পেশার কারণেই হোক আর নেশার কারণেই হোক পত্রিকা না পড়লে দিনটা একেবারেই অতৃপ্ত এবং অস্থিরতা থেকে যায়। অন লাইনে ঢাকার সব ক’টি পত্রিকা পড়ার পরও চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এনটিভি না দেখলে মনে হয় অসম্পূর্ণ দিন! পাশাপাশি কানাডা ডট কম, ডেইলি টরন্টো স্টার, ডেইলি টুয়েন্টি ফোর, মেট্রো চোখ বোলাই।
ভাবি, খণ্ডিত লাশের হাত-পা-আঙ্গুল-মাথা-মস্তক বত্রিশ টুকরো করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর তিন জেলায় ছড়িয়ে দেয়! তা নিয়ে ‘নাটক’ বানিয়ে বি. চৌধুরীরা ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ নির্মাণ করে। যতো দোষ নন্দ ঘোষের, দরিদ্র দেশের। আর আমেরিকায় কি হচ্ছে, কানাডায় কি হচ্ছে? অপরাধীরা মন্ট্রিল থেকে খণ্ডিত লাশ ভ্যাঙ্কুভারে পোস্ট জার্মানিতে পালিয়ে যাচ্ছে!
কয়েক দিন ধরে লক্ষ্য করছি, কানাডায় ব্যাপক হারে অপরাধ বাড়ছে! বাড়ছে খুন-খারাপি, যৌনপীড়ন, সন্ত্রাস, মারামারি, সড়ক দুর্ঘটনা। বিগত কয়েক দিনের কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরছিঃ
টরন্টোর মিসিসাগাস্থ এয়ারপোর্ট রোডের নর্থ ওয়েস্ট ড্রাইভে সড়ক দূর্ঘটনায় ২৭ বছর বয়স্ক সাইক্লিস্ট নামের একজন মৃত্যু বরণ করে ঘণ্টা খানেক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলো। এটা নেহাতই দুর্ঘটনা। তবে সারা কানাডায় একের পর এক খুনের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়। তার কিছু চিত্র তুলে ধরছি। টরন্টোর ব্রামটনের নোরটন পার্ক থেকে গত ৭ অক্টোবর পুলিশ উদ্ধার করলো অজ্ঞাতনামা এক মধ্য বয়সী মহিলার লাশ। যার পরিচয় জানা যায় নি। তার ক’দিন আগে নভাস্কোশিয়া থেকেও পাওয়া গেছে এক জনের মৃতদেহ। গত সপ্তাহে পিকারিংয়ে পাওয়া গেলো সতেরো বছর বয়স্ক স্কুল ছাত্র মিসচেল সমেরভিলের লাশ। পাশে পার্কের জলাশয়ের কাছেই লাশের অদূরে পড়ে ছিলো তার স্কুলব্যাগ। মিসচেল গত ২১ সেপ্টেম্বর ইটোবিকো থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পড়ে ফেইসবুকের মাধ্যমে তার লাশের সন্ধান পাওয়া যায়।
এদিকে গত মাসে টরন্টোর স্কার্বোরো এলাকা থেকে মিসিং হয়ে যাওয়া একচল্লিশ বয়স্ক সিঙ্গেল মাদার গুয়াং হুয়া লিউয়ের খণ্ডিত পুলিশ উদ্ধার করেছে মিসিসাগার ৪৫ কিলোমিটার দূরে ক্রেডিট নদী এবং হেউয়াক মেডস পার্কে। তার ক’সপ্তাহ আগে স্কার্বোরোতে বন্দুক যুদ্ধে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। গত ফেব্রুয়ারিতে ড্যানফোর্থস্থ ক্রিসেন্ট টাউনে পাওয়া গেছে এক যুবকের দ্বি-খণ্ডিত দাশ। গত জুনে লুকা রকো ম্যাগনোত্তা এক চাইনিজকে খুন করে খণ্ডিত লাশ মন্ট্রিয়ল থেকে পোস্ট করে ভ্যাঙ্কুভারের একটি স্কুলে। পরে সে জার্মানিতে পালিয়ে যায়। এখন তাকে কানাডায় ফেরৎআনার জন্য কানাডা সরকার ৩৭৫,০০০ ডলার খরচ করে আলাদা একটি বিমান ভাড়া করেছে। কারণ, সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান তাকে বহন করতে অস্বীকার করে।
এদিকে কানাডার বৃহত্তম নগরী টরন্টোয় নারীদের যৌন হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে বহু গুণ। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নারীর যৌন হয়রানির হচ্ছে। গত শনি-রোব-সোম তিন দিনের লং উইকেন্ডে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে এক ডজনের বেশি।
পুলিশের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে যেখানে ২৮৪৯টি হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। গত বছর ২০১১ সালে ঘটেছে ২৯৬১টি। চলতি বছরে তা বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ১ হাজার ৫৯টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ছাড়াও আবার অনেক হয়রানির ঘটনা অন্তরালে রয়ে যাচ্ছে। যা পুলিশের রেকর্ডে নেই বা মিডিয়াতে আসে না।
এদিকে বহুল আলোচিত টরন্টো জোসেফ ইউ সিনিয়র পাবলিক স্কুলের ৪২ বছর বয়স্ক ফ্রান্স ভাষার শিক্ষিকা গোয়ানস তার ১৫ বছরের ছাত্রের সঙ্গে ‘পরিমলে’র মতো যৌন সম্পর্কের কারণে চাকরি হারাতে হলো।
উল্লেখ্য, গত ক’মাসে টরন্টোতে প্রায় ২ শতাধিক আইন শৃংখলার অবনতির ঘটনা ঘটেছে। আইন শৃংখলা পরস্থিতির অবনতির কারণে প্রশাসন খুবই উদ্বিগ্ন। শুধু প্রশাসন উদ্বিগ্ন নয়; আমরাও শঙ্কিত, আমরাও আতঙ্কিত!
এসব খুনখারাপি জন্য কানাডার দোষ নয়। দোষী হচ্ছে সন্ত্রাসী, অপরাধীরা। কারণ কানাডা খুনি থেকে শুরু করে নানান অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কানাডা অপরাধীদের অভয়াশ্রম নয়। কানাডা শান্তির দেশ। সেই শান্তি এখন অস্বস্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। যা কানাডবাসিদের কখনোই কাম্য নয়।
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, লেখক-সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক
saifullahdulal@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১২
এনএস/