ক’দিন আগে সিলেট নগরীর নিম্বার্ক আশ্রমে গিয়েছিলাম একটি ধর্মীয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। আশ্রমের নব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে আয়োজিত সাত দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন দেশ বিদেশের অনেক গুণী ব্যক্তি।
সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ভারতের বৃন্দাবন থেকে আসা ওয়ার্ল্ড নিম্বার্ক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য ড. বৃন্দাবন বিহারী দাস। বৃন্দাবন বিহারী দাস জানালেন, তাঁর বক্তব্যের পরই গান গাইবেন গজলশিল্পী অনুপ জালোটার কাছে তালিম নেওয়া জনপ্রিয় শিল্পী রাজু দাশ। একটি মুসলিম রাষ্ট্রে এত বড় অনুষ্ঠান আয়োজন এবং অনুষ্ঠানে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে লোকজনের উপস্থিতি দেখে বৃন্দাবন বিহারী সিলেটবাসীর উচ্চ প্রশংসা করলেন। তিনি রাজু দাশের গান চলাকালে হুড়াহুড়ি, মারামারি না করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বললেন, এত সুন্দর অনুষ্ঠানে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সে পশুর চেয়েও অধম হিসেবে বিবেচিত হবে। পশুর মতো তাঁর শিং আর লেজ নেই- পার্থক্য থাকবে এইটুকুই।
একটু পরেই শুরু হয়ে গেল রাজু দাশের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সঙ্গীত। মানুষের ভিড়ে পা ফেলারও স্থান নেই অনুষ্ঠানস্থলে। গান শুরু হতেই শুরু হয়ে গেল দুই যুবকের মারামারি। ভাগ্য ভালো গান-বাজনার শব্দে ঘটনাটি বৃন্দাবন বিহারীর কানে পৌঁছায়নি। তাই মনে হয়েছে বড় লজ্জা থেকে বেঁচে গেছি!
আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন্সে অগ্নিকাণ্ডে গণমৃত্যুর পর বৃন্দাবন বিহারীর সেই কথাটি বারবার কানে বাজছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের বক্তব্য আর গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি শুনে বুঝতে বাকি নেই যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ভাবতে অবাক লাগে, দুর্বৃত্তরা মানুষ হয়ে কি করে এতগুলো মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করলো? তাহলে কি আমরা শিং-লেজহীন পশু-ই হয়ে গেলাম?
যে কথা বলছিলাম। নিম্বার্ক আশ্রমের সেই ঘটনার লজ্জা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি! কিন্তু আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন্সের এই ঘটনা তো মুহূর্তেই গণমাধ্যমের কল্যাণে পুরো বিশ্বে প্রচার হয়ে গেছে। পশুত্বের এই লজ্জা থেকে কি করে বাঁচব এখন? দুটো পয়সা উপার্জন করতে এসে যারা লাশ হয়ে গেল সেইসব শ্রমিকের পরিবারের স্বজনদের কাছে আমরা কি করে মুখ দেখাবো?
আমাদের দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই মামলা হয়, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ঘটনায়ই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় না। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের সুপারিশও গ্রাহ্য করা হয় না অজানা কারণে। আমরা আশা করবো, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন্সের মর্মন্তুদ এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ এবং সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িত সবার এমন শাস্তি হোক যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরণের দুঃসাহস দেখাতে না পারে।
বাংলাদেশ সময় ১২২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১২
এমএমকে; জুয়লে মাজহার, কনসালট্যান্ট এডটির- eic@banglanews24.com