ঢাকা: বাংলানিউজ আজ তৃতীয় বছরের যাত্রা শুরু করলো। অবশ্য এখানে আমার অভিজ্ঞতা মাত্র তিনমাসের।
কোনোরকম যোগাযোগ, সুপারিশ ছাড়াও যে এখনো কাজ পাওয়া সম্ভব, তার প্রমাণ আমি নিজে পেলাম তিনমাস আগে।
চলতি বছরের ২৮ মার্চ আমি প্রতিষ্ঠানের এডিটর ইন চিফ জনাব আলমগীর হোসেনকে ফোন করি।
‘ভাইয়া, আমি সাজেদা সুইটি। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। ’
অন্যপাশ থেকে ভরাট গলায় উত্তর, ‘অবশ্যই...আমি সকাল আটটা থেকেই অফিসে থাকি (এখন অবশ্য এই ভদ্রলোক প্রায়ই সাড়ে সাতটায়ও হাজির হয়ে যান এবং নাইট শিফটে কাজ করতে গিয়ে যারা ঘুমিয়ে পড়েন তাদের ছবি তুলে রাখেন। )
যাই হোক, দেখা করতে গেলাম পরদিন দুপুরে, সিভি পুরোটা দেখলেন তিনি, ‘ভালো রেজাল্ট! এই অস্থির পেশায় কেন এসেছো?’
জবাবে হাসলাম, কিচ্ছু বলার নাই। এটা যে আমার নেশার জায়গা, প্রিয় পেশা!
‘তোমার লেখা আমি পড়েছি। তুমি এখন থেকে এখানে কাজ করবে। কিন্তু চলে টলে যাবে নাতো আবার?’
অবাক হলাম। কাজ প্রয়োজন আমার, আগের প্রতিষ্ঠানের বারোটা বেজে আছে। যেখানে আমি প্রশ্ন করার কথা, ‘কাজটি পাচ্ছি কিনা’, উল্টো এই ভদ্রলোক কাজ দিতে গিয়ে চলে যাবো কিনা জানতে চাইছেন!
বুঝলাম, প্রতিটি মানুষকে সম্মান দিতে পছন্দ করেন তিনি। মনে পড়লো, আব্বুর একটি কথা, ফল বেশি ধরলে, সেই ভারে গাছ নুয়ে পড়ে। তেমনি মানুষের অর্জন বেশি হলে, তারা বিনয়ী হয় এবং অন্যকে সম্মান দিতে তারা কার্পণ্য করে না।
সেদিন থেকে আমি বাংলানিউজের। এই হাউজে খুব বেশিদিন না হলেও আমার ভাবসাব দেখে মনে হয় আমি জন্ম- জন্মান্তর ধরে বাংলানিউজেই আছি।
এখানে এডিটর ইন চিফ থেকে শুরু করে প্রতিটি কলিগ এই ক’দিনে আমার অনেক আপন হয়ে গেছেন।
যখন তখন মনের দুঃখ, রাগ, আনন্দ ভাগ করে নিতে পারি, বন্ধুর অভাব হয় না।
এডিটর-ইন-চিফের নির্দেশে প্রধান বিরোধীদলের নিউজ করি। যেকোনো রিপোর্টের জন্য ভালো মন্দ দু’রকমই প্রতিক্রিয়া পাই। রিপোর্ট পড়ে কেউ বলে ‘আওয়ামী লীগের দালাল হইছেন?’ আর অনেকেই বলেন, ‘ভালোইতো বিএনপি’র দালালি করছেন!’
একদিন এমনই এক মেজাজ খারাপ মুহুর্তে ভাইয়াকে (আলমগীর হোসেন) ফোন দিলাম, ‘ভাইয়া, এসব দলের রিপোর্ট কেউ করাই উচিত না। আমার প্রচ- মেজাজ খারাপ লাগছে। এরা ভাবে, সাংবাদিকরা শুধু তাদের তেল দেবে। দ্যাখেন, আমাকে কীসব শুনাচ্ছে!’
উত্তরে তিনি যা বললেন, তা আজীবন ভুলবো না। বাংলানিউজে কতোদিন কাজের সুযোগ পাবো জানি না, তবে ভাইয়ার সেদিনের কথাগুলো আজীবন মনে থাকবে।
তিনি খুব হেসে আমার মেজাজ ঠা-া করার পরামর্শ দিলেন। এরপর বললেন, ‘শোনো, তাদের বলে দাও, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরা তাদের ‘বয়কট’ করবো। তাদের কোনো নিউজই করবো না। আর তুমি একদমই তাদের পাত্তা দেবে না। নিজের স্টাইলেই কাজ করতে থাকো। তোমার সঙ্গে পুরো বাংলানিউজ আছে, তোমার সঙ্গে আলমগীর হোসেন আছেন!’
একজন নবাগত রিপোর্টারের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের মুখের এই কথার চেয়ে সম্মানের আর কিছু আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না!
বাংলাদেশ সময় ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১২
এসকেএস/এমএমকে