আমি কলামিস্ট নই, সাংবাদিকও নই। তাই আমার লেখার হাত তাদের মত নয়।
আর সেকারণেই আজ আবার লিখতে বসলাম, গতকাল লিখেছিলাম কিন্তু তখন পর্যন্ত মহামান্য রাষ্ট্রদূত সাহেবের লেখাটুকু ইনকিলাবে পড়া হয়নি তাই আবার লিখতে বসলাম। যখন লিখছি তখন আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের জন্যে সকল প্রকার ভিসা বন্ধের ঘোষণা এসেছে, আর অমাদের মান্যবর রাষ্ট্রদূত সাহেব ইনকিলাবকে বলেছেন তার কাছে সেরকম কোন খবর নেই এ সব কিছুই নাকি মিডিয়ার সৃষ্টি। মহামান্য রাষ্ট্রদূত সাহেবের নিকট প্রশ্ন আপনি কি জেগে থেকেও ঘুমিয়ে আছেন নাকি ঘুমিয়ে থাকার ভান করছেন।
যে সকল দোহাই দিয়ে আরব আমিরাত সরকার আমাদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে এগুলো সত্য। কিন্তু এ অপরাধগুলোর পেছনে যে সবকারণ লুকায়িত রয়েছে তা অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। কারণ অপরাধ সংঘটনের কারণগুলো নির্মূল করা গেলে অপরাধের সংখ্যা কমবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ভিসা বন্ধের ব্যাপারে দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে আরব আমিরাত সরকার, একটি দেহব্যবসা অন্যটি জাল পাসপোর্ট অথবা জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভিসা প্রদান।
আমাদের কাছে পাকা খবর, দেহব্যবসায় এদেশে সবচেয়ে বেশি জড়িত ভারতীয়,পাকিস্তানী, ফিলিপিনো, চাইনিজ মেয়েরা এবং এই ব্যবসার পরিচালক পর্যায়ে রয়েছে আমীরাতি, ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানীরা। কিন্তু ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানীদের ভিসাতো বন্ধ হয় না! তবে বাংলাদেশীদের উপর কেন এমন খড়গ নেমে আসবে! এখানে ভারতীয়, পাকিস্তানী কিংবা আমীরাতিদের কূটচালে মার খেয়ে যায় বাংলাদেশিরা। ওই সব দেশের লোকেরা ব্যবসা পরিচালনার মূল হোতা হলেও শ্রেফ নিয়োগের মাধ্য সামনে এগিয়ে দেয় বাংলাদেশীদের। যাদের এ কাজ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা।
যখন সে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধের পথ পায়না, যখন বাড়িতে বাবা-মা না খেয়ে থাকেন, যখন টাকার অভাবে বোনের বিয়ে হয়না, যখন নববিবাহিতা স্ত্রী চলে যায়, যখন কফিল আকামা আটকিয়ে রেখে জোড় পূর্বক কাজ করানো হয়, যখন দূতাবাসে গিয়ে কোন প্রকার সহযোগিতা মেলেনা, তখন ভালো মন্দ হিতাহিত জ্ঞান সে ভুলে যে কোনো কাজে প্রস্তুত হয়ে যায় বাংলাদেশি যুবকরা। তখন নিজেদের অজান্তেই সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যেখানে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকার নাগরিকদের আরব আমিরাতে আসতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের অদক্ষতা সরকারের উদাসীনতা এবং কর্মীদের অজ্ঞতার কারণে খরচ করতে হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। শুধুই সরকারের উদাসীনতা বললে ভুল হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অতি মুনাফার চিন্তা ভিসার দাম আকাশচুম্বী করে দেয় এছাড়াও জনসংখ্যার ক্রমাগত চাপ বাংলাদেশে বেকারত্বের প্রকট সমস্যা ও ভিসার দামে প্রভাব ফেলে।
আরও একটি অন্যতম কারণ হল আমরা যারা এখানে বসবাস করি তাদের কোন না কোন আত্মীয় সব সময়ই বিদেশে পাড়ি জমানোর তাগাদা দিতে থাকে আর এ তাগাদা থেকেই দাম যাই হোক ভিসার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। যেহেতু একটি ভিসা বেরোলে তার ওপর নজর পড়ে একাধিক বাংলাদেশি ভাইয়ের সুযোগ বুঝে ভিসা প্রদানকারী কোম্পানি/ব্যক্তিটিও ভিসাকে নিলামে তুলে দেয়।
জাল পাসপোর্ট দিয়ে আরব আমিরাতে ভ্রমণ তথা জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে ভিসা ইস্যু করিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে আমি খুব বেশিদিন ধরে অবগত নেই, মাস ছয়েক আগে আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক একটি ভিসা দেখিয়ে আমাকে অনলাইনে চেক করতে বললেন। চেক করে কোথাও কিছু পেলাম না। বুঝলাম পুরোটাই দুই নম্বর। কিন্তু কিভাবে সম্ভব দুই নম্বর কাগজপত্র তৈরি করে আরব আমিরাতে আসা? আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশ অথবা ইমিগ্রেশণ পুলিশের যোগসাজশ ছাড়া এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আরও একটি বিষয় হল, সাধারণত সাধারণ শ্রেণীর কেউ এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
আমরা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্যে সোনার ডিম পাড়া হাঁস এসকল হাঁসের বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সরকারের। অথচ আমাদের ব্যাপারে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। সরকার শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবাসী রেমিট্যান্স কত ডলার জমা আছে সেই হিসেব কষতেই সময় কাটায় আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।
প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকায় চলে বাংলাদেশের দূতাবাস গুলো তথাপিও দূতাবাসের স্যুটেড ব্যুটেড সাহেবেরা সেই প্রবাসীদের সহিত প্রভূসুলভ আচরণ করে! প্রতি ১ পাতা ফটোকপিতে দিতে হয় এক দিরহাম। প্রশ্ন একটাই এই এক দিরহাম যাচ্ছে কোন খাতায়? আসুন মহামান্য স্যুটেড বুট্যেড সাহেবেরা সাহেবি ভুলে ৯-৫টা অফিস টাইম ভুলে প্রবাসীদের উন্নয়নে কাজ করি। জ্ঞান দিচ্ছি না আবার আদেশ ও করছিনা, কারণ দুটোর কোনটা করার যোগ্যতাই আমার নেই শুধু অনুরোধ করছি।
কাকুতি মিনতি করে দূতাবাসের সম্মানিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনুরোধ করছি নিজ স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের জন্যে কিছু একটা করুন।
শাহরীয়ার আহম্মেদ অক্ষর
আবুধাবী, আরব আমীরাত
বাংলাদেশ সময় ১৯৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১২
এমএমকে