এ মুহুর্তে দুই তরুণের প্রথম পরীক্ষা-ঈদ পরবর্তী সম্ভাব্য সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে শান্তির ধারায় ফিরিয়ে আনা।
ঈদের পরপর দেশের রাজনীতির ময়দান আবার সরগরম হয়ে উঠবে।
পবিত্র রোজার মাসে পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেমন করে ঈদ পরবর্তী কর্মসূচির কথা বলা শুরু করে দিয়েছে, তাতে সর্বসাধারণের এই আশঙ্কা অমূলক নয়।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, অক্টোবর থেকে লাগাতার হরতাল দেওয়া হবে।
জামায়াত বলছে, ঈদের পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে জামায়াত নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা বলছে, ঈদের পর জামায়াত-বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন।
খবরে প্রকাশ, ওয়ার্ড ওয়ার্ডে ১৪ দল ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের এ কারণে কমিটি করতে বলা হয়েছে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পরস্পর বিরোধী জোটদ্বয়ের এসব নানা রকম কৌশল ও প্রস্তুতি এক অনিবার্য যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই অনেকে মনে করছেন।
তবে নির্বাচন ঘিরে কিছু ইতিবাচক কৌশলের খবরও পাওয়া গেছে। যেমন, ড. ইউনূস প্রসঙ্গটি আর সামনে না আনার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে নতুন প্রজন্মকে আস্থায় রাখতে প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়কে বিদেশ থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার বিষয়ে তার কাছে তথ্য আছে সংক্রান্ত জয়ের বক্তব্যকে ঘিরে দেশময় যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে- এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে।
কেননা, বিরোধী শিবির অনেক আগে থেকেই আরেক তরুণ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জেষ্ঠ্যপুত্র তারেক রহমানকে ঘিরে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে আসছিল।
সম্প্রতি তারেক রহমান রাজনীতি নিয়ে, আগামী নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উজ্জীবন ঘটে। ফলে আগামী নির্বাচনে তারেক রহমান একটা "ফ্যাক্টর" হয়ে দেখা দিতে পারেন। সেই সম্ভাবনাকে "চ্যালেঞ্জ" ছুঁড়তেই হয়ত হঠাৎ করে জয়কে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হলো।
এখন তারেক রহমানকে ছাপিয়ে জয়কে কেন্দ্র করেই রাজনীতির ময়দান সরগরম। পক্ষ-প্রতিপক্ষ প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে করে রাজনীতিতে জয়ের অভিষেকটা বেশ ভালোই হলো বলে মনে হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব জয়ের রাজনীতিতে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারেক রহমানও রাজনীতিতে জয়কেই প্রতিপক্ষ ভাবছেন। এছাড়াও বিএনপির অন্য নেতা-নেত্রীরা যেমন করে জয়ের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন তাতে করে তারাও জয়ের রাজনীতিতে যোগদানের বিষয়টি মেনে নিয়ে জয়কে কঠিন চ্যালেঞ্জ-ই মনে করছেন। আর আওয়ামী লীগে জয়ের গ্রহণযোগ্যতাও পরিষ্কার। তাই আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী জয়ের রাজনীতিতে অংশগ্রহণকে ডুবন্তপ্রায় তরীকে ফের তীরে ফেরানোর উপায় হিসেবেই মনে করছেন।
অপরদিকে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার শেষ ভরসা হিসেবে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। অবস্থাদৃষ্টে, তারেকেই যেন নিহিত বিএনপির প্রাণ ভোমরা।
যত যাই বলি না কেন, দেশবাসীর শেষ ভরসাস্থল রাজনীতিই। তাই রাজনীতিতে পরিবর্তনে দেশবাসী ঘুরে বসে, নতুন আশায় বুক বাঁধে। জয়-তারেকের অন্তর্ভুক্তিতে সে আশা কতটুকু পূরণ হবে তা সময়-ই বলে দেবে।
তবে, এইক্ষণে আমাদের সবার প্রত্যাশা, ঈদ পরবর্তী যে সংঘাতের আশঙ্কায় এখনই শিউরে উঠতে হচ্ছে তা প্রতিরোধে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে দুই প্রধান দলের সম্ভাব্য দুই নিয়তি নিয়ন্ত্রকের ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। তবেই যোগ্য তারুণ্য নির্ভর রাজনীতির সূচনা সম্ভব, যেখানে প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে সংঘাতমুক্ত, মেধা ভিত্তিক সুস্থ ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির।
শাহরিয়ার পাভেল: সিডনি প্রবাসী কলামিস্ট ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, shahriar.pavel@outlook.com
বাংলাদে সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৩
জেডএম/