ঢাকা: Lekhati amar bhalo legeche, Tomak 200 taka ami dibo. নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো সাংবাদিক মাজেদুল নয়নের কাছে এর চাইতে বড় উৎসাহ আগে জোটেনি। ১৭ জুন ‘ছদ্মবেশে বাবা’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনের জন্যে সকাল ১১টায় মোবাইলে এ বার্তা পাঠান বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন।
গত এক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আলমগীর ভাই কাজের মূল্যায়ন করেন তাৎক্ষণিকভাবেই। অফিসের অনেকেই পুরস্কৃত হচ্ছিলেন প্রায় প্রতি মাসেই। সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসবই ছিল আলোচিত প্রতিবেদন। মোবাইলে বার্তা পাওয়ার পর অনেকগুলো ধন্যবাদ পাঠিয়ে ফিরতি এসএমএস পাঠাই। আমার ৪ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে এর চেয়ে বেশি খুশি আর কখনোই হইনি।
অস্বাভাবিকভাবেই এক সহকর্মী জানতে পেরে ২০০ টাকার অংকটি শুনে হাসলেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস এডিটর ইন চিফের ব্যক্তিগত এ অর্থ কোনো পুরস্কার নয়, এটা আর্শীবাদ। ২০০ টাকা নয়, উনি আমাকে হাজার টাকাই দিলেন। অন্য পুরস্কার প্রাপ্তদের চেয়ে আমি এখানটাতে নিজেকে আলাদা ভাবলাম।
সম্প্রতি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার এক ঘনিষ্ট জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বললেন, পত্রিকা আর অনলাইন হলো এবার টিভিতে আয়, মানুষ চেহারা দেখবে।
উত্তর দিলাম, না। বাংলানিউজ ছেড়ে যাওয়ার কোনো চিন্তা নেই। আলমগীর ভাইকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। উনি ভাগিয়ে দিলেও যাব না।
হাসি দিয়ে ভাই বললেন, ‘কি দুশো টাকার পুরস্কারে? উত্তর দিলাম, হ্যাঁ।
একমত হলেন উনিও, উনার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনেও এমন কোনো উদাহরণ আসলো না,
কোনো সম্পাদক ভালো রিপোর্টের জন্যে রিপোর্টারকে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত করেন।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘রিপোর্টারদের নাইট ডিউটি’ নামে একটি ফিচার করলে প্রথম আলমগীর ভাই আমার প্রশংসা করেন আর আমিও নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করি। বাংলানিউজসহ ১টি দৈনিক পত্রিকা আর দুটো টেলিভিশন মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে ছিল প্রতিবেদনটি। এক জ্যেষ্ঠ সহকর্মী প্রেসক্লাব থেকে ফোন দিয়ে আলমগীর ভাইকে বললেন, মানুষ বলছে, নিজেরা নিজেদের ঢোল পেটান।
আলমগীর ভাইয়ের উত্তরটি এখনো খেয়াল আছে, তিনি বলেছিলেন, ‘বলে দাও, নিজের ঢোল নিজেকেই পেটাতে হয়, অন্য কেউ পেটালে, ভেঙে যেতে পারে। ’
গত ডিসেম্বর আর জানুয়ারিতে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিভৃতে অনাহারে দিন কাটানো বীরাঙ্গনা আলিফজান বিবিকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে তথ্য পেয়ে ই-মেইলে বিস্তারিত জানিয়েছিলাম এডিটর ইন চিফকে। ৫ মিনিটের মধ্যে ফিরতি মেইলে তিনি জানালেন, ‘শনিবার মিটিং শেষে টাকা নিয়ে চলে যেও। ’
ঘুরে এসে যখন প্রতিবেদন করলাম, ‘শরম ভাঙলেন আলিফজান বিবি’, দিরাই উপজেলার স্থানীয় পৌরসভা চেয়ারম্যান ‘ঘর উঠিয়ে দিলেন বীরাঙ্গনাকে’। এবার নিউজের শিরোনাম হলো ‘ঘর উঠলো আলিফজান বিবির’।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্বরে বয়সে বড় এক সাংবাদিক এ ব্যাপারে সমালোচনা করে বললেন, ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো রিপোর্টার’। জানি না আমার বনের মোষ তাড়ানোর ফলেই হয়তো বৃদ্ধা অসহায় আলিফজানের একটা উপায় হলো।
অনলাইন নিউজের একটি বড় সুবিধা আছে, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজ শেয়ার হয়। কেউ লাইক দেয়, আবার কেউ কমেন্টস করেন। এর ফলে একটি নিউজ অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে একক, দশক থেকে লাখ বা কোটির অংকে। আর এভাবেই প্রতিবেদন পড়ে পাশে এসে দাঁড়ালেন এক দয়ালু ব্যক্তি। প্রতিমাসে তিনি এখন নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ সাহায্য দেন আলিফজান বিবিকে।
ওই জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এবার বললেন, কাজটা তোমাদের ভালো হয়েছে। তবে এভাবে করলে আরো ভালো হতো। এভাবে না করলেও চলতো, ইত্যাদি...।
দুর্বল আর অসহায়ের বাস্তবতা মানুষকে জানানোর চেষ্টা করাটা হয়তো আমার বৈশিষ্ট। আর এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন এ ব্যাপারে আমাকে বাধা দিচ্ছেন না বনের মোষ তাড়াতে। আর এ কারণেই গত আগস্টে বাংলানিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ ব্যাগ ‘বি পজিটিভ’
রক্ত জোগাড় হয়েছিল ১৩ বছরের শিশু তানহার জন্যে। অপারেশনের জন্যে তার প্রয়োজন হয়েছিল ২৪ ব্যাগ রক্তের।
সমালোচকদের বলি, বনের মোষ তাড়াতে গিয়ে যদি গুপ্তধন পেয়ে যাই, বা মোষদের টিকিয়ে রাখতে পারি, দয়া করে বলবেন না, ‘হ্যাঁ এরকম করার জন্যে আমিও বলেছিলাম’।
ওই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককেও বলেছিলাম, বনের মোষ-ঘরের মোষ কোনো মোষইতো আপনাকে
তাড়াতে দেখি না।
২০১১ সালের এ দিনেই যোগ দেই বাংলানিউজে। একটা কথা আছে, নতুন বনে বাঘও বিড়াল। সেদিন নিজেকে অনেক জড়োসড়ো লাগছিল। সে জড়তা এখন আর নেই। অনেক আপন বাংলানিউজের অফিস।
পরিবর্তনকে ভয় পান অনেকে। এ কারণে বাংলানিউজ নিয়ে সমালোচনাও অনেক। অবশ্য এসব ভীতুদের জন্যে অনলাইন নয়। এ কারণেই আলমগীর হোসেনের আগে কেউ এতো বড় পরিসরে অনলাইন নিউজ পোর্টালের কথা ভাবতে পারেনি।
এসব ভীতুদের বাংলানিউজ না দেখলে চলে না। আবার নিজেদের সনাতনী ধারনার দিন শেষ হয়ে আসছে দেখে ভয় পান। তাই সমালোচনায় মেতে ওঠেন। আলমগীর ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা উক্তিটিই আমি এদের দেই, ‘এসব সমালোচকদের চর্চার বড় অভাব। এরা কখনোই সৃষ্টি করতে পারবে না। ভয় পায়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১২
এমএন/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর