ঢাকা: মহানগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা আবাসিক এলাকায় ঢুকে প্রায়ই দেখা যায় রাস্তার মাঝখানে মেশিন বসিয়ে ইট ভাঙা হচ্ছে, নয়তো বিল্ডিং স্থাপনার কাজ চলছে। তখন এ রাস্তা দিয়ে কোন ধরনের যানবাহন চলা তো দূরের কথা, হেঁটেও চলা সম্ভব হয় না।
এ অভিযোগের কথা জানালেন ঢাকার মিরপুর, রূপনগর এলাকার বেশ কয়েকজন পথচারী। তারা জানান, রাস্তার মাঝখানে রড রেখে শক্তিশালী হাতুড়ি দিয়ে তা সোজা করা হচ্ছে। তখন হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে রাস্তায়ও ফাটল সৃষ্টি হতে শুরু করে।
ইট, খোয়া, পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তও হয়। অথচ পাড়া-মহল্লার যত রাস্তাঘাট আছে, তার বেহাল দশা হওয়ার জন্য দায়ী- যারা মানুষের চলাচলের দিকে নজর না রেখে বাড়িঘর নির্মাণ করছেন।
প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না কেন- এর উত্তরে একজন পথচারী জানালেন, রড মিস্ত্রির সহকারীকে বললাম, রড সোজা করতে গিয়ে রাস্তা নষ্ট করছ কেন? এর উত্তরে তিনি জানালেন, যিনি ওই বাড়ি তৈরি করাচ্ছেন তার নির্দেশ রাস্তার মাঝখানে রেখেই যেন রড সোজা করা হয়।
আমরা কর্মচারী, আমাদেরকে বলে কী লাভ! একটু পরে বাড়িওয়ালা এসে দাঁড়ালেনÑ ‘কী হয়েছে’? বিষয়টা তাকে জানাতেই তিনি একটু হেসেÑ এ জন্য তো প্রশাসন দায়ী, দায়ী সিটি কর্পোরেশন! কেননা, তারা যদি মাঝেমধ্যে ঢাকা নগরীর পাড়া- মহল্লায় এসে অভিযান চালিয়ে আমাদের জরিমানা করতেন তাহলে কী আর সাহস পেতাম!
এই মিরপুর এলাকায় এসে প্রথম দেখেছিলাম রাস্তা দখল করে ইট-বালু রেখে কত না লোক বাড়িঘর করল। সবই তো চোখের দেখা। তাদের দেখাদেখি আমিও করে যাচ্ছি।
হঠাৎ সেদিন মিরপুরের আবাসিক এলাকার এক সড়কে ঢুকেই দেখি রাস্তার দুই পাশে ইটের স্তূপ। বালুও রাখা হয়েছে। মধ্যখানে মেশিন রেখে ইট ভাঙা হচ্ছে। এর বিকট শব্দে বিরক্ত লাগাই স্বাভাবিক। সুস্থ মানুষের যদি অস্বস্তি লাগে তাহলে অসুস্থ মানুষের তো অস্থির হয়েই পড়ার কথা।
এ প্রসঙ্গে একজন পথচারী জানালেন, দেখুন এই রাস্তা হয়ে সোজা পশ্চিমে চলে যাব। সে সুযোগ আর হল কোথায়! এই যে দেখেন রাস্তার মধ্যখানে ইট ভাঙার মেশিন আর দুই পাশে ইটবালুর স্তূপ।
তাছাড়া ওই মেশিন দিয়ে যে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে তাও পরিবেশকে করছে দূষিত। এখন তো পরিবেশবিদদের দেখি না। তিনি আরও জানালেন, পাশের রাস্তা দিয়ে যাব সে সুযোগও হল না।
ওখানে ঢুকে দেখি বিশাল এক ট্রাক রাস্তা দখল করে আছেÑ ইট নামানো হচ্ছে। তাও রাখা হচ্ছে রাস্তার ওপর। কথাগুলো শুনে আরেক ভদ্রলোক বললেন, আমার তো অধিকার আছে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলার।
সে অধিকারটুকুও খর্ব করা হয়েছে। বলুন, এ বিচার কার কাছে জানাব? ওই যে দেখুন একটা বাড়ি, ওখানে ভাড়া থাকি। বিশাল ট্রাকের জন্য এ মুহূর্তে যেতে পারছি না। তবে আধা ঘণ্টা পরে যেতে তো পারব।
রুমে ঢুকে তো শুনতে হবে ইট-ভাঙার ঘটঘট বিকট শব্দÑ যা শুনে কান করবে ঝালাপালা। আর ওই মেশিনের ধোঁয়া তো করবে শরীরের ক্ষতি। এ অবস্থায় আমরা বড্ড অসহায়ের মধ্যে বাস করছি। বলুন, পাপ না করলে কী আর মানুষ ঢাকায় আসে। আজ আমার অবস্থাও তাই।
রাস্তাঘাট দখল করে ইট, বালু, ইট ভাঙা মেশিন, রড রাখার দৃশ্য কোথায় না দেখা যায়Ñ ঢাকার প্রায় পাড়া-মহল্লায় ঢুকলে এসব দেখে অবাক হতে হবেই। এ জন্য চলাচল করতে পারছে না যানবাহন।
এ দিকে হেঁটে চলার পথটুকুও পায় না পথচারীরা। আমরা কি-ই না জঞ্জালের মধ্যে আছিÑ পায়ে চলার পথটুকুও দখল হয়ে যাচ্ছেÑ তা দেখার কি কেউ নেই? এ অনুশোচনার কথাও কয়েকজন ভদ্রলোকের মুখে শুনে অবাক হলাম।
দুঃখ করে তারা জানালেন, রাস্তা দখল করে ইট বালুসহ বিভিন্ন সামগ্রী রাখার প্রতিবাদ করে কোন লাভ হয় না। বরং শত্রুতা বাড়ে।
বাংলাদেশ সময় : ১৯১৯ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১২
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর