সম্প্রতি একটা গল্প পড়েছি। লেখকের নাম মনে থাকে নাই দুর্ভাগ্যবশত-সৌভাগ্যবশত।
বিডি আর্টস২৪ এ কর্মরত কবি-লেখক-অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন বলে দিয়েছেন এটা তাকে নিয়ে লেখা। তিনি না বললেও আমরা বুঝতাম যে, এটা ‘রাজু-পশ্চাতমুখে’ এক বারুদ দলা, যা সাহিত্য-কামান-গোলা! আমি এক ধরনের আন্তরিক পাঠক, বিশেষ করে গল্পের, ফলে মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি গল্প পড়ি। গল্প ও গল্পকারকে বুঝবার চেষ্টা করি। বিশেষ করে অনুসন্ধান করি লেখকের মনো-জাগতিক অবস্থান ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা-- যা একজন লেখকের শক্তি। লেখক যে রাজুর বাবা, স্ত্রী, পুত্র, মা (খানকির পোলা পর্যন্ত) কে নিয়ে লিখেছেন—তার গল্পের চরিত্র করেছেন-- সে নিয়ে আমার কোনো কথা নেই-- ওটা লেখক ও রাজুর ব্যক্তিগত থাকুক। গল্পে কী আছে দেখি।
গল্পের কাহিনী একটি উদ্ধার করা যায় অবশেষে। যারপরনাই একটি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও এক ‘গালা-গাল নামা’। সেখানে প্রথমেই গল্পের শুরু প্রধান চরিত্রের ‘মেইল অর্গান’ দিয়ে যা কিনা ‘কুট-কুট’ কামড়াতে থাকে যা আবার ওই প্রধান চরিত্রের মৃত লাশ-ই অনুভব করে।
দৃশ্যত এই গল্প রাজু ব্যক্তি-বিদ্বেষ হলেও তা একটি পুরো গোষ্ঠীর ঘৃণা-নামা। যেমন পাঠকরা বুঝতে পারবে সমগ্র লেখায় লেখকের ঘৃণা রয়েছে অনেক কিছু ঘিরে যেমন, দরিদ্র জনগণ ঘৃণা করেন, কারাখানার শ্রমিক ঘৃণা করেন, যারা ছোট কাজ করেন তাদের ঘৃণা করেন, যারা প্রুফ রিডারের কাজ করেন তাদের একেবারে এক নম্বরে ঘৃণা করেন। এই তালিকা সারা গল্পজুড়ে দীর্ঘতর হতে থাকে। ট্রাক-ড্রাইভারদের ঘৃণা করেন, যাদের গ্রামে বাড়ি তাদের ঘৃণা করেন, যাদের ছাপড়া ঘর তাদের ঘৃণা করেন। যারা ইংরেজি ভাল করে বলতে পারেন না তাদের ঘৃণা করেন। ঢাকার গাড়ল-সাহিত্য-সম্পাদকদের ঘৃণা করেন (কোন্ কোন্ সাহিত্য সম্পাদক গাড়ল সে তালিকা অবশ্য তিনি দেননি, দিলে ভাল হতো প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য। ) যারা ছোট কবি তাদের তিনি ঘৃণা করেন। ফিরিঙ্গিদের তিনি ঘৃণা করেন। ‘খানকি’দের তিনি ঘৃণা করেন (আমার নিজের অবশ্য ধারণা নাই তিনি ‘খানকি’ বলতে কী বুঝিয়েছেন)। ‘খানকির-পোলা’দের তিনি আরো ঘৃণা করেন। বোঝা যায় এটা প্রথম আলোর নীতি। এছাড়া এ থেকে তারা এ-ও নিশ্চিত করেন যে, তিনি বা তাহারা ‘খানকিপুত্র-বা-কন্যা’ নয়। জাতি এইসব তথ্য জেনে উপকৃত হয় দিন-বদলের সঙ্গে।
গল্পটি শুরু হয়েছে একটি পুরুষাঙ্গ নিয়ে। গল্পকার লিখেছেন—
গুটিয়ে ছোট হয়ে থাকা পুরুষাঙ্গে একটা পোকা অনেকক্ষণ ধরে কামড়ে চলেছে। কামড়ে আমি যে খুব ব্যথা পাচ্ছি বা কষ্ট পাচ্ছি, তা নয়, কেমন যেন একটা সুড়সুড়ির মতো অনুভূতি হচ্ছে। [এই রকম একটি অর্থহীন শিশ্নমুখি গল্পের কারণে নিঃসন্দেহে পত্রিকাটির আরও মর্যাদা বাড়ল। লেখকের পুরুষাঙ্গের দুর্বলতার যৌক্তিকতা গল্পের কোথাও নেই। বলার জন্যই বলা। লেখক বুঝে উঠতে পারেননি কেন বলছেন। কেন এই শিশ্ন কেন্দ্রিকতা? এই গল্পে শিশ্ন আনার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
গল্পে লাশ কথা বলছে। লাশ যখন নিজের কথা বলে, লেখক তখন গল্প বলবার কোন ফরম্যাট নিয়েছেন আগ্রহ জাগে, তার কনসিসট্যান্সি আছে কিনা। কী কারণে এমন হবে? ম্যাজিক্যাল না ফ্যান্টাসি, অ্যালিগোরিক্যাল? ধারাবাহিকতা কই, কী?
“সবচেয়ে আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, আমি আমার আশপাশের সবার কথা শুনতে পাচ্ছি”। [এটা কোন পাঠ-যোগ্যতায় (রিড্যাবিলিটিতে পড়বে?)প্রথম না দ্বিতীয় শ্রেণী]? “এর আগে মেহিকোর(মেক্সিকোর) তিহুয়ানা থেকে মেহিকো (মেক্সিকো) সিটি পর্যন্ত কেমন এক আধো ঘুম-আধো জাগরণের মধ্যে কেটেছে” [অর্থহীনতার একটা সীমা থাকতে পারত!] “মেক্সিকো সিটির এক সস্তা হোটেলের বেসমেন্ট ফ্লোরে” [‘সস্তা’র প্রতি লেখকের ঘৃণা। মেহিকোর হোটেলের বেসমেন্টের ফ্লোর? [জ্ঞানের প্রশ্ন উঠতে পারে]।
“ঘোড়দৌড়ের মতো চেতনা ফিরে এল। [ঘোড়দৌড়ের মত চেতনা? সেটা কী?, এই গল্পের পাঠকরা কোন ক্লাসে পড়াশুনা করেছে?]
“অসাড় নিস্তব্ধতায় ঝুলে থাকা সুষুপ্ত চেতনাও”। [এর অর্থ কী?]
“তখনই মেহিকোর সস্তা কটনউড কাঠের কফিনের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেল” [সস্তা জিনিসের প্রতি ঘৃণা]
“পচনশীল লাশের পচন ঠেকাতে আমার মেহিকান বউ” [নিষ্ঠুরতার কাছে কারো বউও ক্ষমা পায় না দেখছি]
“বসিয়ে চলেছে আমার পুরুষাঙ্গে। কুট কুট করে, একনাগাড়ে। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে আসলেই কি কিছু কামড়াচ্ছে?” [লেখক আবারও অকারণে প্রথম আলো ব্রিগেড বা বিজ্ঞ সম্পাদকীয় বোর্ডের পুরুষাঙ্গের কথা মনে করিয়ে দিল পাঠাকদের]
“এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটা শরীরের ছোট একটা অংশমাত্র, গোটা শরীরও নয়, তার পরও কখনো কখনো ওটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে” [আবারও পুরুষাঙ্গ! ঘটনা কী, সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারটা কোথায়?]
“আমার মাথার দিকে বসা আমার ছেলে নিযারের জন্য মন খারাপ হচ্ছে”। [নিষ্ঠুরতা থেকে ছেলেও ক্ষমা পেল না]
“ছেলেকে বাংলাদেশের কত গল্প করেছি: এখানকার ভরা নদী, ভুস করে ভেসে ওঠা কালো শরীরের শুশুক, দুধারের কাশের বন। কিন্তু এসব ছাপিয়ে এখন চারদিকে থইথই করছে ঘোলা জল। নদীর চেহারা খুবই ভীতিকর” [ভুলে রাজুকে এখানে বড়ই করে ফেলেছে যে! হা হা হা কাণ্ডজ্ঞান বলে কথা]
“কিন্তু মুশকিল হয়েছে : আমার শরীর মৃত, কিন্তু চেতনা দারুণভাবে জাগ্রত” [লেখকের গল্প বলবার ফরম্যাট সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, এধরনের অসংলগ্নতায় ভরা বিষয় দেখে বোঝা যায়]
“কিন্তু মার্তা ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে মুছাকে এটাই বোঝাতে চেয়েছে”। [মার্তার ভাঙ্গা ইংরেজির প্রতিও ঘৃণা ও ক্ষোভ, নিশ্চয়ই লেখক আস্ত-আস্ত ইংরেজিতে কথা বলেন। ইশ! যদি একদিন শুনতে পারতাম!!]
‘এই মেয়েটাকে আমি ভালোবেসেছিলাম তার ভয়ংকর শরীরের জন্য”। [এডোলেসেন্ট বালকীয় প্রকাশ!অপ্রাপ্তবয়স্ক]
“মেহিকান মাদি ঘোড়ার মতো পেটা, তাগড়া শরীর ওর; বিছানাতেও বুনো ঘুড়ি”। [এই বর্ণনা থেকে লেখকের রুচি আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ]
[বিছানায় ওর শরীরের প্রতিটি তন্ত্রী বেজে ওঠে বীণার মতো]। এই তাড়না দেখে তো এখন মনে হয় লেখকের সেক্সচুয়াল ডিসঅর্ডারও আছে, কথা-বার্তা এরকম হচ্ছে কেনও, কী গল্প বলছেন?] “তাই শুরুতে শ্রমিক হিসেবেই ওর ওখানে কাজ শুরু করেছিলাম”। [যারা শ্রমিকের কাজ করে, এই লেখক তাদের এত ঘৃণা করেন?]
“ফল যা হলও : কারখানার চাকরি ছাড়তে হলও”। [কারখানায় কাজ ওয়ালাদের তিনি এত ঘৃণা করেন কেন, তিনি নিজেও তো ছাপাখানার ব্যবস্থার প্রি-প্রোডাকশনে কাজ করেন, তবে শ্রমিক, সস্তা, বেসমেন্ট, এত ঘৃণা করেন কেন এসবকে?]
“এরপর, কষ্ট গেছে অনেক, অর্থকষ্ট”। [যারা অর্থ কষ্টে থাকেন তাদের প্রতিও তো দেখি অপরিসীম ঘৃণা এই লেখকের?]
“একটা দৈনিকের প্রুফ রিডার ছিলাম”। [লেখক প্রুফ রিডারদেরকেও দেখি ঘৃণা করেন]
“আমি নাম বদলে রাখলাম রায়হান সালাউদ্দীন”। [তিনি নাম বদলানোকে ঘৃণা করেন, এইভাবে পাঠকরা জানল তার নাম বাবার দেওয়া। ]
“ছিলাম মাতাল, দরিদ্র এক ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে”। [উঃ হাঃ হাঃ হাঃ, এখন তো দেখি ট্রাক ড্রাইভারদের খুব ঘৃণা করেন, এই সব লেখকরা কী লর্ড ক্লাইভের না ব্রিটিশ রাজ পরিবার থেকে, নাকি ওয়ারেন বাফে’র নাতি, নাকি রকাফেলারের গ্রেট নাতি?, আমিতো শুনছি মতিউর রহমানের কেউ বা আবুল মনসুর আহমদের কেউ, বা লতিফুর রহমানের কেউ না কেউ ট্রাক ড্রাইভার ছিল? তাহলে তাদের সঙ্গে কাজ করেছে, আমার বাপ তো এখনো কাওরান বাজারের সবজির ট্রাক চালায়। এখনো তো লতিফুর রহমানদের ইলেক্ট্রনিক্স বিজনেসের মালামাল ট্রাক ড্রাইভাররাই দোকানগুলোতে সাপ্লাই দেয়, সে ট্রাক ড্রাইভারদের টাকা থেকেই শুনছি ওই পত্রিকার ‘শ্রমিকদের’ বেতনাদি পোষানো হয়, তবে এতো ঘৃণা কেন?]
