ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘এআই’ গডফাদারদের শঙ্কা!

শাখাওয়াৎ আলম রনো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
‘এআই’ গডফাদারদের শঙ্কা!

যেন ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ‘এআই’ নিয়ে আলাপ থামছেই না।

অন্য আর যেকোনো প্রযুক্তির মতো এর যেমন অনন্ত সম্ভাবনা আছে, তেমনই এলোপাতাড়ি অপপ্রয়োগে ‘এআই’ হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জনক বলে যারা খ্যাত তারাই এখন এই প্রযুক্তি তদারকির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। তাদের শঙ্কা, ভুল প্রয়োগে ‘এআই’ এর ব্যবহার বিশ্বে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এমনকী তারা আগামীতে নিউক্লিয়ার অস্ত্রের মতো বিপজ্জনক ক্ষেত্রে নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

সম্প্রতি ‘এআই’ প্রযুক্তির অন্যতম ‘গডফাদার’ কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োশুয়া বেনজিও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই প্রযুক্তির বিকাশ নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সহযোগিতার জন্য এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করা। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, পারমাণবিক প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক নিয়মের মতো ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ এর জন্য একটি রূপরেখা প্রণয়ন এখন জরুরি।

‘এআই’ স্টার্ট-আপ অ্যানথ্রোপিকের প্রধান নির্বাহী ডেরিও আমোদেই একই কথা বলেছেন। তার আশঙ্কা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপজ্জনক ভাইরাস এবং অন্যান্য জৈব অস্ত্র তৈরি হতে পারে।

বার্কলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টুয়ার্ট রাসেল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এআই’ যেভাবে কাজ করছে তা অন্য শক্তিশালী প্রযুক্তির তুলনায় পুরোপুরি বুঝেশুঝে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

মার্কিন সিনেটের জুডিশিয়ারি কমিটির এক শুনানিতে সম্প্রতি অধ্যাপক বেনজিও বলেন, আমি এবং আরও অনেকে চ্যাটজিপিটি-এর মতো সিস্টেমের বিস্তৃত ব্যবহার দেখে অবাক হয়েছি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে যাচ্ছে যখন ‘এআই’ মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে দ্রুত সায়েন্স ফিকশন থেকে নিউক্লিয়ার মূলধারায় চলে যাবে।

নীতি নির্ধারকদের অনেকে মনে করছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ এর মতো ভয়াবহতা ডেকে আনতে পারে। অবশ্য মার্কিন সিনেটের সাম্প্রতিক এই শুনানিতে সুপার স্মার্ট ‘এআই’-এর আক্রমণাত্মক টাইমলাইনের সঙ্গে সব গবেষক একমত নন। অনেকে মনে করেন যে, যারা এই প্রযুক্তি নিয়ে ভয়ের কথা বলছেন তারা আসলে এর ক্ষমতাকে অতিরঞ্জিত করছেন এবং অকারণে ভয় ছড়াচ্ছেন।

অধ্যাপক ইয়োশুয়া বেনজিও নব্বইয়ের দশক থেকে ‘ওপেন এআই’ ও ‘চ্যাটজিপিটি’র মতো প্রযুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করে আসছেন। সেই সময়ের শুরুতে তিনি ও তার সহযোগী গবেষক জিওফ্রে হিন্টন এ প্রযুক্তির সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। এ বছরের মার্চে তারা সিলিকন ভ্যালির টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছয় মাসের জন্য নতুন এআই মডেলগুলির বিকাশকে বিরতি দেওয়ার জন্য একটি চিঠি দেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মানুষের নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রযুক্তির বাইরে যাওয়া বন্ধ করার জন্য একমত হওয়া।

অধ্যাপক স্টুয়ার্ট রাসেলের সমাজে ‘এআই’ এর প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল। তিনি কীভাবে এ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন বহু গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে। অধ্যাপক ইয়োশুয়া বেনজিও নিউ ইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং ল্যাবগুলিকে আহ্বান জানান এআইকে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার পরিবর্তে যেন মানবজাতির সহায়ক গাইড হিসেবে ব্যবহারের উপায়গুলো নিয়ে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়।

এমন অবস্থায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রূপ নিয়েছে অনেকটা ‘বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি’র মতো এক প্রযুক্তিতে। নতুন যেকোনো প্রযুক্তি নিয়ে এক দ্বিধা কাজ করবেই। সেটাই স্বাভাবিক। তাই প্রথম প্রজন্মের ‘এআই’ নিয়ে সম্ভাবনা ও শঙ্কা দুটিই সঙ্গত। আবার মানুষের সভ্যতায় দৃষ্টিপাতে আমরা দেখি ধ্বংস ও নির্মাণ হেঁটে চলেছে সমান্তরাল পথ ধরে। এজন্য অন্য অনেক কিছুর মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সহসাই থামবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। দেখা যাক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি কবে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়!

লেখক: সাংবাদিক, ডিজিটাল কনটেন্ট ও পিআর বিশেষজ্ঞ 

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।