আমার তো ভালো সম্পর্ক ছিল। জাহানারা ইমাম যখন বিচিত্রা, দৈনিক বাংলা অফিসে আসতেন তখন আমরা আড্ডা দিতাম। আমি তার সাক্ষাতকারও নিয়েছি।

তাছাড়া জাহানারা ইমাম মারা যাবার পরপরই আমি ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অবহিত করে তার একটি শোকবাণী মিডিয়ায় দেওয়ার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করি। কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের সদস্যপদ বাতিল করার এখতিয়ার তো আমার একার নেই। কোর্ট তো তাকে এখনো যুদ্ধাপরাধী হিসাবে রায় দেয়নি। -সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা’।  

আমার আগের লিখাতে লিখেছিলাম ‘যুদ্ধাপরাধী পক্ষের জামায়াতিদের মতো আবদাল ভাইরাও আমাদের সামনে শহীদ জননীকে উপহাস করে বলতেন ‘জাহান্নামের ইমাম’! কিন্তু আবদাল ভাই লিখেছেন, এটি আমি কোথায় পেয়েছি, অর্থাৎ তিনি এমন কখনও কোথাও বলেননি।

আবদাল ভাই হয়তো ভুলে গেছেন, এমন তিনি একাধিকবার জনকণ্ঠ অফিসে আমাকেই বলেছেন।

তিনি যখন বলেছেন বলেননি, তাও মেনে নিলাম। কিন্তু আমরা যাকে ‘আম্মা’ অথবা ‘শহীদ জননী’ ডাকতাম, তার নাম লিখার সময়ও লিখি ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম’, তার সঙ্গে ‘আড্ডার’, ‘ভালো সম্পর্ক’ থাকার কোথাও তিনি কি এখানে তার নাম লিখার সময় একবারও তেমন উল্লেখ করেছেন? এটা কি তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, শ্রদ্ধার সম্পর্ক বোঝায়? দৈনিক বাংলা, বিচিত্রা’য়  কেন  যেতেন শহীদ জননী বা কী অবস্থান তার সেখানে ছিল?

বিচিত্রার সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী ছিলেন শহীদ জননীর শহীদ সন্তান রুমি’র একাত্তরের রণাঙ্গনের সহযোদ্ধা। এরজন্য শাহাদাত  চৌধুরী শুধু না, তার সঙ্গে যারা কাজ করতেন তারা সবাই তাকে আম্মা ডাকতেন। সেখানে একসঙ্গে এত সন্তানের টানেই সেখানে তিনি বারবার যেতেন।

শাহাদাত চৌধুরী, শাহরিয়ার কবীরদের উৎসাহে দৈনিক বাংলার লাইব্রেরি ব্যবহার করে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধকালীন অবরুদ্ধ ঢাকার দিনগুলি নিয়ে লেখা ডায়েরিকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। যেটি প্রথমে সাপ্তাহিক সন্ধানীতে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ শিরোনামে ধারাবাহিক ছাপা হয় ও পরে সন্ধানী প্রকাশনী থেকেই তা বই আকারে বেরোয়।

জানতে ইচ্ছে করে বিচিত্রা, দৈনিক বাংলার সেই আড্ডার সময়ও তিনি কী তাকে কখনো অন্য সবার মতো অথবা ভুলেও একবারও আম্মা বা শহীদ জননী ডাকেন নি? অথচ আমরা নাদান যারা বিচিত্রা, দৈনিকবাংলায় কাজ করার সুযোগ পাইনি, বিচিত্রার মিনার মাহমুদ বিচিন্তা বের করলে তার সঙ্গে শ্রদ্ধার আম্মা’ সম্বোধনটি আমাদের মধ্যেও চলে আসে। সেখান থেকে প্রিয় প্রজন্ম পরিবারে।

এখানে অনেকে যার যার নেত্রীকে জননেত্রী, দেশনেত্রী লিখে আনন্দ পান-আনুগত্য দেখান, আমাদের আনন্দ-শ্রদ্ধার উচ্চারনটি শুধু আম্মা শহীদ জননীতেই সীমাবদ্ধ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষের নেত্রী। বাঙ্গালির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তার এই শ্রদ্ধার আসনটি থাকবে।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মারা যাবার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবহিত করে তার একটি শোকবানী মিডিয়ায় দেয়ার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করার জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু সে শোকবাণীটির কথা এখনও মনে আছে। সেটিতে শহীদ জননীকে শুধুমাত্র একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের নেত্রী হিসাবে তখন তাকে দেশের মানুষ চেনেজানে। কিন্তু তার সেই ভূমিকাটিই প্রধানমন্ত্রীর সে বানীতে উধাও ছিল! তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হিসাবে  সেই  শোকবানীটি নিশ্চয় আবদাল ভাই’রই লেখা ছিল। এরজন্যে সেখানে সে সরকারের নীতিমালা-দৃষ্টিভঙ্গির কথা মাথায় রেখে তিনি  সেখানে প্রয়াত মহিয়সী নারী নেত্রীর আন্দোলনের শিরোনামের বিষয়টি যৌক্তিক কারণে চেপে যাওয়াতে তাকে দোষ দিচ্ছিনা।

কারণ সেটি এভাবে লেখাটিই ছিল তার সেই সময়ের চাকরির শর্ত অথবা সৌন্দর্য! রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি-ডিপিএস এসব পদে আমাদের দেশে সবসময়ই এমন দলীয় আনুগত্য দেখে নিয়োগ দেওয়া হয়।   যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আন্দোলনের জন্যে তার সেই সরকার শহীদ জননীকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দিয়েছে, নিজের সন্তানের রক্তে স্বাধীন দেশে যে শহীদ জননীকে মরতে হয়েছে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র অভিযোগ মাথায় নিয়ে, একজন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হিসাবে কবরে যেতে হয়েছে, সেখানে একজন ডিপিএস হিসাবে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে যে একজন ‘রাষ্ট্রদ্রোহীর’ মৃত্যুতে তিনি একটি শোকবাণী দেওয়াতে পেরেছেন, সেটিই অনেক! এর বেশি আমরা তাদের কাছে আশাও করিনি।

আমার প্রিয় আবদাল ভাই আগামী ডিসেম্বরেও জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দেশ থেকে দূরে বিদেশে বসে একজন শুভার্থী হিসাবে লেখালেখির মাধ্যমে তার পক্ষে কাজ করতে চাই। শুধু একটি শর্তে। তাহলো বাংলাদেশ সৃষ্টির আত্মস্বীকৃত বিরোধী, দেশ চিহ্নিত এই দু’জন যুদ্ধাপরাধীর সদস্যপদ বাতিল অথবা স্থগিতের উদ্যোগ নিয়ে দেশের সাংবাদিকদের সবচেয়ে মর্যাদার প্রতিষ্ঠানটিকে কলঙ্কমক্ত করুন।

আবদাল ভাই লিখেছেন সে এখতিয়ার আপনার একার নেই। কথা সত্যি। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক একা কাউকে সদস্যপদ দিতে বা বাতিল করতে পারেন না। কিন্তু উদ্যোগটিতো নিতে পারেন সাধারণ সম্পাদক, তাই নয় কি?

ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ০৮ জুন, ২০১২
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।