শুক্রবার। ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি।
অনুষ্ঠানের শেষ নাগাদ টের পেলাম, ব্লেজারের পকেটে রাখা মোবাইলটি নেই। কিছুক্ষণ খুঁজলাম। না পেয়ে জানালাম আত্মীয়দের।
এ মোবাইলেই বিয়ে অনুষ্ঠানের বেশ কিছু ছবি তোলায় মোবাইলটি আমার কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আমার মতোই উৎকণ্ঠিত সবাই সদ্য হারানো নাম্বারে একের পর এক ডায়াল করতে শুরু করলো।
বহু বার রিঙ বাজার পর যখন রিসিভ হল তখন কোন কথা না এলেও বোঝা গেল মোবাইল ফোনটি কোন যানবাহনের মধ্যে রয়েছে।
এর মধ্যেই খবর এল যে, আমার মতো একই অবস্থা আরও চার জনের। এরপর আমাদের পাঁচ জনের ফোনই একে একে বন্ধ পাওয়া গেল।
এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এর দায় অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকলো তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার এক পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি তদন্ত শুরু করতেই বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরুর পর থেকেই প্রায় প্রতিটি বিয়ে অনুষ্ঠানেই মোবাইল ফোন, গহনা, টাকা ও মূল্যবান জিনিস হারানোর অভিযোগ এসেছে।
অভিযোগকারীদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও শীর্ষস্থানীয় এক রাজনৈতিক সংগঠনের সভাপতিও রয়েছেন। এমনকি দু’জন পকেটমার ধরা পড়ার ঘটনাও এখানে ঘটেছে। এ ব্যাপারে একটি জিডিও করা রয়েছে বর্তমানে উত্তরা-পূর্ব থানা নামে পরিচিত সাবেক উত্তরা থানায়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এখানে কোন সিসি ক্যামেরা নেই। অতিথিদের সতর্ক করার মতো কোন পোস্টার বা নোটিশও টানানো হয়নি কোথাও।
এ অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারণা করা হচ্ছে যে, এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে পেশাদার পকেটমার ও ছিনতাইকারীদের বিয়ে সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। কারণ বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা সব অতিথিকে চেনা কষ্টকর এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণপত্র ছাড়া ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টিও শিষ্ঠাচার বহির্ভূত।
প্রতিষ্ঠানটির মহা-ব্যবস্থাপক ইমাম হোসেন লিটন সেখানে উপস্থিত না থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তবে তাকে এ বিষয়ে ওই গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
লেখক: যন্ত্র প্রকৌশলী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১২
জেডএম/