ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আলপনা এখন ভালো আছেন...

সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১২
আলপনা এখন ভালো আছেন...

আলপনা ভালো আছেন। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলানিউজের প্রধান সম্পাদক আলমগীর হোসেনসহ সবার প্রতি।

বাংলানিউজে প্রকাশিত কলাম এবং প্রতিবেদন তাকে সুরক্ষা দিয়েছে। আলপনা নেত্রকোনায় তার বাড়িতে পরিবারের সাথে আগের মতোই নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন। স্থানীয় সাংসদ নিজে আলপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের স্থানীয় ক্যাডাররা ক্ষমা চেয়েছে আলপনার কাছে। আলপনা আমাকে কয়েকটি চিঠি দিয়েছেন, মোবাইলে কথা হয়েছে কয়েকবার। আমার প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা তার বিনয়ের প্রকাশ। বলেছেন, এখন ভালো আছেন তিনি। দু:খ করে বলেছেন হুমকিদাতা এই ছেলেরা কেউ এলাকার নয়। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এই ক্যাডারেরা কী করে সুযোগ পায় ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গাতে? তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। প্রতিটি এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রলীগ ক্যাডারদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। নাহয় মহাজোট সরকারকে অনেক বড়ো খেসারত দিতে হবে।

১৩ সেপ্টেম্বর  আলপনা একটি চিঠি পাঠান আমাকে। চিঠিটি হুবহু তুলে দেয়া হলো:

‘‘সুমি আপু,আপনাকে আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।
সত্যের জয় হয়ই হয়। আপনারা আমার পাশে না থাকলে হয়তো সম্ভব ছিল না। আমি এখন বাসায়। এমপি নিজ দায়িত্বে অফিস থেকে নিয়ে এসেছেন। ছাত্রলীগারদের দিয়ে মাফ চাইয়েছেন।
আপনি দীর্ঘজীবী হোন ।
আমি আপনাকে জীবনেও ভুলতে পারব না।
সশ্রদ্ধ সালাম রইল -আলপনা বেগম। ’’

আমার ভালো লাগছে ভাবতে আলপনা অন্তত এতোটুকু সাপোর্ট প্রশাসন  এবং জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে পেয়েছেন। আমাকে এবং আমার মতো অনেক সংবাদকর্মীর বারবার  যে সাংস , জামায়াত -বিএনপির ক্যাডারেরা জামাত-বিএনপি চারদলীয়  জোট সরকারের সময়ে হুমকি দিয়েছেন তারা কখনো ভাবতেও পারেননি তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। একাত্তরের ঘাতক-দালাল জামায়াত –বিএনপির  সাংসদ অথবা তাদের এপিএস অথবা ক্যাডারেরা আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন বারবার । সেটাকে অপরাধ মেনে ইহজনমে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, হুমকির বাস্তবায়ন কবে করবেন সেই অপেক্ষাতেই তারা আছেন।

আমি অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য বসবাস করি। ল্যাপটপে কারিগরি ত্রুটি এসবের অন্যতম। আলপনার ভালো থাকার কথা উদ্বিগ্ন পাঠকদের জানানো উচিত ছিল অনেক আগে। পারিনি। এজন্যে প্রিয় পাঠকদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী । অনেকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন আলপনা কেমন আছেন এখন। তাদের মধ্যে চ্যানেল আইয়ের জাপান প্রতিনিধি কাজী ইনসানুল হক অন্যতম। মানবতাবাদী এই পাঠকদের  সবার কাছে আমার এবং আলপনার পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

গণতন্ত্র তখনই সফলতার দিকে এগোয়, এ ধরণের হঠকারী রাজনীতিকেরা যখন তাদের অপরাধ মানতে বাধ্য হন। আলপনার সাথে আমার  বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। বাংলানিউজ কতৃপক্ষ এবং এর সাংবাদিকেরা প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে আলপনার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এদেশের মিডিয়াজগতে এ দৃষ্টান্ত নি:সন্দেহে অভাবনীয়।

অন্যদিকে আলপনা তাদের প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন তার এই ঘোর বিপদের দিনে তার পাশে দাঁড়ায়নি। তারা নানা অজুহাতে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে।   এটাই এদেশের সংবাদকর্মীদের করুণ বাস্তবতা।   এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।  

আমার শ্রদ্ধেয় সম্পাদক শাহাদাৎ চৌধুরী, গোলাম মোর্তোজা, মোহসিউল আদনান ২০০১-২০০৪ সময়ে সাপ্তাহিক ২০০০ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়ে নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন।   আমাকে গ্রেফতার করার পর তৎকালীন প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সাথে তুমুল লড়াই করেছেন। মোর্তোজা ভাই কলাম লিখেছেন।   আমি বরাবর সেই দু:সময়ের সহযাত্রী এবং  দায়িত্বশীল সহমর্মীদের আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি বারবার।

তাই আমার মতো ক্ষুদ্র এক সংবাদকর্মী এই অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে যাবো। একই সাথে আমি মনে করি, মুখে বড়ো বড়ো কথা যারা বলেন বা লিখেন, তারা আলপনার মতো বিপন্ন  সংবাদকর্মীদের পাশে থেকে কিছু দায়িত্ব অন্তত পালন করার চেষ্টা করুন। সেটাই এ মুহুর্তে সবচে জরুরি।

লেখক: Sumikhan29bdj@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।