ঢাকা: জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আগামী ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবকাঠামোর দিক থেকে সুরক্ষা জোরদার করা উচিৎ। এ জন্যই বাংলাদেশ সরকার এ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক সাইদা মোনা তাসনিম বাংলানিউজকে একথা জানান।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বাজেটের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি।
সাইদা মোনা তাসনিম জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদী সংলগ্ন প্রায় ৫০ কিলোমিটার একটি বাঁধ নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেই বাঁধ পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এ ভাঙা বাঁধের সুবিধা নিয়েই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাঁধ সংস্কার হলে বিজিবি সহজেই এ এলাকায় টহল দিতে পারবে ।
এ বিষয়ে অন্য এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে চায় ঢাকা। এ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের আগেই মিয়ানমারকে তা অবহিত করতে চায় বাংলাদেশ। এ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হবে প্রায় ২০০ মাইল এলাকা জুড়ে।
বাংলাদেশের অবস্থান জানাতে মিয়ানমারকে জানিয়ে রাখতে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল অনুপ কুমার চাকমাকে সে দেশের সংশ্লিষ্টদের কাছে এ চিঠি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে দুই দেশের। মিয়ানমার ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নিজ সীমান্তে ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে। তখন বাংলাদেশ থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন বাংলাদেশও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
তবে এ বেড়া নির্মাণের ফলে সুবিধা ও অসুবিধা দুইই রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, প্রথমত বাংলাদেশ পূর্বে ভারত ও মিয়ানমার দুই দেশের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এখন তাদের এ বেড়া নির্মাণের বিষয়ে কোনো কথা বলার নৈতিক অধিকার হারাবে ঢাকা।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের প্রত্যাবর্তনে সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
ভারতের সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার ও মিয়ানমারের সঙ্গে ২৭১ কিলোমিটার বাংলাদেশের সীমানা রয়েছে। কিন্তু এখনও ভারতের সঙ্গে সীমানা সম্পূর্ণভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে কাঁটাতারের বেড়া বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয়। কারণ, বাংলাদেশের মতো এত অধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশে নিজেদের কাঁটাতারের মধ্যে ঘিরে ফেলা দেশের আর্থ-সামাজিক সংকট সৃষ্টি করবে। কারণ, এখন শত শত মানুষ এ দু’টি দেশে বৈধ অনুমতি ছাড়াই অবারিত যাতায়াত করে থাকে, যা এসব দেশের কর্তৃপক্ষও জানে।
তাছাড়া মিয়ানমার থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে যে বাণিজ্য চলে তা থেকে মিয়ানমার বেশি সুবিধা আদায় করতে পারবে।
মিয়ানমারতো চাইছেই কাঁটাতারের বেড়া দিতে। এখন তাদের কাজটি বাংলাদেশ নিজের অর্থে করতে উদ্যোগী হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের পক্ষে এতো বড় তারকাঁটার বেড়ার ব্যবস্থাপনা করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়বে।
তারকাঁটার বেড়া নির্মাণের কয়েক বছর ব্যবস্থাপনার অভাবে এর ফাঁক-ফোকর দিয়ে রোহিঙ্গা ও মাদক পাচার হলে এর দায় সহজে এড়িয়ে চলতে পারবে মিয়ানমার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১২
কেজেড/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর