ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

চাল রপ্তানি ভাবনা, কিছু কথা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, পরিচালক (বার্তা), একাত্তর টেলিভিশন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১২
চাল রপ্তানি ভাবনা, কিছু কথা

বাংলাদেশ চাল রপ্তানি করবে। খবরটি খুবই আনন্দদায়ক।

কিন্তু সত্যি কি আমরা চাল রপ্তানি করতে পারবো? অর্থমন্ত্রী বলেছেন চাল উৎপাদন ভালো হয়েছে। তাই রপ্তানি করা যেতে পারে।
বিষয়টি ঠিক অতটা সহজ নয়। সরকারি নীতি নির্ধারকরা হয়তো ভাবছেন কৃষকরা ফসল ফলিয়ে ঠিকমতো উৎপাদন খরচ তুলতে পারেনা, চাল রপ্তানি হলে তাদের আয় বাড়বে। কারণ রপ্তানি করা হলে স্থানীয় বাজারে চালের চাহিদা ও যোগানে ফারাক বাড়বে, আর তাতেই বাড়বে দাম, যা উৎপাদনকারী কৃষকের অন্যতম চাওয়া।

তাদের এই প্রত্যাশা গ্রহণযোগ্য ও সঠিক। কিন্তু যে দেশ স্থানীয় চাহিদা পূরণেই সবসময় চাল আমদানি করে আসছে, হঠাৎ করে সেই দেশটি চাল রপ্তানি করবে! বিষয়টিতে কোথাও একটু গরমিল হয়তো থেকেই যাচ্ছে।

আওয়ামীলীগ আগেরবার যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনও একবার এমন কথা উঠেছিলো বলা হচ্ছিলো, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সুতরাং চাল রপ্তানি করা হবে। শেষ পর্যন্ত হয়নি। এবার আবার বলা হচ্ছে একই কথা।

গত বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদনের রেকর্ড ধরলে চাল মজুদ যা আছে, তাতে অবশ্যই এখুনি দেশকে আমদানি করতে হচ্ছেনা। কিন্তু গোটা বছরের চাহিদার সমান মজুদ ধরে রাখা দরকার, সে হিসেবে কি স্বস্তির কোন জায়গা আছে? এ প্রশ্নের উত্তরটি পাওয়া জরুরি।    

গত ক’বছর ধরে দেশে বোরোর ফলন ভাল হচ্ছে। নিজেরা দাম না পেলেও শত কষ্টে কৃষষ ফসল ফলিয়ে দেশের বাড়তে থাকা মানুষকে দু’বেলা খাইয়ে রেখেছে। কিন্তু তাদের ন্যায্যমূল্য বঞ্চনা কমছে না। আর এই যে ভালো উৎপাদন, তাও কিন্তু সব বছর সমান নয়। গেলো বছরও ভালো উৎপাদনের খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছিলো। কিন্তু তারপরেও প্রায় ৫ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছিলো সরকারকে। মজুদ নিরাপদ রাখতেই তা করা হয়েছিলো।

একটা কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, ফলন যত ভালো হোক, তাতে স্বস্তির জায়গা খুব কম। কারণ ফসল উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। দুর্যোগের সময় সাধারন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা কতটা হুমকির মুখে পড়ে, তা আমরা ভাল করে জানি। তা ছাড়া, এই চালই আমাদের প্রধান খাদ্য, সবসময় এ কথটি মনে রাখা জরুরি যতই অন্য খাবার থাকুক, চালের যেকোন সংকট মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

সরকার যদি কৃষককে ধানের দাম দিতে চায় তাহলে আরেকটু অন্যরকম করে ভাবতে পারে। সরকারের যে ধান ক্রয় নীতিমালা আছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করেই তা সম্ভব। সরকার প্রতিবছর যে দাম নির্ধারন করে তা হয়তো বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, হয়তো কৃষকের চাওয়ার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু সেটাও কি পায় তারা? কখনোই উৎপাদনকারী তার ন্যার্য্যমূল্য পায়না। সরকারের কেনার প্রক্রিয়াও খুব ধীরগতির। বছরের শুরুতে ঠিক হলো সরকার ২৮টাকা কেজি দরে বোরো চাল কিনবে ১০ লাখ টন।   যা জানা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত কেনা হয়নি এর অর্ধেকও।

এই যে ধীরগতি, এতে অনেক উৎপাদনকারী তাদের ধান কম দরে বেঁচে দিয়েছে মিল মালিকদের কাছে। আবার একথাও ঠিক যে, এই দীর্ঘসূত্রিতা যদি নাও থাকে তাতেও সত্যিকারের উৎপাদনকারীরা খুব একটা লাভবান হয়না। মিল মালিকরাই বেশি লাভবান হয়। কৃষকের লাভ থাকে খুব কম। এমন বাস্তবতায় চাল রপ্তানির ব্যাপারে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার, এটাই প্রত্যাশা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে, সিদ্ধান্ত আসবে বলেই মনে হয়। কোন আবেগ থেকে নয়। আর বিশ্বের অন্যান্য চাল রপ্তানীকারক দেশগুলো কখন চাল রপ্তানিতে গেছে তাও দেখে নেওয়া জরুরি। আমরা কি তাদের পর্যায়ে আছি?       

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, পরিচালক (বার্তা), একাত্তর টেলিভিশন

বাংলাদেশ সময় ০৯৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১২
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।