আমি লজ্জিত। আমরা লজ্জিত।
রোববার সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ডাকা পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মাহফুজুর রহমানকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ’’ ব্যস, আর যায় কোথা! তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ঐ কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা এটিএন বাংলার শওকত মিলল্টনসহ অন্যান্য সংবাদকর্মীরা। তাদের এই ঝাঁপিয়ে পড়ার সঙ্গে মিল খুঁজে পাই রাজনৈতিক মিটিং মিছিলের। যেমনটা কোনো সমাবেশে একজন নেতার বিপক্ষে আরেকজন নেতার অনুসারীরা স্লোগান বা বক্তব্য দিলে, এক পক্ষ অপর পক্ষের উপর চড়াও হয়। এটা ঘটে রাজনৈতিক ক্যাডারদের বেলায়। এখন সাংবাদিকরাও আর পিছিয়ে থাকতে রাজি নন। তারাও লাঠিয়াল-ক্যাডারের ভূমিকায় নেমে পড়লেন। জাহাঙ্গীর আলম কথা বলতেই পারেন মাহফুজুর রহমানের বিপক্ষে, আর সেই কথার জবাবটা ওখানে উপস্থিত এটিএন বাংলার সংবাদকর্মীরা তাদের বক্তব্যে দিতে পারতেন। সেই পথে গেলেন না তারা। মানববন্ধনে উপস্থিত সাধারণ গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন: তাহলে কি এটিএন বাংলার কর্মীরা ওখানে হাজির হয়েছিলেন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়েই?
গণমাধ্যমকর্মীরা মালিকের পক্ষে বিভিন্ন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে টোল আদায় করেন, জমি দখল করেন, থানা থেকে আসামি বের করে নিয়ে আসেন, বিমানবন্দর থেকে অবৈধ মালামাল বের করে নিয়ে আসেন--এসব অভিযোগটা পুরনো। কখনো কখনো বিচ্ছিন্নভাবে গণমাধ্যমেও এসেছে এসব বিষয়। তবে এখন বিষয়গুলো ওপেন সিক্রেটই বলা যায়। সাংবাদিকতায় যে কটা দিন পার করে এলাম তাতে দেখেছি, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই সেটা পত্রিকা হোক কিংবা টেলিভিশন, কিছু সংবাদকর্মী থাকেন যাদের পিঠে বা বুকে অদৃশ্যভাবে সাঁটা থাকে ‘আমাকে ব্যবহার করুন’। এই আহবানটা মালিকপক্ষের উদ্দেশ্যে। মালিক যেন নিজের, পরিবারের বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তদবির বা দখল কাজে তাদের ব্যবহার করতে পারেন। যারা বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হয়েছেন, দেখেছি কিভাবে তরতর করে তারা উপরে উঠে গেছেন। কেউ পদের দিক থেকে আবার কেউ হাজার পতি থেকে লাখপতিতে।
যে মাহফুজুর রহমানের পক্ষে আমার কতিপয় সহকর্মী নৈতিকতা বলি দিলেন রোববার প্রেসক্লাবে সেই মাহফুজুর রহমানের এটিএন বাংলায় আড়াই বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। সেই সময় দেখেছি অনেক সহকর্মীকে জানবাজ ভূমিকায়। তারা চেয়ারম্যান এবং তাকে ঘিরে থাকা বলয়ের অংশ হবার জন্য কিভাবে জান কুরবান করে দিতে প্রস্তুত। এক রকম প্রতিযোগিতাও ছিল তাদের মধ্যে। কে নিজেকে বেশি উজার করে দিতে পারেন। এই দলে এটিএন বাংলার আদি সদস্যরা যেমন ছিলেন, তেমনি একুশে টেলিভিশন থেকে যোগ দেয়া সাংবাদিকদেরও কয়েকজনও ছিলেন। কিন্তু আমি এবং আমরা কয়েকজন বলতেই পারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিট কভার করার পরেও আমাদের কাছে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা একবারের জন্যও আসেনি। কিন্তু তারপরেও আমি ঐ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছন্দেই কাজ করেছি। এখানে বলতেই হয় একটা বিষয় প্রমাণিত সত্য: মালিকপক্ষের জন্য যারা নিজেদের বিলিয়ে দিতে চান না, মালিকপক্ষ তাদেরকেই খুঁজে বের করে এবং চড়াও হয়। আমি যে সময়টার কথা বলছি তা ২০০৪-২০০৫’র কথা। গত ৭ বছরে এটিএন বাংলায় ক্যাডারপ্রথা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। কারণ প্রেসক্লাবে যাদের মাহফুজুর রহমানের জন্য নিবেদিত হতে দেখলাম, তাদের কারো কারো এই পরিচয়টি আমার জানা ছিল না। অনেকেই অনুজ এবং সব্যসাচী সংবাদকর্মী। তাদের কাছে জানতে চাই, আপনাদের ডাকবো কোন পরিচয়ে, লাঠিয়াল-বন্ধু নাকি সাংবাদিক-বন্ধু?
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com