ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বরাজ থেকে ছিটকে আমি বদলি এলাম ডাকে

এখন আমার দুঃখের কথা কেমনে বুঝাইতাম

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১২
এখন আমার দুঃখের কথা কেমনে বুঝাইতাম

জুন মাসের ১১ তারিখ প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সিডনি এসেছিলেন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রক্রিয়া উদ্বোধন করার সূত্রে। অনুষ্ঠান মুলতঃ ক্যানবেরায় হলেও সিডনি ঘুরে গেলেন, একটি সভায়ও যোগ দিলেন।

 

আওয়ামী লীগ সম্পাদক পি এস চুন্নু সংগঠক হিসেবে বেশ পরিশ্রমী এক বাঙালি। তার বদান্যতাতেই আমার সাহারা দর্শনের সুযোগ হয়েছিল।

ধারণা তিনি সরল ও সহজ মহিলা। যা বিশ্বাস করেন তাই বলেন। সে সভায় নানা কারণে তাকে এক হাত নেওয়ার মত বক্তব্য রেখেছিলাম, মূলত দেশের সামগ্রিক অবস্হা আর নৈরাজ্যজনিত দুঃখেই বক্তব্য ছিল ঝাঁঝালো, মন্ত্রী ছিলেন বিনয়ী। খানিকটা বিরক্ত হলেও বুঝতে দেননি। ডিনারে যেটুকু আলাপ তাতেও তাকে সহজ আর সোজা সাপটাই মনে হয়েছিল। তবে এটুকু নিশ্চিত ছিলাম তার চেয়ে তার ছায়াই দীর্ঘ। তিনি কেবলি ছায়াসঙ্গী।

আজ তিনি সে পদে নেই। হঠাৎ করেই পদ বদল হয়ে গেছে তার। আর যাই হোক, ডাক বিভাগের মন্ত্রী স্বরাষ্ট্রের মত ভয় বা প্রতাপ দেখাতে পারে না। তার আগমন আমার চোখের পর্দা খুলে দিয়ে গেছে যা তিনি কখনোই
জানবেন না। আমি স্নেহ করতাম এমন এক যুবক হালে প্রবাসী যুবলীগের নেতা সেজেছে। নিন্দুকেরা কত কথাই না বলে। সে সব অগ্রাহ্য করেই তাকে স্নেহ করতাম। কিন্তু রাজনীতি বলে কথা। তায় আবার আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী আর বিনপির রাজনীতি এক বিষয়ে সহমত— তা হল খেদাও, মারো বা লাঞ্ছনা দাও। এতে তাদের প্রবল আগ্রহ। বিনপি আমলের মত আওয়ামী আমলেও সত্যবাদিতা বা সাহস দেখানো অপরাধ। আমি যে সাহস করে সাহারা খাতুনকে সত্য বলেছিলাম, আমার প্রিয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষায় দলকে সাবধান করতে চেয়েছিলাম তা এই যুবক ও তার গড ফাদারদের ভালো লাগেনি। তাদের কাজ চামচামি। মন্ত্রী মিনিস্টারদের পা ধোওয়ানো আর শপিং করে দেওয়া। এটাকেই তারা রাজনীতি মনে করেন।

সাহার খাতুন সিডনি থাকতেই এ বিষয়ে জনপ্রিয় ওয়েব প্রত্রিকা বাংলানিউজ২৪-এ আমার একটি লেখা ছাপা হয়। পরদিন বিমানবন্দরে সাহারা খাতুনের হাতে তার একটি মুদ্রিত কপি ধরিয়ে দেয় এরা। উদ্দেশ্য আমাকে সাইজ করা এবং মন্ত্রীর প্রিয় হবার চেষ্টা করা। বলাবাহুল্য, আমার আওয়ামী ভীতি বা প্রীতি কোনোটাই এতে টাল খায়নি। এ জাতীয় আচরণ বিনপি আমলেও প্রচুর দেখেছি।   দুর্ভাগ্য আমাদের গণতন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের নামে ফেনা তোলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজ এদের হাতে জিম্মি। নিতান্ত লোভ লালসা আর ব্যবসার কাজেই তার ব্যবহার করছে এরা।

সাহারা খাতুনের এমন অপ্রত্যাশিত বিদায়ে আমার একটা সদ্য লেখা ছড়া তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না:

সেলাম নেত্রী সেলাম
আজ বিকেলে`র ডাকে আপনার চিঠি পেলাম

এতদিন তো ছিলো আমার পুলিশ মিলিটারি
আমার কথায় উঠতো বসতো কোর্ট বা কাচারি

এখন আমার দুঃখের কথা কেমনে বুঝাইতাম
আমার ভাগ্যে জুটলো শেষে ডাকটিকেট আর খাম

চাঁন সূর্য নিভে তারা জ্বলছে মিটিমিটি
মোবাইল যুগে এখন কি আর লেখেরে কেউ চিঠি?

পোলা বুড়া কচি কাঁচা বিদেশ কিংবা দেশে
সবাই লেখে ইমেইলে বা মেসেজ এস এম এসে

পোস্টকার্ড আর বস্তাভরা ঠিকানাহীন খামে
দেশবাসী পত্র লিখুন এখন আমার নামে

আমেরিকায় ছিলাম আমি তখুনি কোন ফাঁকে
স্বরাজ থেকে ছিটকে আমি বদলি হলাম ডাকে

মাফ করো সব গলতি আমার দেশের বোন ও ভাই
ডিজিটালে কোন কিছুর গ্যারান্টি যে নাই

যে আহাম্মকরা সাহারা খাতুনের সরলতা পুঁজি করে তাঁর হাতে আমার লেখাও বাংলা নিউজের কপি ধরিয়ে দিয়েছিলেন তারা জানেন না মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায়. মিডিয়া মরে না, সে অমোঘ।

বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্‌সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর  jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।