ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পদ্মাসেতু ও বিভক্ত জাতি

মো. নূর আলম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১২
পদ্মাসেতু ও বিভক্ত জাতি

কিছু দিন আগে ফেসবুকে একটা লেখা পড়েছিলাম। লেখাটা কাঁঠাল নিয়ে।

“এখন কাঁঠালের সময়, কম বেশি সবাই কাঁঠাল খায়। কাঁঠাল দু’প্রকার। ১. শক্ত কাঁঠাল বা চাউল্লা কাঁঠাল, ২. নরম কাঁঠাল বা লেটকা কাঁঠাল। লক্ষ্য করলে দেখবেন কিছুসংখ্যক লোক শক্ত কাঁঠাল পছন্দ করেন, আবার কিছুসংখ্যক লোক নরম কাঁঠাল পছন্দ করেন। মজার ব্যপার হলো যারা শক্ত কাঁঠাল পছন্দ করেন তাহারা নরম কাঁঠাল সহ্যই করতে পারেন না, পক্ষান্তরে যারা নরম কাঁঠাল খেতে ভালবাসেন তারা শক্ত কাঁঠাল দেখতেই পারেন না। ”

লেখক তার কাঁঠাল নিয়ে রসাত্মক লেখাটির শেষে বললেন, “যেহেতু কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল, সেহেতু কাঁঠাল নিয়ে দু’দল দু’ভাগে বিভক্ত। কারণ জাতীয় কোনো বিষয়ে আমরা কোনো দিনও একমত হতে পারিনি। ”

পদ্মাসেতু বনাম বিশ্বব্যাংক--সমসাময়িক প্রসঙ্গ। সঙ্গত কারণ উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু থেকে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। যা দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলেছে, কোন সন্দেহ নাই।

১.    বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু থেকে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিলো, আর তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, “আমরা জানতাম এরকম হবে, তাই আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, অথাৎ  মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমরা আলোচনা এগিয়ে রেখেছি। ” এ কথা থেকে বোঝা যায় যে সরকার আগেই টের পেয়েছিল যে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

২.    সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, “নিজস্ব অর্থায়নে হবে পদ্মাসেতু, আমরা এর জন্য ভিক্ষা চাইবো না। এজন্য সারচার্জ আদায় করা হবে। ” স্কুলের বাচ্চারাও নাকি টিফিনের পয়সা দিয়ে দেবে পদ্মাসেতু নির্মাণে। কথাটা বাজারে খুব একটা বিক্রি হয়নি, চায়ের দোকানে হাসা-হাসির বিষয় হয়েছে। হাস্যকর মনে হলেও নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু খুব কি অসম্ভব? বিরোধী দল বলছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড়া নাকি সম্ভব না পদ্মাসেতু। সরকার পদ্মাসেতুর নামে চাদাঁবাজি করছে পরবর্তী নির্বাচনী ব্যয় মেটানোর জন্য। সাধারণ জনগণ দ্বিধাবিভক্ত, কার কথা শুনবে। কারো কথাতে কোন দিকনির্দেশনা নাই, আস্থা নাই। জনগণ খুবই হতাশ।
 
৩.    বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বা বারবার বলছেন, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া দুর্নীতি রির্পোটে নাকি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম উল্লেখ আছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম আছে, এবং জনগণ জানতে চাইতে পারে, মির্জা ফখরুল কি করে জানলেন তাদের নাম আছে? বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মির্জা ফখরুল সাহেবের কোন যোগাযোগ আছে? তা-না হলে এই রকম কথা বলার মানে কি?
 
৪.    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, দেশীয় অর্থায়নে ও উদ্যোগে পদ্মাসেতু নির্মাণে প্রযুক্তি সরঞ্জাম ও দক্ষ লোকবল আমাদের নাই। ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ বোধহয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিকমতো শোনেননি। প্রধানমন্ত্রী শুধু নিজস্ব অর্থায়নের কথা বলেছেন। প্রযুক্তির কথা কোথাও আসেনি। সাধারণ জনগণ হিসাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে প্রশ্ন করতে চাই, পদ্মাসেতু নির্মাণে প্রযুক্তি-সরঞ্জাম ও দক্ষ লোকবল বাংলাদেশে নেই কেন? দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ কত বছর? মালয়েশিয়ায় থাকলে বাংলাদেশে নাই কেন? আপনারা এতটা বছর রাজনীতি করেছেন, দেশ শাসন করেছেন, আপনারা এত বছরেও প্রযুক্তি সরঞ্জাম দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারেন নাই কেন?

৫.    বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভারেস্ট বিজয়ীদের এক সংবর্ধনায় বলেছেন, বাংলাদেশের নষ্ট হয়ে যাওয়া সুনাম এভারেস্ট বিজয়ীদের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে। খালেদা জিয়া রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তাকে আমরা সম্মান করি। আপনার কথার রেশ ধরে একটি প্রশ্ন করতেই চাই, তিনজন মাত্র লোক দেশের হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরিয়ে আনতে পারলে সংগঠিত একটি দল হিসেবে দেশের সম্মান ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা কি?

৬.    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আরেকটা বক্তব্য দিয়ে লেখা শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন, পদ্মাসেতু নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। তিনি আরো বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতাই গেলে সহজ শর্তে কম সুদে ঋণ নিয়ে দুটি পদ্মাসেতু নির্মাণ করে দেবেন। জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসাবে আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু প্রশ্ন করি, দুটি সেতু নির্মাণের আশ্বাস কতটা যুক্তিসংগত?

ইতোমধ্যে দিন গড়িয়ে পদ্মাসেতু প্রকল্প নিয়েছে নতুনরূপ: একদিকে সরকার ব্যস্ত তহবিল সংগ্রহে, এমন সময়ে বহুল আলোচিত সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করলেন বিশ্বব্যাংকের শর্তপূরণের অংশ হিসেবে। আবুল হোসেনকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। একেবারে শেষ সময় হলেও উনি বুঝতে পেরেছেন।

এমতাবস্থায় সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত স্থির করা। কোন পথে এগোবে ঠিক করে নেওয়া। অগোছালো অবস্থায় আসলে কোন কিছুই ভালো হয় না। পথ আছে অনেক, সঠিক পথটি বেছে নিতে হবে। সব পথে হেঁটে লেজেগোবরে করার মানে হয় না। আর সেই সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে বিরোধী দলকে, আপামর জনসাধারণকে। এটা গোটা বাংলাদেশের সমস্যা, মানসম্মানের ব্যাপার। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাংক এগিয়ে না আসলেও বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে হবে, আমরাও পারি। তার জন্য দরকার শুধু দু-দলের একত্র হওয়া।

লেখকঃ স্কোরার ও ডিএল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড

বাংলাদেশ সময় ১৬৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১২
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।