ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আলপনা, মুক্ত করো ভয়!!

সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১২
আলপনা, মুক্ত করো ভয়!!

আলপনা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনের নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি । তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগের কিছু ক্যাডার।

অব্যাহত হুমকিতে তিনি ৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিনভর তার সাতপাই এলাকার  বাসা থেকে বের হননি। এখনো পালিয়ে আছেন  তিনি। তাকে বলা হয়েছে কোরবানির সময়ে তার মাংস কুত্তাকে খাওয়ানো হবে। ছি: ! এতোটাই অরুচিকর আর অশোভন ছাত্রদের ভাষা?? ঘেন্না হয় ভাবতে।    এর আগে মঙ্গলবার বিএনপির সমাবেশে হামলার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চ্যানেল আইয়ের জেলা প্রতিনিধি জাহিদ হাসান ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর হাতে লাঞ্ছিত হন।

২০০১ সাল থেকে ২০০৪- ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে জামায়াত,ছাত্রশিবির আর সালাউদ্দিন কাদের (সাকা)চৌধুরীর অস্ত্রধারী ক্যাডাররা  আমার মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেছিলো । এখনো এ থেকে মুক্তি পাই নি আমি। কখনো মুক্তি মিলবে না, যতদিন সংবাদকর্মী আছি। আমি তাই  আলপনার বেদনা অনুভব করতে পারছি।
আলপনা বেগম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে গত ৩ অক্টোবর ‘ছাত্রলীগের তাণ্ডব’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয়েছে। এ ঘটনা তিনি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনকে জানান। অব্যাহত হুমকির অভিযোগ করার পর তার বাসায় বৃহস্পতিবার সকালে কয়েক ঘণ্টা পুলিশ অবস্থান করে। নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ঘটনাটির বিষয়ে তিনি অবহিত হয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।  

এভাবেই সময় ক্ষেপণ আর এই সন্ত্রাসীদের লালন করছেন পুলিশকর্তারা। তাণ্ডবের সংবাদ পরিবেশন বা প্রকাশের কারণে সংবাদকর্মীদের কখনো ছাত্রদল, কখনো জামায়াত-শিবির আবার কখনো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসে এলাকাছাড়া হতে হবে কেন?

অস্ত্রধারী এই ক্যাডারদের কাছে আমার প্রশ্ন,  আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন। এর পেছনে আপনাদের কোনো ভূমিকা নেই। তবে আওয়ামী লীগ যদি পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসতে পারে, তবে এর পেছনে অন্যতম ‘শক্তিশালী ভূমিকা’ আপনাদের। ছাত্রলীগের ছাত্ররা অস্ত্র ফেলে বইমুখী হবেন কি?  একে  অবাস্তব কল্পনা বলে মনে করি না।   যদিও নব্বইয়ের পর ছাত্ররাজনীতি যে অবস্থানে গেছে  নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের নগণ্য এক কর্মী হিসেবে আমি  তা কোনোভাবেই মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করি না। আমি মনে করি, এই সরকারের এতো অর্জন, এতো জনকল্যাণকর কাজ এবং গণমুখী ভূমিকা- সবকিছু পণ্ড করে দিতে ছাত্রলীগ ভয়ংকর ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখে কারো ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না। শুধু একটাই দাবি, এদেও এখনই ঠেকাতে হবে। সবাই মিলে।

আমার এ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া শুধু বোনদের জন্যে সহকর্মীদের জন্যে --আমার মতো মাঠ পর্যায়ের সংবাদকর্মীদের কাজের একটু সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যে। কারণ এই সংবাদকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যমেই তথ্য পাচ্ছেন দেশের আর দেশের বাইরের মানুষেরা।

বাংলানিউজ এবং এর এডিটর ইন চিফ আমার অন্যতম শিক্ষাগুরু শ্রদ্ধেয় আলমগীর হোসেনকে ধন্যবাদ আলপনার সংবাদটি গুরুত্বের সাথে পরিবেশনের জন্যে। আমার ঐকান্তিক প্রার্থনা, সবাই এক সাথে আলপনার পাশে দাঁড়াবো। প্রতিরোধ করতে হবে এই অপশক্তিকে।

আলপনাকে বলি , “ মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়!!”  জয় হোক মুক্ত সাংবাদিকতার। ###

sumikhan29bdj@gmail.com 

সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।