কলকাতা: ঠিক দুই বছর কয়েক মাস আগে এই গল্পের শুরু। তখন দৈনিক সমকালে কলকাতা প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছি।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখি গোল গোল টেবিলে ছেলেমেয়েরা বসে সাদা কাগজে কী সব লিখছে। কালো টাইপরা লম্বা একজন অল্পবয়সী যুবক আমাদের কাছে গম্ভীর গলায় জানতে চাইলো, কাকে চান?
রাজু বল, বস আছেন?
আবারও কড়া গলায় উত্তর, বসেন। স্যার ব্যস্ত।
আমি ভাবলাম, বস কে? তার ওপর যা কড়া গলায় আমন্ত্রণ। না জানি ভিতরে গেলে কী হবে!
রাজুকে বললাম, ভাই আমি নেই, ডাকলে তুই যা, আমি বাইরে বসি।
রাজু বললো, চলেন তো, আপনি তো বেড়াতে এসেছেন। বসের সাথে আলাপ করবেন।
আবার সেই গম্ভীর গলা, স্যার ডাকছে যান।
আমায় প্রায় টেনে নিয়ে আরও একটা কাচের রুমে ঢুকে পড়ল রাজু।
ভিতরে অ্যাপলের বড় ল্যাপটপের পাশে যিনি বসে আছেন, আরে তাকে তো আমি চিনি। খুব ছোট বেলা থেকে। কলকাতার বাসায় রাখা আনন্দবাজারে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুটো করে লিড নিউজের তলায় লেখা থাকতো-আলমগীর হোসেন.ঢাকা।
ও ইনিই তাহলে স্যার!বসে পড়লাম সামনের চেয়ারে। একটা সময়, আমাদের সময়ে কাজ করার সুবাদে জানতাম উনি বাংলাদেশে অনলাইন নিউজের জনক। পরে কিছুদিন আমাদের সময়ের বিশেষ দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু ওনার সঙ্গে আমার সরাসরি কখনও দেখা হয়নি।
রাজু আমার সাথে আলাপ করানোর পর জানতে চাইলাম, কলকাতায় কাকে নিচ্ছেন আপনারা?
বললেন, এখনও কিছুই ঠিক হয়নি।
রাজু বললো, দাদাকে নিতে পারেন।
টেবিলে রাখা বেলটা বাজালেন। সেই গম্ভীর গলার যুবকটি এলো,বললো:স্যার...
-২টা স্প্রাইট নিয়ে এসো সৌরভ।
আমার দিকে ঘুরে বললেন, উনিতো ব্যস্ত। সাপ,বেদে আবার বাম আন্দোলন। সময় হবে কী?
বাবারে, এই লোকটা সব খবর রাখেন দেখছি। কেমন একটা জেদ চেপে গেল, বললাম, হবে।
-হলে ভাল। শুরু করে দিন।
ব্যাস ওইটুকু। আবার ল্যাপটপের মাউসে আঙুলের আনাগোনা।
বেরিয়ে এলাম রুম থেকে । রাজু বললো, হয়ে গেল।
আমি বললাম, হল তো। কিন্তু আমি কোনোদিন অনলাইনে কাজ করিনি।
চলে এলাম ঢাকা থেকে। মনে সংশয়। এতদিন সংবাদপত্রে ছিলাম। তাও লোকে নামটাম জানতো। এতো অনলাইন, ক`জন পড়ে। জেদের বশে ভুল করলাম না তো?
দেখতে দেখতে ৩ বছর হল। না, আজ আমার সত্যিই আক্ষেপ নেই। যখন দেখি আমার সংবাদে শেয়ার ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। সারা বিশ্বের ৩ কোটি বাঙালি আমার নিউজ পড়ে, আমার নিউজ নিয়ে বাংলাভাষার সর্বাধিক প্রচারিত বলে দাবি করা দৈনিকটি ক্রেডিট লাইন না দিয়ে বের করে।
কয়েক দিন আগে ঢাকার অন্যতম পুরনো সংবাদপত্র দৈনিক সংবাদের চিফ রির্পোটার সালাম জুবায়ের ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতায় পরিচয় হল। হঠাৎ তিনি বললেন, কলকাতার নিউজগুলো একটু তাড়াতাড়ি দিতে পারেন তো দাদা।
বললাম, কেন বলুন তো?
সালাম ভাই বললেন, আরে আপনার নিউজটাই তো একটু চেঞ্জ করে আমরা ডেক্স করে বের করে দিই।
২ বছর আগে সারাদিনে একটা নিউজ করলেই হতো। তাও ছাপার গ্যারান্টি ছিল না। ৮ ঘন্টা কাজ করলেই চলতো। আজ আমি ২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক। ৩য় বর্ষেই আলমগীর ভাইয়ের হাত ধরে আমরা এখন সাবালক। সারা বিশ্বে বাঙালির কাছে আমরাই প্রথম, আর আমরাই শেষ সংবাদ।
জয়তু বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ওয়েব দুনিয়ায় বাঙালির ২৪ ঘণ্টার আপডেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com