“জুনিয়র সাব-এডিটরের চাকরি আর আমার প্রুফ রিডারের, অর্থাৎ মুদ্রণশোধক”। [আবারও ঘৃণা]
“আমার মাতাল বাবা” [এবারে মাতাল ঘৃণা]
“ছিলাম মাতাল, দরিদ্র এক ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে”। [ হায়, দরিদ্র ড্রাইভারের প্রতি এত ঘৃণা]
“হাঁ করে গিলতে আসা নিত্যকার অভাব” [অভাবীদের প্রতি ঘৃণা]
“ভেঙে না পড়ে কারখানার চাকরি ছেড়ে, অনেক কষ্টে একটা পিৎজার দোকানে চাকরি জুটিয়ে নিলাম”। [কারখানায় বা ছোট চাকরী করেদের প্রতি ঘৃণা]
“এ সময়টায় আমি আবার লেখালেখিতে ফেরার চেষ্টা করলাম। দেশে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লাতিন আমেরিকান লেখকদের নিয়ে বিজ্ঞের মতো বিভিন্ন লেখা লিখে পাঠাই। গাড়ল সাহিত্য সম্পাদকেরা বুঝে না-বুঝে সেগুলো মহা উৎসাহে ছাপায়”। [ হা হা হা একটি তালিকা তৈরি করা হোক রাজু আলাউদ্দিনের লেখা কোন কোন ‘গাড়ল’ সাহিত্য সম্পাদকরা ছেপেছেন]
“এদিকে নিযারেরও জন্ম হয়েছে। হ্যাঁ, নিযার, আমার ছেলে। বড় প্রিয় এই নাম আমার। এই নামে এক আরব কবি আছে, নিযার কাব্বানি”। [ হায়! মাসুম, কেবল জন্মানো ছেলে নিয়েও এই লেখকের নির্মম হতে বাধলও না। আমি নিশ্চিত তার কোনও সন্তান নেই, যদি থাকে তবে কী হতভাগা তারা এমন একজন পিতার সন্তান যে অন্যের সন্তানের প্রতি কী অমানবিক হয়, আচ্ছা একটা প্রশ্ন,প্রথম আলোর সাজ্জাদ শরীফ, আনিসুল হক, মতিউর রহমান, মাহফুজ আনাম, লতিফুর রহমান এদের সন্তানাদি নাই? আছে বলে তো শুনেছিলাম, তবে অন্যের সন্তানের প্রতি এতো ঘৃণা?]
“তখন টেবিল পরিষ্কারে ব্যস্ত আমি”, [আবারও ছোট কাজের প্রতি ঘৃণা]
“দুটো ছাপড়া ঘর সঙ্গে আমগাছ”,[ছাপরা ঘরের প্রতি ঘৃণা]
“আমার ছ বছরের নিযার ও আমার আমকাঠের কফিন দেখল” [আবারও পাশবিকতা, আবারও পশু]
“মুছা। অরে আমি নিজের পোলা মনে কইরা বাণিসান্তার মাগিপাড়া থিকা তুইলা আনছিলাম” [হায় লেখক, হায়, বানিসান্তার প্রতি ঘৃণা, ‘মাগিপাড়া’র প্রতি ঘৃণা, ‘মাগিপাড়া’ কী? হায় লেখক]
“ওই মাগি কইছিল আমার পোলা”। [লেখকের নারী মনোভাব]
“তুই ওই ফিরিঙ্গি বিটিরে এইহান থন বিদায় কর”। ফিরিংগি ঘৃণা, হায় এবং হায়]
“ফিরিঙ্গি মাগিরে দেখছ”, [আবারও]
‘ইহো দেপুতা! (খানকির পোলা!) [রাজু নিজেই বলছে লেখাটা তাকে নিয়ে, দেখুন এই সংলাপটা এবং ভাবুন আপনি একজন লেখকের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন]
পুরো গল্পটিই এক মানুষের প্রতি, তার স্ত্রী, পুত্র, বাবা, পরিবার, পরিজন, পেশা, সামাজিক অবস্থান জীবনকে নিয়ে ঘৃণার পাঠ হয়ে উঠেছে। লেখক এই ঘৃণার লেখাটি করেছেন কবি-লেখক-অনুবাদক-সাংবাদিক রাজু আলাউদ্দিনকে নিয়ে। এর কারণও জানাচ্ছেন রাজু আলাউদিন। তিনি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন--
‘ গল্পটি আমাকে নিয়ে। আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি লিখেছেন। ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ ওনার ভুল ও বাজে অনুবাদের সমালোচনা লিখেছিলাম সপ্তা দুয়েক আগে। আমার অপরাধ আমি তার ভুল অনুবাদের কেন প্রশংসা করি নি। আলীম তারই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এই গল্প লিখেছেন। আমার লেখাটি বেরিয়েছিলো দৈনিক যুগান্তরের সাহিত্য সাময়িকীতে। সেখানে ভিন্নমত বা প্রতিবাদ জানিয়ে সাহিত্যিকভাবে সুস্থ পন্থায় মোকাবেলা করতে পারতেন আমার লেখাটির। সেটা না করে তিনি প্রথম আলোকে ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসিত গল্প ফেঁদেছেন। ‘
জনাব রাজু আলাউদ্দিনকে বলব, তিনি যেন বিষয়টি দৈনিক প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের কাছে জানান। ‘প্রথম আলো দাবী করে যে ‘যা কিছু ভালো-তার সঙ্গে প্রথম আলো’। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যাবহার করতে দেয় না। আরো জেনেছি, তাদের একটি বিনোদন পত্রিকার সম্পাদককে তারা খারিজ করেছে এক ব্যক্তিগত অনৈতিক কাজ করার অভিযোগে। সুতরাং প্রথম আলো নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা দেবে কেন, কি অর্থে একজন কবি-লেখক-অনুবাদক-সাংবাদিকের প্রতি প্রথম আলোতে কর্মরত এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত ঘৃণা প্রকাশকে ভালো কাজ হিসেবে গণ্য করেছে? কেনো এই ঘৃণার লেখক পদোন্নতি পাবেন আর আনন্দ ধারা’র সম্পাদক খারিজ হবেন।
এরপরে আমি বলব, আমার যদি কোনো কারণে কোনো সভা সমিতিতে কোনোদিন মতিউর রহমান, বা মাহফুজ আনাম বা লতিফুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয় আমি এই প্রশ্নগুলো তাদেরকে জিজ্ঞেস করব তা দশ বছর পর হলেও। এর অর্থ এই লেখকের এই ব্যক্তিগত ক্ষোভের উত্তরটি দিতে হবে তাদের।
এবারে একটা ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে বলি। ২১ বছর আগে আমি যখন বাবা হলাম, রাস্তায় আমাদের দুই মটর সাইকেল থামল। লুতফর রহমান রিটন বলল, আনোয়ার, আপনার মেয়ের নাম দিন তো, ছোট কাগজে নিজেই নাম লিখলেন। ক’দিন পর জানলাম তার একটি বই তার মেয়েসহ আমার ও অন্যান্য যেসব বন্ধুর নতুন সন্তান হয়েছে তাদের সকলের নামে করেছেন। কিছুদিন আগে আমার ছোট মেয়ের জন্মদিনে তার একটা ছবি দেখে তিনি লিখলেন মা’মনিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। দশ বছর পর হলেও এখনো তার সঙ্গে কথা হলে তার মেয়ের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করি, ও কত বড় হল। এই বন্ধু,বন্ধুত্ব এবং আমরা। অথচ ওইখানে গল্পে রাজু আলাউদ্দিনের যে ছেলের নাম নেয়া হয়েছে সেটা আমার সন্দেহ হলো যে এটা তার ছেলের আসল নাম হতে পারে। আমার বন্ধু কুলদার সঙ্গে যখন এটা বললাম যে, আমার মনে আছে ঢাকায় দেখা হলে আমি ছেলেটার নাম জানতে চাইলে এই নাম বলেছিল। তখন এও বললাম এটা তো রাজু আলাউদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া রুচি সম্মত হবে না, কী ভাবে খোঁজ নিই? কুলদা বললেন, তার পারিবারিক ছবিতে সবার নাম লেখা আছে আমি দেখে নেবো। আজ অতি দুঃখের সঙ্গে জানতে হলে ‘পশুর কাজটি’ই হয়েছে। প্রথম আলোতে প্রকাশিত গল্পে রাজু আলাউদ্দিনের ছেলের প্রকৃত নামই ব্যবহার করা হয়েছে। আলীম আজিজের ঘৃণা থেকে রাজু আলাউদ্দিনের মাসুম ছেলেটিও রেহাই পেল না। এই ছেলেটির অন্যায় কী অন্যায় এ সম্পর্কে যদি মাহফুজ আনামকে জিজ্ঞেস করতে পারতাম ঢাকাস্থ আমেরিকান অ্যাম্বেসিতে দেখা হলে (২১ বছর আগে তার সঙ্গে একদিন আমার আমেরিকান অ্যাম্বেসির একটি পার্টিতে দেখা হয়েছিল এবং কথা হয়েছিল), হয়ত জিজ্ঞেস করতাম আবুল মনসুর আহমদের উপর কারো ক্ষোভ থেকে থাকলে তা আপনি বহন করবেন কিনা, আপনার উপর কারো ক্ষোভ তাহমিমাকে বহন করবার নৈতিকতায় বিশ্বাস করেন কিনা। জানি তিনি তা করেন না। তবে রাজু আলাউদ্দিনের উপর আপনাদের পত্রিকার ক্ষোভ কেন তার ছেলেকে আপনাদের একটি পত্রিকার পাতায় বহন করেতে হল? রাজুর এই ‘নিযার’ নামের সন্তান-আমাদের নিজেদের সন্তানকে ক্ষমাহীনভাবে বিমূঢ়-অসহায় করে দেওয়া হয়েছে এই গল্পের মাধ্যমে। এদের কাছে আমাদের আর বলার কী থাকল?
আমি ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় থেকে দূরে থাকি তাই সহসা পরাজয় মেনে নিই না। এখানেও নিলাম না। রাজু বা আমি রিটন বা কুলদা মরে গেলে আমরা আমাদের সন্তানদের কতটা অসহায় রেখে যাব এই দানবীয়-অসভ্য সব চর্চার মধ্যে—তা ভেবে শিউরে উঠছি এই দানবীয় পাঠ পড়ে। শিউরে তো আগেও উঠেছিলাম যখন লতিফুর রহমানের ছোট মেয়েটিকে ধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল তাদের নিজের বাড়িতে। সেই ধর্ষকের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্বস্তিতে ছিলাম না। আমাদের শ্বাসরোধ হয়ে এসেছিল। আমরা সেই অসহায় বাবা লতিফুর রহমানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলাম আমাদের সন্তানদের বাবা হিসেবে। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে—একজন সভ্য মানুষ হিসেবে। অপরাধীর বিচার সম্পন্ন হলে আমরা স্বাভাবিক শ্বাস ফিরে পেয়েছিলাম এই দেখে যে—আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একজন পিতা লতিফুর রহমান আইনের কাছে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে টিকেছিলেন। তিনি সব সন্তানদের বিজয়ী করেছেন। কিন্তু তার মালিকাধীন পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলোতে তারই নিয়োগকৃত এক কর্মকর্তা আরেকজন পিতার সন্তানের মর্যাদা, মানসিক নিরাপত্তাকে তাদের গোচরেই ধর্ষণ করেছে-- হত্যা করেছে। একে কী বলবেন লতিফুর রহমান?
গত এপ্রিলে অক্তাবিও পাস’এর মৃত্যুদিনকে ঘিরে সামান্য ক’জন দেশি-বিদেশি এক হয়েছিলেন তার কবিতা পড়বেন ও তাকে নিয়ে একটি আলোচনা করবেন বলে; সেটা সম্ভবত ওয়ান-ডিশ টাইপ পার্টি। তিনটি মাত্র বাঙ্গালি পরিবার সেখান ছিল যতদূর মনে পড়ে। তারা হলেন, কবি কাজল শাহ্নেওয়াজ, সাজ্জাদ শরীফ ও রাজু আলাউদ্দিনের পরিবার। আমিও সেখানে দাওয়াত পেলাম। আমি যেহেতু সপরিবারে ঢাকাতে ছিলাম না তাই একা যেতে হয়েছে। এই পার্টিতে উপস্থিত সবক’টি বাচ্চার নাম আমার এখনো মনে আছে। এসব অপ্রাসাংগিক কথা বলছি কেন? বলছি- ভাবি, তাদের যদি ফের দেখা হয়? (সে তো হতেই পারে) প্রথম আলোর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদ শরীফ যার অনুমোদনক্রমে সাহিত্য সাময়িকীর প্রতিটি লেখা প্রেসে যায় বলে শোনা যায়, এই গল্পটিও সাহিত্য সম্পাদক লিখলেও সাজাদ শরীফের অনুমোদন ছাড়া ছাপা হয়নি বলে ধরে নেওয়া স্বাভাবিক, সেই সাজ্জাদ শরীফের স্ত্রী কী রাজু আলাউদ্দিনের স্ত্রীকে বলবেন না যে ভাবী কেমন আছেন? তিনি কি এই গল্প পড়বেন না? যেখানে লেখা আছে “মেহিকান মাদি ঘোড়ার মতো পেটা, তাগড়া শরীর ওর; বিছানাতেও বুনো ঘুড়ি”। “বিছানায় ওর শরীরের প্রতিটি তন্ত্রী বেজে ওঠে বীণার মতো” “তুই ওই ফিরিঙ্গি বিটিরে এইহান থন বিদায় কর”। “ফিরিঙ্গি মাগিরে দেখছ”,। তখন কী তার মনে পড়বে না কোনও না কোনওভাবে হতে পারে ওই লেখা তার স্বামীই ছাপার অনুমতি দিয়েছে। আমি ঈশ্বর-শূন্য হয়েও তার কাছে প্রার্থনা করি যেন এমনটি না হয়। সাজ্জাদ শরীফ যদি নিযারকে দেখে বলেন কী যেন তোমার নাম তখন নিযার কী বলবে- কেন আংকেল আপনি তো জানেন ওই যে আমার দাদি-জান ওই আপনার বন্ধু পরিচয়ে আমার বাবা সম্পর্কে আপনার সম্পাদিত পাতায় ‘ইহো দেপুতা! (খানকির পোলা!) ছাপা হয়েছে, সম্পর্কে আমি তার নাতি, আমার আসল নামটাই লেখা হয়েছে। তালব্য ‘শ’ দিয়ে আপনার সন্তানদের নাম কী আপনি লিখতে দিতেন, বাই দ্য ওয়ে সেই গল্প থেকে আমার নামটা জেনে নিয়েন আঙ্কেল”। আমার মেয়ে কি লুৎফর রহমান রিটনের মেয়ে কি আনিসুল হকের সন্তান কি সাজ্জাদ শরীফের সন্তানদের তো রক্ষা করতে (যদিও রাজু আলাউদ্দিনের সন্তান রক্ষা পায়নি) হবে, এই সব ‘ঘাতকদের’ হাত থেকে। এদের হাত থেকে মাহফুজ আনাম কী মতিউর রহমান কী লতিফুরদের নাবালক নাতি-নাতনিরাই বা কী,--- রক্ষা করতে হয় না আমাদের?
আনোয়ার শাহাদাত: যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী গল্পকার, লেখক।
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর