আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বড় ভাই একাদশ শ্রেণিতে পড়ত এবং আমাদের এলাকার একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় সংবাদ সরবরাহ করত। বড় ভাইয়ের লেখা কোনো সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হলে পরিবারের সবাইকে দেখাত তখন আমিও ভাবতাম একদিন ভাই এর মত আমিও সাংবাদিক হব।
আমার তৈরি করা সংবাদ সারা দেশসহ সাড়া বিশ্নের মানুষ পড়বে এই স্বপ্ন মনে লালন করতে থাকলাম।
আমি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বড় ভাইয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ শুরু করে। তখন থেকেই আমার সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছেটা আরো জোরালো হলো।
এসএসসি ও এইচএসসি শেষে ২০১০ সালে আমিও ভর্তি হলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হওয়ার পরপরই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বিনা বেতনে’ কাজ শুরু করলাম।
কয়েক দিন যেতে না যেতেই জানতে পারলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি (পরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম হয়েছে, তবে এখন সবার কাছে বাংলানিউজ হিসেবে এক নামে পরিচিত) নামে দেশে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আসচ্ছে। আমি তখন সরাসরি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রধান সম্পাদক আলমগীর ভাই এর সাথে দেখা করে আমার বায়োডাটা জমা দেই এবং নিয়মিত সংবাদ সরবরাহ করতে থাকি।
আমি নিয়মিত সংবাদ সরবরাহ করলেও আমার সংবাদ তখন বাংলানিউজের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হত না। দেখতে দেখতে একটি মাস কেটে গেল। আমি সংবাদ সরবরাহ করতে থাকি।
আমার মনে বিশ্বাস প্রবল ছিলো যে একনিষ্ঠভাবে কাজ করলে একদিন সফলতা আসবেই। আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করলাম। অনলাইনে কাজ করা এতটা সহজ না। যে কোনো সংবাদ তাৎক্ষনিক দিতে হয়। এজন্য অনেক ক্লাসও করতে পারিনি। সারাদিন ছুটেছি এক্সক্লুসিভ সংবাদ এর সন্ধানে। এরই মাঝে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। সবাই স্নেহের দৃষ্টিতে দেখেন আমাকে। কিন্তু তখনও আমি বাংলানিউজে নিয়োগ পাইনি বা আমার কোনো সংবাদ প্রকাশ পায়নি। তাই মাঝে মধ্যে খুব হতাশ হতাম। কিন্তু পরোক্ষণেই আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রবল ইচ্ছায় কাজ করতে শুরু করি।
এরপর আগস্ট মাসে বাংলানিউজের অফিস থেকে ফোন করে আমার ঠিকানা নেয়া হল এবং জানানো হল আমাকে বাংলানিউজের ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমার নিয়োগপত্র পাঠানো হবে তাই ঠিকানা নেয় অফিস থেকে। এই সংবাদটি ছিলো আমার জীবনের সবথেকে খুশির সংবাদগুলোর অন্যতম।
দীর্ঘদিন তিল তিল করে আমার মনে যে স্বপ্ন বাসা বেঁধেছিল তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার প্রথম ধাপ শুরু হলো। কিন্তু পরক্ষণেই আমার মনে হল আমার মোবাইলে কলটি ভুল করে আসেনি তো! আমার সাথে কেউ ফাজলামো করলো নাতো! এমন হাজারো প্রশ্ন উঠতে থাকে মনে। অপেক্ষা করতে থাকলাম সেই চিঠির জন্য। ক্লাস করে এসে রুমে দেখতাম কোনো চিঠি এসেছে কিনা। এভাবে দুইদিন কেটে গেল কিন্তু চিঠির কোনো খবর নাই! তৃতীয় দিন ক্লাস শেষে রুমে এসে দেখলাম বাংলানিউজের লোগো লাগানো একটি খামে আমার সেই কাঙ্খিত নিয়োগপত্রটি এসেছে। দেখে খুব আনন্দিত হলাম। আমার বাবা মারা গেছেন তাই সবার প্রথমে মাকে বললাম ‘তোমার ছেলে সাংবাদিকতার চাকরি পেয়েছে’। মা সংবাদটি শোনার পরে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। বাবা বেঁচে থাকলে হয় তো ঠিক একই প্রতিক্রিয়া হতো তার। হয় তো বা এরচেয়েও বেশি খুশি হতেন। আনন্দিত হওয়ারই কথা। কারণ এটি আমার জীবনের প্রথম বেতনসহ চাকরি, তার ওপর আবার সাংবাদিকতার চাকরি।
এরপর জোড়ালোভাবে সাংবাদিকতা শুরু করলাম। আমাকে দেশের এরকম একটি সক্রিয় নিউজ পোর্টালে কাজ করার সুযোগ দেয়ার জন্য আমি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রধান সম্পাদক আলমগীর ভাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আমি আরো কিছু বলতে চাই, আসলে একথাগুলো বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত জানি না, তারপরও বলে ফেলি। বাংলানিউজ অফিসে যে সব বড় ভাই ও বড় আপু আছেন তাদের উৎসাহ আমাকে সাংবাদিক হওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। আমি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর প্রায় জন্মলগ্ন থেকে ‘জাবি প্রতিনিধি’ হিসেবে কাজ করছি এবং কাজ করতে চাই। আসলে কাজ করার ইচ্ছাই বা করবো না কেন, অফিসে সবাই আমাকে যেভাবে স্নেহ করেন তাতে আসলে মনেই হয় না যে অফিসে আছি। মনে হয় নিজের পরিবারে আছি। আসলেই তো নিজের পরিবারে আছি। আমাদের পরিবারটা হল বাংলানিউজ। আমরা সবাই বাংলানিউজ পরিবারের সদস্য আর এই পরিবারের কর্তা আলমগীর হোসেন। যদিও মাঝে মাঝে সংবাদের ভূলত্রুটির জন্য বকা শুনতে হয় তারপরও খারাপ লাগে না। হালকা পাতলা বকা না দিলে শিখবো কি করে??
বাংলানিউজের দুই বছর পূর্তিতে বাংলানিউজের জন্য রইল শুভ কামনা ও বাংলানিউজ পরিবারের প্রতি রইল আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
বাংলাদেশ সময় ; ২০০১ ঘণ্টা, ০১ জুলাই, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর