[কবি, তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহারের ভাবনা নিয়ে বাংলাভাষী পাঠকদের বিশেষ আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে। তার অনুরাগীর সংখ্যা যেমন অনেক, তেমনি তার সমালোচকও কম নয়।
রেডিও তেহরান: দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি বাতিলের পর জাইকা, এডিবি এবং আইডিবি তাদের ঋণচুক্তি বাতিল করেছে। বিশ্বব্যাঙ্ক তাদের চুক্তি বাতিলের পরও সরকার বলছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি। তো আসলে ব্যাপারটা কি? আপনার কি মনে হয়-বিশ্বব্যাংক একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
ফরহাদ মজহার: দেখুন, পদ্মাসেতুতে যে দুর্নীতি হয়েছে এটা কেবল বিশ্বব্যাংক একাই বলেনি। পদ্মাসেতু সংক্রান্ত কাজ দেয়ার যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া সেসব বিষয় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে, পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক যে একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই। আর এ ব্যাপারে সরকারের বিরোধিতা করার তো কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটা কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক। সরকার নিজেই বিশ্বব্যাংকের অভিযোগগুলো নিয়ে শক্ত অবস্থান নিতে পারতো। একটা তদন্ত করতে পারত এবং নিরপেক্ষ একটা জায়গায় থেকে প্রমাণ করে দেখাতে পারতো যে দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু তা না করে দুর্নীতি হয়নি এ কথাটা একটা রাজনৈতিক জায়গায় থেকে বলা হচ্ছে। আপনি যখন রাজনৈতিক জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যান করেন তখন দু`তিনটা জায়গা থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং সরকারকে অভিযুক্ত করা যেতে পারে।
প্রথমত: যখন এ ধরনের দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠে তখন দেশের সার্বিক ভাবমর্যাদা রক্ষার জন্য হলেও একটা নিরপেক্ষ তদন্তের দিকে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সরকারের ওপর বর্তায়। কিন্তু সরকার সে দিকে যায়নি।
দ্বিতীয়ত: যে বিষয়টা এখানে আসতে পারে সেটি হচ্ছে- বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে যেভাবে ট্রিট করেছে অর্থাৎ অতি সহজে একটি চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। সেটি ভারত বা অন্য কোনো শক্তিশালী দেশ হলে এটা করতে পারতো না। কারণ এটা এক গুরুতর বিষয়। ফলে, এখানে যে জিনিসটি প্রমাণিত হয় তাহলো- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল।
আর তৃতীয়ত: কেবল পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগ নয়। বিদ্যুৎ ইস্যুতে বিভিন্ন রেন্টাল পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে সরকার যে চুক্তিগুলো করেছে- সেক্ষেত্রে আইন করে সরকার দুর্নীতি করেছে। অর্থাৎ, এসব চুক্তির ক্ষেত্রে সরকার কোনো টেন্ডার ছাড়াই চুক্তি করেছে। ফলে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রমাণ রেখেছে যে, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্নীতি করার জন্য যদি কোনো সরকার আইন করে আইন বদলায় তাহলে তা সত্যিই অস্বাভাবিক ঘটনা। ফলে, স্বভাবতই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অব্স্থান অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে।
রেডিও তেহরান: বিশ্বব্যাংক অর্থ-লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মুনাফা অর্জন। সেক্ষেত্রে বিনা কারণে কি দুর্নীতির অভিযোগ তুলবে এ প্রতিষ্ঠান?
ফরহাদ মজহার: হ্যা, একথা সত্য যে বিশ্বব্যাংক অর্থ-লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এবং মুনাফা অর্জন করাও তাদের একটা লক্ষ্য। তবে, কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। বিশ্বব্যাংককে একটি বিশেষ ধরনের অর্থ-লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বলা যায়। বিশ্বব্যাংক মুনাফা অর্জনের জন্য বিশেষ ধরনের কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয়। বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক অর্থ-তহবিল যার কথাই বলুন না কেন, তাদেরকে যদি আমরা সমালোচনা করতে চাই তাহলে বলতে হবে তাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ শর্তারোপ করা হয়ে থাকে। যা বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে থাকে না।
কিন্তু, বিনা কারণে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলবে এবং ঋণ চুক্তি বাতিল করবে এটা নিঃসন্দেহে হতে পারে না। বিশ্বব্যাংক কেন বিনা কারণে এ অভিযোগ তুলবে!
তবে, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার বহু জায়গা রয়েছে এবং বহু বিষয়ে আমরা বিশ্বব্যাংককে সমালোচনা করেছি। কিন্তু, পদ্মাসেতু ইস্যুতে আমি তো সমালোচনা করার মতো কিছু দেখছি না। তবে আরো একটি কথা- বিশ্বব্যাংকের সমস্ত পরামর্শ যে মন্দ তাদের কোনো কিছুই যে ইতিবাচক নয় এমন কথাও ঠিক নয়। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে যখন অবাধ বাজার ব্যবস্থার বিষয়টি আপনারা গ্রহণ করছেন তখন কিন্তু আপনারা আপত্তি করছেন না যে বিশ্বব্যাংক এক্ষেত্রে দুর্নীতি করছে। দুর্বল একটি দেশকে আরো দুর্বল করছে। তাকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধীনস্ত করছে। বিশ্বব্যাংকের যে সাম্রাজ্যবাদী নীতি সেই নীতিকে আপনি প্রয়োগ করছেন তাদের পরামর্শ শুনে। কিন্তু, বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির কথা বলছে সেটা অবশ্যই গুরুতর একটা বিষয়। কারণ বিশ্বব্যাংক শুধু যে মুনাফা অর্জন করতে চায় শুধু তাই নয় তার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থও সে চায়- তারপরও সে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি করেছে পদ্মা সেতুর বিষয়ে। আর দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংক সমস্ত প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ও প্রমাণ দেয়ার পরও সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করেছে। ফলে, এটা অত্যন্ত গুরুতর একটা অভিযোগ। সরকার শুধু মুখে বললেই হবে না-এটার সাথে পুরো রাষ্ট্রের স্বার্থ, বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত। তাছাড়া, এর সাথে দেশের যে ভাবমর্যাদা জড়িত তা বর্তমান সরকার নষ্ট করেছে। এটাকে শুধু কেলেঙ্কারি বলা যাবে না এটা একটা গুরুতর রাজনৈতিক ও নৈতিক অপরাধও বটে।
রেডিও তেহরান: পদ্মাসেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের একটা অনড় অবস্থান আমরা শুরু থেকেই লক্ষ্য করছি। সরকারের ভেতরে যদি কোনো দুর্বলতা থাকতো তাহলে তো তাদের অবস্থান এত শক্ত হওয়ার কথা নয়। তাই নয় কি?
ফরহাদ মজহার: দেখুন, বাংলাদেশে একটা প্রবাদ আছে যে ``চোরের মায়ের বড় গলা``। আপনি সরকারের যে শক্ত অবস্থানের কথা বললেন সেটি মুখের শক্ত অবস্থান। যদি আপনার শক্ত অবস্থান থেকেই থাকে তাহলে তারা দুর্নীতির যে অভিযোগগুলো তুলেছে সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করে প্রমাণ দেখান যে দুর্নীতি করেননি। আর এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক একাই প্রশ্ন তুলছে না। অন্যরাও বারবার বলছে- এক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। এখানে আমি আরো বলবো, এটি বাংলাদেশের সরকারের শক্ত অবস্থান নয় এটি একটি রাজনৈতিক অবস্থান। আপনারা বলছেন বিশ্বব্যাংক যদি টাকা না দেয় সেক্ষেত্রে অন্য জায়গা থেকে টাকা যোগাড় করবেন। তার মানেটা কি? বিশ্বব্যাঙ্ক যখন আপনাকে ঋণ দেয় তখন সুদ সে কম নেয়। কিন্তু তার অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক থাকে। অর্থাৎ তার মনিটরিংয়ের ইনডিপেনডেন্ট কিছু বিষয় রয়েছে। এটা তার নিজস্ব বিষয়। কিন্তু আপনি যখন বিশ্বব্যাংকের বাইরে অন্যত্র টাকা খোঁজার কথা বলেন- তখন আপনার অবস্থানকে শক্ত বলবো কিভাবে? বরং এটাকে দুর্বল অবস্থান বলা যায় এই জন্যে যে, বাতিল করতে পারছেন না। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে তো আপনি ভিত্তিহীন বলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে, আপনার অবস্থান অবশ্যই অত্যন্ত দুর্বল বলে আমি মনে করি। অন্য কোনো দেশ যদি এরকম অভিযোগের মুখে পড়তো তাহলে তারা নিজেরা একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে বিষয়টির তদন্ত করে বক্তব্য দিত যে, বিশ্বব্যাংকের অবস্থানটা ভুল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কোনো তদন্তের দিকে যাচ্ছে না; সেটা তো হতে পারে না।
রেডিও তেহরান: বিশ্বব্যাংকের এই ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরকার যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তাতে সার্বিক বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আপনার কি মনে হয় ?
ফরহাদ মজহার : হ্যা, সেটা হতে পারে। কিন্তু, বৈদেশিক সাহায্য বাংলাদেশের জন্য সবসময় ভালো আমি এমনটি মনে করি না। তবে, আমার মনে হয় না শুধু এই কারণে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। যারা বলছেন এ কারণে বৈদেশিক সাহায্যে প্রভাব পড়বে তাদের বক্তব্যের সাথে আমি খুব একটা একমত নই। আমি মনে করি- এটা বড় ধরনের ভীতির কারণ নয়। এতে এই সরকার বিপদাপন্ন হবে নি:সন্দেহে কিন্তু বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিপদাপন্ন হবে বলে আমার মনে হয় না। বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলতঃ নির্ভরশীল প্রবাসে থাকা বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের অর্থের ওপর। তারা যে অর্থটা বাংলাদেশে পাঠায় সেই অর্থে বাংলাদেশ চলছে। বাইরের সাহায্য এবং ঋণ থেকে আমরা যদি মুক্তি পাই তাহলে বাংলাদেশের সামগ্রিকভাবে ক্ষতি হবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এখানে মূল সমস্যাটা বিদেশি ঋণ পাওয়া না পাওয়া নয়, মূল সমস্যাটা হচ্ছে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে দুর্নীতির যে চিত্র তা ফুটে উঠেছে সেটা। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে, সরকার বদল হলে এর একটা পরিবর্তন হতে পারে।
রেডিও তেহরান: একদিকে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করছে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ ও প্রমাণ দেয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করেনি; অন্যদিকে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান অভিযোগ করেছেন,দুর্নীতি তদন্তে বিশ্ব ব্যাংক অসহযোগিতা করেছে। কার অবস্থান সঠিক বলে মনে করেন আপনি? এক্ষেত্রে আপনাকে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমও বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক।
ফরহাদ মজহার: দেখুন, আমরা এখন বিশ্বব্যাংক বনাম দুদক- দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগটা সঠিক নয় বা বিশ্বব্যাংক সহযোগিতা করছে না- দুদকের ব্ক্তব্যটাও আমার কাছে মনে হয়নি যে এটা সঠিক; আমার কাছে মনে হয়েছে এটা রাজনৈতিক মন্তব্য। বিশ্বব্যাংক তাদের অভিযোগ সম্পর্কে যেসব তথ্য বা কাগজপত্র দেয়ার কথা তা তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দিয়েছে।
কানাডার যে কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কানাডীয় সরকার সে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে এবং তদন্ত চলছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কেন সেটা করছে না? কোনো একটা অভিযোগ ঠিক না ভুল তা তদন্তের পর আইনই তা স্থির করবে। এটা তো রাজনৈতিক স্টেটমেন্টের বিষয় নয়। আইনের কাছে এটা ছেড়ে দিলেই তো চলে। কিন্তু, সরকার তো অভিযোগই গ্রহণ করছে না। ফলে, এ থেকে বোঝা যায় পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দেখার চেষ্টা হচ্ছে।
রেডিও তেহরান : পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বতিলের পর দেশের সুশীল সমাজ বা বিশিষ্ট নাগরিকরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের প্রতি সরকার গুরুত্ব না দিয়ে ভুল করেছে। আপনারও কি তাই মনে হয়? আসলে বাংলাদেশ কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
ফরহাদ মজহার : সুশীল সমাজ যে উদ্দেশ্যে কথাটা বলছে আমি ঠিক সেভাবে দেখছি না এবং তাদের সঙ্গে গলা মেলাতে পারব না। কারণ, সুশীল সমাজ অনেক সময় মনে করে যে, বাইরের শক্তি দ্বারা-বাংলাদেশের দুর্নীতি বলুন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুদর্শা, বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতা বা গণবিরোধিতা যাই বলনু না কেন তা মোকাবেলা করব। আমি এর সঙ্গে একমত নই।
আমি মনে করি-বিশ্বব্যাংক নিঃসন্দেহে একটা সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বব্যাংক গরীব ও দুর্বল দেশগুলোর হাত মোচড়ানোকে পছন্দ করে- এ ব্যাপারগুলো সঠিক। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের অভিযোগের প্রতি মনোযোগ না দেয়ায় বিপদের যে দিকটা আমি দেখি সেটা হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর অধীনে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আমরা তৈরি করলাম। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিটা হতো- নিজেদের নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত দলকে এনে তদন্ত করিয়ে বিশ্বব্যাংককে মোকাবেলা করা। বাংলাদেশ সরকার এই কাজটি না করে মারাত্মক ক্ষতি করেছে। আর সুশীল সমাজের এ সংক্রান্ত মন্তব্যকে সঠিক বলে মনে করি।
রেডিও তেহরান : পদ্মাসেতু প্রকল্পে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা বলছেন, ‘পদ্মাসেতু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। ” ঋণচুক্তি বাতিলের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে-বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের হাত রয়েছে। আপনারও কি তাই মনে হয়?
ফরহাদ মজহার : দেখুন, এগুলো ছেলেমানুষি। এ ধরনের ছেলেমানুষি দিয়ে তো আমরা এগুতে পারবো না। ঋণচুক্তি বাতিলের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের হাত রয়েছে-- সরকারের এ বক্তব্যকে আমার কাছে নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে হয়েছে। আমার কাছে নিঃসন্দেহে এটা মনে হয় না। ড. ইউনুস বলবেন বা খালেদা জিয়া বলবেন আর ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যাবে -এটা হয় না। দেখুন, অভিযোগ এক জিনিস আর পদ্মাসেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করা অন্য জিনিস, এটা একটা ভয়াবহ, গুরুতর বিষয়। একটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে এ কাজটি করতে পারে না। কারণ এটা শুধু তার নিজের ব্যাপার না। এটা আন্তর্জাতিক নিরীক্ষণের একটি বিষয়। এখানে অন্যান্য দেশ প্রশ্ন তুলতে পারে যে, কিসের ভিত্তিতে ঋণচুক্তি বাতিল করা হলো। বিশ্বব্যাংক টাকা দেয় তবে তার সঙ্গে বহু ব্যবসা জড়িত, বহু কোম্পানি জড়িত এখানে তাদেরও স্বার্থ জড়িত। বিশ্বব্যাংকের পদ্মাসেতুর ঋণচুক্তি বাতিলের ফলে তাদেরও স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে। তারাও যে এ ব্যাপারে চুপ করে বসে থাকবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ শুধু যে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাপারটা শুধু তা নয়। পদ্মাসেতু যারা তৈরি করবে- যেসব কন্ট্রাক্টর রয়েছে, কনসালট্যান্ট রয়েছে, যেসব টেকনিক্যাল গ্রুপ রয়েছে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে সরকার যে অভিযোগ করেছে আমি সেটাকে সঠিক বলে মনে করি না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, ১৫ জুলাই, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
jewel_mazhar@yahoo.com;