এর আগে কখনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দর্শন ঘটেনি। ছাপোষা বাঙালিচরিত্র নিয়ে এসেছি, ভয় আর লজ্জায় মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ জানাতে পারিনি।
রাজপথে নিনাদ তুলতে না পারলে পুলিশ পেটায় না, গুম না হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘরে এসে পা রাখেন না।
মন্ত্রী দর্শনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এস চন্নুকে ধন্যবাদ।
শীতার্থ সন্ধ্যায় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সাহারা দর্শনে না গেলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত।
যেমন জানতামই না আওয়ামী লীগের পক্ষে লেখার কোনো সাংবাদিক নেই, নেই বলে নাকি আওয়ামী লীগের অর্জন চোখে দেখেন না, তারা শুধু দেখেন আওয়ামী লীগের বিসর্জনের দিকগুলো।
সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বেধড়ক মার খাওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে পেরেছেন। মন্ত্রী বললেন, প্রায় প্রতিরাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করতে করতে কাহিল হয়ে পড়েন। এতো কাজ, এতো তদবিরের সময় কোথায়। একে তো সময় নাই, তার উপর কেউ যদি প্রতিরাত তিনটা পর্যন্ত জেগেই কাটান, চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে- মতিভ্রম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ফলে দুর্ঘটনা বা অঘটনগুলি মতিভ্রমের কারণে হয়েছে বলে মেনে নিলেই আপনি ডিজিটাল।
আর যদি আপনি এনালগ হন তাহলে বিশ্বাস করবেন মন্ত্রী জানেন- কে, কোথায়, কেন গুম হয়েছে।
সাহারা খাতুন বললেন, তিনি ইলিয়াস আলীর বাড়ি গিয়ে দেখেন বিএনপির লোকজনে সয়লাব। এ প্রশ্ন সে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হবার ফাঁকেই ব্যাটা সাংবাদিকরা স্টোরি বানিয়ে ছেড়ে দেয়। কাজেই তিনি পণ করেছেন-এসব নিয়ে আর কথাই বলবেন না।
যে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিডনি এসেছিলেন সেই সেমিনারটির শিরোনাম ছিল “যুদ্ধাপরাধের বিচার ও প্রশান্তপাড়ের জনমত”।
বিচার কি হবে, কখন শেষ হবে বা কি এর রূপরেখা সে বিষয়ে বললেন, “ইনশাআল্লাহ বিচার হবেই। ” আগামী মেয়াদে ক্ষমতা পাওয়ার ব্যাপারের তিনি গায়েবী আওয়াজে বিশ্বাসী। তবে এও বললেন, “কেন পাবো না? আওয়ামী লীগ তো কোনো ভুল করেনি। ” ‘ভুল করেনি’ শব্দগুলো বারংবার উচ্চারণ করছিলেন মন্ত্রী। মানে কি এই, ভুলগুলো বুঝতে পারলেও স্বীকার করছেন না? নাকি ভুলের ব্যবহার নিঃসংশয়?
তবে একটা কথা মানতেই হবে, তর্ক বিতর্ক মন্তব্য আর বাদানুবাদের শীর্ষে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মূলত; সরল এক বাঙালি রমনী, সেটা তার কথা বলার ভঙ্গি, খাবার, সৌজন্য আর বিনয় থেকেই বোঝা গেল।
সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাচ্ছিল- তিনি নিজে চলেন না, তাকে কেউ চালায়।
ওই যে চব্বিশ, আটচল্লিশ, বায়াত্তর ঘণ্টা- এ সবই অন্য মাথার আইডিয়া।
অনুষ্ঠানের পুরোটাই একেবারে শেষের সারিতে বসে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি। নিরাপদ দূরত্বে বসে ভাষণ শুনতে শুনতে মনে হলো- আরে, আজ তো এগারোই জুন, বিএনপির গণসমাবেশ।
যে দিনটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি সেদিন তিনি কি না অস্ট্রেলিয়ায়! তাও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মতো ছোট দুনিয়ার উদ্বোধনে।
কে যে চালায়, কা’কে চালায় কে জানে!
তবে এটা মানতেই হবে, বিধাতা নামে কেউ একজন আছেন, নইলে বঙ্গদেশ চলতো না।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১২
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
Jewel_mazhar@yahoo.com