বাগবসন্তপুর, সাতক্ষীরা থেকে: আপনারা ভালোই জানেন যে আমাদের দেশের আদালতগুলোতে মামলার বিশাল জট লেগে আছে। দিনের পর দিন পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অনেক মামলারই কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
বছরের দীর্ঘ একটা সময় আদালত বন্ধ থাকে সরকারি ছুটির কারণে। তার উপর লোকবল, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, বিচারকের স্বল্পতা ইত্যাদি কারণে তৈরি হচ্ছে মামলার জট। হরতাল, মিছিল-মিটিং, নির্বাচন ইত্যাদির কারণে প্রায়ই ব্যাহত হচ্ছে আদালতের দৈনন্দিন কার্য্যক্রম।
এর সঙ্গে অধুনা যোগ হয়েছে আরও একটি কারণ। সেটি হলো সহকর্মীদের মৃত্যুতে আইনজীবিদের কর্মবিরতি। এটি খুবই সাধারণ বিষয় যে দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের মৃত্যুতে আইনজীবিরা শোক প্রকাশ করবেন, তাদের জন্য ব্যথিত হবেন। সেই শোক প্রকাশের পদ্ধতি নিয়েই আমার কথা।
আপনারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন, তাই শোক প্রকাশের পদ্ধতিতেও আপনাদের এই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কর্মবিরতি দিয়ে শোক প্রকাশ করা কোনো সঠিক পন্থা হতে পারে না। এর কারণে মামলার জট যে আরও বেড়ে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনারা আমার সঙ্গে একমত হবেন।
এই শোকপালন স্বরূপ কর্মবিরতির ফলে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। একটি কথা আপনাদের কাছেই শোনা, Justice delayed is justice denied। অর্থাৎ, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতাও এক ধরনের অবিচার। বছরের পর বছর এ দেশের মানুষ ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন অন্যায়ের বিচার না পেয়ে।
এদেশের সাধারণ গরীব-দুঃখী, দুর্বল বহু মানুষ ক্ষমতাবান আর কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে নিষ্পেষিত হন, মিথ্যা মামলার জালে পড়ে হয়রানিতে ভোগেন। তাদের ফাঁদে পড়ে জমি-জমা ভিটে মাটি সর্বস্ব হারান। তারা যখন হয়রানির শিকার হয়ে জেলে যান, তখন তাদের পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটান। অনেক কষ্টে টাকা-পয়সা জোগাড় করেন। অনেকে হয়তো জমিজমা, ভিটামাটিও বিক্রি করে আদালতের দ্বারস্থ হন।
তারা যেহেতু সরাসরি আদালতে আর্জি পেশ করতে পারেন না, সেহেতু তারা আপনাদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। আর সেই আপনারাই যখন যে কোনো অজুহাতে বা সহকর্মীদের মৃত্যুতে আদালতের কার্য্যক্রম বন্ধ রাখেন, এটা তাদের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়। আপনারা ভালোই জানেন যে নিম্ন আদালতে, বিশেষ করে উচ্চ আদালতে একবার হাজিরা বা কেসের তারিখ পিছিয়ে গেলে তা আবার পাওয়া কতো কঠিন। মাসের পর মাস কেটে যায় শুধুমাত্র সিরিয়াল পেতে।
তাদের এই ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে আপনারা কি পারেন না সহকর্মীদের মৃত্যুর দিনে দৈনন্দিন কার্য্যক্রম অব্যাহত রেখে সন্ধ্যায় একত্রিত হয়ে সহকর্মীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে, স্মরণসভা করতে বা কর্মরত অবস্থায় কালো ব্যাজ পরিধান করে শোক প্রকাশ করতে? এতে একদিকে যেমন আপনাদের শোক প্রকাশ হবে, তেমনি গরীব-দুঃখী সাধারণ মানুষ, যারা আপনার সহায়তার উপর নির্ভরশীল, আপনারাও যাদের উপরে নির্ভরশীল, তারা কিছুটা হলেও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর