এডিনবরা, স্কটল্যান্ড থেকে: স্কটল্যান্ডের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে ড. ওয়ালী উদ্দিনকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন জানাতে ঘটা করে হয়ে গেল তাকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন (বুক লঞ্চিং) অনুষ্ঠান। আর তাতে যোগ দেন স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স স্যামন এমএসপি।
শতাধিক বরেণ্য ব্যক্তি, এমপি, এমএসপি, উচ্চপর্যায়ের পেশাজীবী ও কমিউনিটির বিশিষ্ট লোকজনের উপস্থিতিতে গত ২৪ শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় “ওয়ালী উদ্দিন - ব্লেসড সান অব টু নেশনস” শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন।
এ আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী স্কটিশ পাইপের সুরের মূর্ছনায় ফার্স্ট মিনিস্টারকে ব্রিটানিয়া স্পাইসে বরণ করে নেওয়া হয়।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স স্যামন বলেন, “স্কটল্যান্ডের বৈচিত্রময় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে যাদের ভূমিকা অনন্য তাদেরই একজন হলেন ড. ওয়ালী উদ্দিন। তিনি শুধু স্কটল্যান্ডই নয়, নিজের দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং স্কটল্যান্ডকে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের মানুষের কাছে। ”
তিনি আরও বলেন, “স্কটল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখা ড. ওয়ালী তছর উদ্দিনের যুগান্তকারী ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তার এ বইটির মুখবন্ধ লিখতে পেরে আমি আনন্দিত। ”
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জাস্টিস মিনিস্টার কেনি মেকাসকিল এমএসপি।
শিক্ষাবিদ জামিলা মুনীরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আগতদের শুভেচ্ছা জানান প্রফেসর জেফ পালমার ওবিই। এছাড়া অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, সিটি অব এডিনবরা কাউন্সিলে ডেপুটি লর্ড প্রভোস্ট ডেডরি ব্রুক, মিনিস্টার ফর এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশন্যাল ডেভেলপমেন্ট হামজা ইউসুফ এমএসপি।
মন্ত্রী হামজা ইউসুফ বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে স্কটল্যান্ডের ব্যবসা, অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ড. ওয়ালী উদ্দিনের ভূমিকা অসামান্য। স্কটিশ সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্পর্ক উন্নয়নে আরও জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লোদিয়ান অ্যান্ড বোর্ডার পুলিশের চিফ কনস্টেবল ডেভিড স্ট্রাং, লোদিয়ানের এমএসপি সারাহ বয়েক এমএসপি, হেরিওপ ওয়াট ইউনিভার্সিটির প্রিন্সিপাল ও ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর স্টিভ চ্যাপম্যান।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন কুইন মার্গারেট ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর স্যার টম ফার্মার। এডিনবরার লিথ এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় কমিউনিটিতে দীর্ঘমেয়াদী ভূমিকা রাখার জন্য প্রখ্যাত শিল্পপতি স্যার টম ফার্মার পক্ষে ড. ওয়ালীকে একটি সনদ উপহার দেওয়া হয়।
তরুণ প্রজন্মের অনেকেই যোগ দেন অনুষ্ঠানে। এডিনবরা ওয়েস্টের মেম্বার অব ইউথ পার্লামেন্ট মেম্বার জহুরা হোসেন এমএসওয়াইপি ও রুহেলী উদ্দিন। স্কটিশ রাজনীতির মূলধারায় যুক্ত হতে নতুন প্রজন্মের এ দুই সদস্য কীভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তারা তা তুলে ধরেন তাদের বক্তব্যে। স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ থেকে বিশিস্ট পেশাজীবী, কমিউনিটি-ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ী-নেতারা যোগ দেন অনুষ্ঠঅনে। পরিশেষে আগতদের ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী বক্তৃতা দেন সিলেট প্রেসিডেন্সি স্কুল অ্যান্ড কলেজের রেক্টর ইঞ্জিনিয়ার হাসানুর রশিদ।
এডিনবরাভিত্তিক বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও জননন্দিত সমাজসেবী ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিইর জীবন ও কর্ম নিয়ে গত বছর সিলেটের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আফম সাইদ বইটি লিখেছেন। ৩২০ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে সিলেটের সাদীসামী প্রকাশনী, এতে রয়েছে নয়টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে ড. ওয়ালীর জন্ম, বেড়ে ওঠা ও ব্রিটেনে আগমন; দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্যবসাক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা ও সাফল্য অর্জন; তৃতীয় অধ্যায়ে সমাজ ও মানবসেবা; চতুর্থ অধ্যায়ে সাংগঠনিক দক্ষতা ও কার্যক্রম; পঞ্চম অধ্যায়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন খেতাব, পদক ও সম্মাননা লাভ; ষষ্ঠ অধ্যায়ে তার নীতি-আদর্শ, চিন্তা-চেতনা; সপ্তম অধ্যায়ে ব্যক্তিগত জীবন; অষ্টম অধ্যায়ে তার একটি সাক্ষাৎকার এবং নবম অধ্যায়ে তার সম্পর্কে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্য স্থান পেয়েছে।
বইটি বাজারজাত করছে বিশ্বখ্যাত অ্যামাজন ও এডিনবরার ওয়ার্ড পাওয়ার বুকস। বর্ণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূতদের একজন ড. ওয়ালী ১৯৯৫ সালে ব্রিটেনের রানির কাছে এমবিই খেতাবে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি এডিনবরা চেম্বার, এডিনবরা কমনওয়েলথ সোসাইটি, বাংলা-স্কট ফাউন্ডেশন এবং লন্ডন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এডিনবরা মেলার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. ওয়ালী ২০০০ সালে কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া বিগত বছরগুলিতে এডিনবরার হেরিওট ওয়াট থেকে সম্মানজনক ডি.লিট, নেপিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে স্কটল্যান্ডে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে “জাস্টিস অব পিস” মনোনিত হন। ১৯৯৩ সাল থেকে স্কটল্যান্ডে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনারারি কনসাল জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ-ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. ওয়ালী এডিনবরার সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “বেষ্ট অব স্কটল্যান্ড” ও “টপ টেন ইন ব্রিটেন” অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ব্রিটানিয়া স্পাইসসহ ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ ``বারান্দা`` ও ``ল্যান্সার``র রূপকার। ড. ওয়ালীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চেম্বারের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় সাড়া জাগানো এক্সপো-২০০৫, যা ব্রিটেনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে। এ মুহূর্তে তিনি ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের জয়েন্ট প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. ওয়ালী বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ সালে ব্রিটেনে আসেন স্ত্রী, দুই পুত্র এবং তিন কন্যা নিয়ে। এডিনবরা শহরের উপকণ্ঠে “শাপলা ভবনে” বসবাস করছেন।
ফার্স্ট মিনিস্টারের কাছে বিরল সম্মান পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে, ত্যাগের মনোভাব নিয়ে সততার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করে গেলে মানুষের ভালবাসা পাওয়া যায়। প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করা খুবই জরুরি। নিজের মাতৃভূমি ও সমাজকে কিছুটা ফেরত দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে প্রতিদিন আমাদের সকলেরই দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। এই অল্প অল্প উদ্যোগ একদিন ব্যাপক পরিবর্র্তন আনতে পারে পীড়িত মানুষের জীবনে। যারা আমাদের কার্যক্রমে সর্বদা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে আমি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং প্রাপ্ত সম্মাননার সবটুকুই তাদের জন্য উৎসর্গ করছি। ”
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ: reunion@btrialumni.com
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com