ঢাকা: ২০০৫ সাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়াকালীন সাংবাদিকতার চর্চা।
দ্রুত পাঠানো, পঠন এবং পাঠনই অনলাইনের ধর্ম। অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমে কাজ করলেও রাজশাহীতে সে সময় ইন্টারনেট সুবিধা ছিল অপ্রতুল, যা ছিল তা ব্যয়বহুল। তাই ফোন-ফ্যাক্সই ছিল দ্রুততার মাধ্যম। নিউজের শিরোনাম, সূচনা ঠিক করে দ্রুত-নির্ভুল নিউজ পাঠানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সংক্ষিপ্ত নিউজের পর তার দ্রুত আপডেট ও ডিটেইলস দেওয়াটাও ছিল বাধ্যবাধকতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু সংবাদকর্মী, যারা অন্যমাধ্যমের সাংবাদিক ছিলেন তাদের অতটা তাড়াহুড়ো ছিল না। আরাম-আয়েশ করে নিউজ পাঠাতেন তারা। অন্যদের থেকে তাই ব্যস্ত থাকাটাই ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আরও পার্থক্য ছিল তারা পাঠানো সংবাদটা দেখতে পেতেন পরেরদিন। আর আমি, পাঠানোর কিছু সময় পরেই ইন্টারনেটে দেখতে পেতাম, যা ছিল ইউনিক ব্যাপার! বড় কোন ঘটনায় গভীর রাত পর্যন্ত নিউজ দেওয়াটাও ছিল ভিন্নরকম আনন্দ।
২০০৭ সালে রাজশাহী জেলারও দায়িত্ব পালনকালে একদিন স্থানীয় ডিবি পুলিশ অফিসে গিয়ে নিজেকে অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ’র প্রতিবেদক হিসেবে পরিচয় দিলাম। অফিসের ডিবি সদস্যরা জানতে চাইলেন করলেন- ভাই সমকাল, প্রথম আলো, জনকণ্ঠ (ইত্যাদি) পত্রিকা দেয়, কিন্তু ‘অনলাইন বিডিনিউজ’ দেয় না কেন? তাৎক্ষণিক সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারলেও বুঝিয়ে বললাম অনলাইন সংবাদপত্র কী। এভাবে ব্যয় হয়েছে অনেকটা সময়।
ওই বছর জরুরি অবস্থার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও সেনাশাসন বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপ ছড়ায়। আন্দোলন থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা, ডিজিএফআই’র গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের গুলিতে রিক্সাচালক নিহত- এসব ঘটনা নিয়ে ২১ আগস্ট অফিসে নিউজ আপডেট দিচ্ছিলাম। বিকেলের দিকে অফিস থেকে ফোন এলো সর্বশেষ অবস্থা জানতে, বলা হলো মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কথা শেষ না হতেই তাই হলো।
শুনেছিলাম সে সময় মিডিয়াগুলো চাপের মধ্যে ছিল। কিন্তু অনলাইন এই সংবাদ মাধ্যম শাসকগোষ্ঠীর নজরে অতোটা আসেনি। বিবিসি’র পাশাপাশি বিডিনিউজ ছিল স্বাধীন সংবাদের ভরষা। দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো বিডিনিউজ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেফতার করা আট শিক্ষকের নিউজ কাভার করতে প্রতিদিনই আদালতে যেতে হতো। বিবিসি’র বাংলা বিভাগ থেকে ফোন পেতাম তথ্যের জন্য। এটাও অনলাইনের আর্শীবাদ!
১ বছর ধরে বাংলানিউজে কাজ করতে গিয়ে অনলাইন সাংবাদিকতার ধারণা স্বচ্ছ না হলেও বোধগম্য পর্যায়ে এসেছে। ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় বাংলানিউজের নিউজরুম। ফোনেই দ্রুত নিউজ দেওয়া-নেওয়া, সম্পাদনা, অনলাইনে আপডেট করা- সব কিছুই দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে এখানকার উদ্যোমী-দক্ষ কর্মীর প্রচেষ্টায়।
আজ বাংলানিউজের তৃতীয় বছরে পদার্পণ। রাজশাহীতে বিডিনিউজে ৫ বছরের অধিক এবং ঢাকায় বাংলানিউজে কাজের সময়ে দ্রুত, নির্ভুল সংবাদ পাঠানোই বড় চ্যালেঞ্জ। এই ভার এখন আরও প্রকট, কারণ বাংলানিউজের ৩ কোটি পাঠক চেয়ে থাকেন সবার আগে নির্ভুল সব সংবাদ জানতে।
তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আর বুঝিয়ে বলতে হয় না ‘অনলাইন’ কী, এখন আর কেউ অপেক্ষা করেন না পরের দিন পত্রিকা পড়ার জন্য। দ্রুত নিউজ জানতে তৈরী হচ্ছে অনলাইন নির্ভরতা। প্রায় সব পত্রিকা এখন অনলাইন ভার্সনে মনোযোগী। এ অবস্থা থেকে পিছিয়ে নেই টিভি স্টেশনগুলোও। অনলাইনের প্রতি এখন
গভীর মোহ, তাই ২৪ ঘণ্টা সংযুক্ত থাকি অনলাইনে।
পাঠকরা মাল্টিমিডিয়ার অনলাইন সংবাদপত্র বাংলানিউজ পড়তে পারেন মোবাইল ফোনেই। এডিটর-ইন-চিফ সহ সকল কর্মীর আন্তরিকতায় বাংলানিউজ এখন বিশ্বস্ততার প্রতীক। সবার ভালবাসায় ২৪ ঘণ্টার সংবাদ মাধ্যমটি এগিয়ে যাবে আরও অনেক দূর। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তেও সহায়ক হবে এ নিউজপোর্টাল।