ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত মানি না

মুহাম্মাদ আলী আশরাফ, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১২
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত মানি না

ঢাকা: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মোটামুটি সব শ্রেণির মানুষই ক্ষুব্ধ। হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।

এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুইটি পাবলিক পরীক্ষা, এসএসসি ও এইচএসসি পুরোপুরি সাজেশন-নির্ভর। ফলে জিপিএ-৫-এর ব্যাপকতা মহামারী কলেরার থেকে তীব্র হলেও, দেশ মেধাশূন্যতার দিকে প্রতিবছর দুইবার লম্ফ মেরে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে সমর্থন দেবে না এমন লোক হয়তো নেই।

সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য এবার কোনো পরীক্ষা হবে না। মেধা তালিকার ভিত্তিতে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে মোট জিপিএ ৮ থাকতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।

দেশে সত্যিকার অর্থেই যদি পাঠ্যবই আত্মস্থ করার গুণ ও মেধা যাচাইকারী একটি পরীক্ষা থেকে থাকে, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় বইয়ের প্রতিটি লাইন যেন একেকটি প্রশ্ন। আর তাই, যে ছাত্রের পাঠ্যপুস্তকের ওপর যতো বেশি আধিপত্য, যে যতো ভালো করে তার এইচএসসির দুইটা বছর কাজে লাগিয়েছে, বুঝে পড়াশুনা করেছে, তার জন্য ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে পারার নিশ্চয়তা ততই বেড়ে যায়।

এসব ধ্রুব সত্য আবার কেন বলছি? অবাক হয়ে বলছি, কারণ দেশের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের পদবিধারীদের এক অভূতপুর্ব সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া। এর বদলে তারা চাচ্ছেন এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্ট অর্থাৎ প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি ব্যবস্থা।

এর পেছনে তাদের যুক্তি: গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা, পরীক্ষার আগে ভুয়া প্রশ্নপত্র বেচাকেনাসহ নানা ধরনের সমস্যা হওয়ায় এবার পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ অধ্যক্ষ।

তাঁরা বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষা না হলে কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেসব কোচিং সেন্টার নানাভাবে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতারণা করছে, তাও বন্ধ হবে।

কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার জন্য তো দায়ী এর সাথে জড়িতরা! এখানে ভর্তি পরীক্ষার দোষটা কোথায়? ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরই বা দোষটা কোথায়? আর কোচিং সেন্টার? তারা কোচিং সেন্টারগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে দিক! আর না হয় কোচিং সেন্টার বন্ধের ঘোষণা দেয়া হোক। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? আবারও সেই পুরানো কথা বলতে হয়, “মাথাব্যথায় ওষুধ খাওয়া লাগে, নাকি মাথা কাটা লাগে?”

তাঁদের প্রস্তাব নিয়ে কিছু বিবেচনায় যাওয়া যাক। “তাঁদের” লেখার সময় চন্দ্রবিন্দু যোগ করবার কারণ, এ সিদ্ধান্তটি ২২টি সরকারি মেডিকেল ও দুটি বেসরকারি মেডিকেলের সম্মানিত অধ্যক্ষদের সভায় নেওয়া। তাঁদের প্রস্তাব ছিলো, এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ওপর ভিত্তি করে ভর্তি সম্পন্ন করা।

এই ক্ষণিকের ভুল সিদ্ধান্ত অন্ধকার করে দিতে পারে অনেক মেধাবী ছাত্রের ভবিষ্যৎ।

তাই কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানাই। আশা করি, তারা এর আশু পদক্ষেপ নিয়ে অনেক মেধাবী ছাত্রের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবেন।

লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ tasnimtamanna10@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর  jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।