ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা: একটি প্রস্তাব

ড. (ডা.) মোহাম্মদ নাসিমুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১২
অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা: একটি প্রস্তাব

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুখপাত্র যথারীতি জানিয়ে দিয়েছেন তা গ্রহণ করা হবে না।

দেখা যায়, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো জট বাঁধাতে পারদর্শিতা দেখালেও জট খোলার ব্যাপারে তাদের নেই কোনো পারদর্শিতা অথবা আগ্রহ। ফলশ্রুতিতে আমরা আমজনতা দিনে দিনে রাজ-অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছি। জটটা বাঁধিয়েছে আওয়ামী লীগ তাতে আশা করি কেউ দ্বিমত করবেন না। তাড়াহুড়া না করে, কোর্টের রায়ের সঠিক বাস্তবায়ন করা হলে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না বলেই অনেকের ধারণা।

এখন আওয়ামী লীগ তার আগের একরোখা অবস্থান থেকে সরে বহুদলীয় সরকারের ব্যাপারে নমননীয় হলেও বিএনপি তা মানতে চাইছে না। গোল বেঁধেছে, আওয়ামী লীগ চাইছে নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আর বিএনপির দাবি নির্দলীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার।

বিএনপির দাবির প্রতি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সমর্থন আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। দেশের সুশীল সমাজ এনিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সমাধানের কোনো পথ বাতলে দিচ্ছেন না। তাহলে কি এই জটিল সমীকরণ থেকে আমাদের কোনো উত্তরণ নেই! আমি দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করি না। তারপরও এ বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি। দেখেছি সমাধান, আমাদের অতি নাগালে। এজন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে, যা রাখতে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।    

আমার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সীমাবদ্ধ থাকবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের যোগ্যতা কি হবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়াতে। ধরা যাক, উপদেষ্টাদের যোগ্যতা হবে:

১। উচ্চ শিক্ষিত (ন্যূনতম মাস্টার্স)
২। দেশে বিদেশে উচ্চ পদে আসীন আছেন অথবা থেকেছেন (স্বনামধন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অধ্যাপক, ইউএন অরগানাইজেশনের উচ্চ প্রশাসনিক পদবীর কর্মকর্তা, এনজিও পুরোধা ইত্যাদি)
৩। তাদের হতে হবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিবর্জিত  
৪। তাদের পরিবারের কেউ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী নেই
৫। তারা কোনো চলমান মামলায় অভিযুক্ত অথবা সাজাপ্রাপ্ত নন  

নির্বাচন কমিশন, স্ব-ঘোষণায় যোগ্যতাসম্পন্ন আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সরবরাহ করবেন এবং প্রদেয় তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভোটের আয়োজন করবেন। প্রদেয় ভোটের ফলাফলে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রধান উপদেষ্টা এবং পরবর্তী সর্বচ্চ ভোটপ্রাপ্তদের মাঝ থেকে পূর্বে উল্লেখিত সংখ্যক উপদেষ্টা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। প্যানেলে ৩টি নাম অতিরিক্ত তালিকায় সংরক্ষিত রাখা হবে যাতে করে কেউ পরবর্তীতে পদত্যাগ অথবা অযোগ্য বিবেচিত হলে প্রতিস্থাপন করা যায়।

এখন প্রশ্ন হলো ভোট কারা দিবে এবং কোথায় দিবে! যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, এবং সারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা সেখানে প্রতিনিধিত্ব করে সুতরাং সেটিই হতে পারে উপযুক্ততম স্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পঞ্চাশ হাজার ছাত্র এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপযুক্ত উপদেষ্টাদের নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নির্বাচনে ভোটার তাই স্বাব্যাখ্যায়িত কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষক এখানে প্রার্থী হতে পারবেন না। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ না থাকায় নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত আছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। নির্বাচন কমিশনের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে থাকলেও নির্বাচন পরিচালনায় থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। এক্ষেত্রে লাল-নীল-গোলাপি-সাদা প্যানেলের মার্কামারা শিক্ষকদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্বকারী পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট হবে ইভিএম মেশিনে।

এ প্রস্তাবের বিশেষত্ব হল, উভয় দলের দাবি মেনেই অন্তর্বর্তী সরকার এর রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী একদিকে নির্বাচিত ব্যাক্তিদের দ্বারা অন্তর্বর্তী সরকার পাওয়া যাচ্ছে অন্যদিকে বিএনপির দাবি মেনে নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা এ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

এখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন আর সর্বোপরি জনগণ প্রস্তাবটি ভেবে দেখতে পারেন।
nasimul@salam.uitm.edu.my

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ১২ আগস্ট, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্‌সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।