বিশ্বমন্দা, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, লিবিয়ায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও বিবর্তনের ফলে অনেকের আশঙ্কা ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামবে, বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক শিল্পের কাচাঁ মাল আমদানি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানির মূল্য পরিশোধ করতে পারবে না—ফলে কাচাঁমালের অভাবে অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, বিনিয়োগ কমে যাবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব দেখা দেবে, জনমনে হাহাকার সৃষ্টি হবে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বাস্তবমুখী কার্যক্রম গ্রহণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক শাখা খোলার সুযোগ প্রদান, কড়াকড়ি শিথিল, সহজে অতি অল্প সময়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা পরিবারের হাতে পৌঁছে দেওয়া এবং টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বিদেশে গিয়ে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করেছেন। এর অন্যতম উদাহরণ প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক। সহজে দেশের গরীব কৃষক ও শ্রমিকদের ছেলেরা অল্প খরচে বিদেশে যেতে পারছেন।
দেশের প্রায় এক কোটি দামাল ছেলেমেয়ে বিদেশে কর্মরত, ১০ হাজার সশস্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর লোক শান্তি মিশনে কর্মরত। তারা বিদেশে কষ্ট ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠাচ্ছেন। বর্তমান সরকার প্রধান তাদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। বিদেশে যেখানেই তিনি সরকারি সফরে যান সেখানেই প্রবাসী ভাইদের সঙ্গে দেখা করেন, কথা বলেন, খোঁজ খবর নেন এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং দেশে ফিরে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি উর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে বাস্তবমূখী কর্মসূচী প্রণয়ন এবং উদার আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গিসহ হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, মাঝারি শিল্পে উৎপাদিত পণ্য ব্যাপক হারে রফতানি হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্ঠা এবং তাঁর আত্ম-প্রত্যয়কে কাজে লাগিয়ে যদি সবাই মিলে কাজ করা যায়, তবে বাংলাদেশ অতিশীঘ্রই একটি সুখি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
সেই লক্ষ্যে দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ট্রেনিং সেন্টার খুলতে হবে এবং ভোকেশনাল ও প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সকল পরিকল্পনা নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এই সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির কারখানা হবে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চাহিদা আসতে থাকবে দক্ষ শ্রমিকদের জন্য। শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দেশের সমস্যার পরিবর্তে জনসম্পদে রূপ নেবে। বাংলাদেশ হবে মানব সম্পদ উন্নয়নের একটি বিশাল কারখানা। যেখানে দেশের আকৃতি ছোট, জনসংখ্যা বেশি সেখানে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশে তাঁর সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এখানে উল্লেখ করা যায়, এই খাতে অসততার পথ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নানামুখী কর্মসূচি প্রণীত হচ্ছে। অতীতে অনেক দামাল ছেলে ভিটেহারা হয়েছে, মারা গেছে এবং তাদের পরিবারের আর্ত-চিৎকার আজও বাংলার আকাশে বাতাসে। দালালের খপ্পর থেকে গ্রামের সহজ সরল মানুষ আজ মুক্ত। বর্তমান যে পরিস্থিতিতে এই খাতে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে কয়েক বৎসরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ বিলিয়নে পৌঁছবে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
আবুল কাশেম আহমেদ: সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই; সাবেক সহ-সভাপতি সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৩
আরআর