থুতনীর নিচে এক গোছা কেশধারী পুরুষগণ শ্বশুরগৃহে ব্যাপক অপদস্থ হন দুষ্টু শ্বশুর-কন্যাদের দ্বারা। শ্বশুর কন্যারা দুলাভাইয়ের দাড়ি নিয়ে টানাটানি করেন।
বঙ্গীয় মুলুকে অবলা প্রাণী ছাগলের সাথে মুখ-কেশের তুলনা অপমানজনক। শুধু বাংলাতেই নয় এই নিরীহ অবলা জীবকে ইউরোপের পশ্চিম প্রান্তেও অপমান আর লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। সেখানে মনে করা হয় ছাগল শয়তানের চেহারার ধারক। তাদের ধারণা, শয়তান এবং ছাগলের বেশভূষা একই, শয়তানের দাড়ি এবং ছাগলের দাড়ি একই (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)। কিন্তু খ্রিস্ট সমাজে ছাগলের ইজ্জত খানিকটা উঁচু স্তরে। যে কোনো ফিস্টে (ভোজ) ছাগমাংস খাওয়ার রেওয়াজ আছে। ছাগমাংস খাওয়াকে ধর্মীয় ঐতিহ্য বলে অনেকে মেনে নেন। তাই ছাগলের দামও তুলনায় কিছুটা বেশি পড়ে তাদের।
বাংলাদেশে পশু সমাজের ছাগলের দাম ও সম্মান সবচেয়ে কম। এদেশে সবচেয়ে বেশি সম্মানীত প্রাণী হচ্ছে বাঘ। বাঙালিদের সবার ভেতর বাঘ হওয়ার একটি অবদমিত বাসনা কাজ করে। বাঘের মতো শিনা টান করে হাঁটে তারা। ভয় দেখাতে পেছন থেকে বাঘের মতো হালুম শব্দ করে। কাউকে প্রশংসা করে বলে- বাঘের বাচ্চা। বাঘ সমাজের সদস্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে সম্মানিত করে উপাধি দেওয়া হয়েছে জাতীয় পশুর। বাঘের চামড়া গায়ে দিয়ে বাঙালিদের জমিদারদের ছবি তোলার মতো নস্টালজিক সুখের স্মৃতি রয়েছে। পাকিস্তানে লোকজন ছাগলের চামড়া গায়ে পরে নস্টালজিক হয়। ছাগল সেখানকার জাতীয় পশু। বঙ্গে সম্মান না পেলে কি হবে পাকিস্তানে ছাগলরা দিন কাটাচ্ছে ইজ্জতে, আহ্লাদে। আমরা যেমন কাউকে বলি বাঘের বাচ্চা, পাকিস্তানে বলে ‘ছাগলের বাচ্চা’। বলে কিনা জানি না। জাতীয় পশুর ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে হলেও বলা দরকার- ছাগলের বাচ্চা।
এদেশে ছাগলের বাচ্চা একটি গালি। ছাগলামী, ছাগী ইত্যাদিও গালি। ইত্যাদি শব্দ বাংলা ভাষায় এবং অভিধানে আছেও। তবে ছাগল বিষয়ক শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় অনলাইনে। ব্লগে, অনলাইন মিডিয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ছাগু’ শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বাংলা শব্দ। যে বা যিনি স্বাধীনতা ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জেনে শুনে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়ায়, পাকিস্তানি মনোভাব ধারণ করে, রাজাকার বৃত্তীয় ছায়ায় থাকতে পছন্দ করে সেই ব্যক্তিকেই ছাগু বলে। এরা ইনিয়ে বিনিয়ে ব্লগে বা ফেসবুকে নানা কথা বলতে চায়। সহজ একটি কথাকে প্যাচাঁতে থাকে। এরা বক্তব্য শুরু করে এভাবে- “আমিও যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই, তবে... দিয়ে তারা ত্যানা প্যাঁচাতে থাকে। ব্লগের ভাষায় এটাকে বলা হয়- ল্যাদানো। ছাগলের বিষ্ঠা বা মল ত্যাগকে গ্রামে ল্যাদানো বলে। ”
ব্লগে ছাগুরা যত্রতত্র ল্যাদায়। বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধের কোনো পোস্ট বা লিঙ্কে তাদের তাদের ল্যাদানোর প্রবণতা সবসময় দেখা যায়। তাদের এই সব কাজের জন্য অনলাইনে ছাগু শব্দটি ব্যাপক জনপ্রিয়। বেশ কয় বছর ধরে শব্দটি বাংলা ভাষার অংশ হয়ে উঠেছে। অনলাইনে একটি দাবিও উঠেছে শব্দটি বাংলা একাডেমী অভিধানে সংযোজনের।
সর্বশেষ ২০০০ সালে বাংলা একাডেমী অভিধানে নতুন বাংলা শব্দ সংযোজনের কাজ হয়েছে। তারপর পুরো একযুগ বাংলা একডেমী কোন সংস্করণে যায়নি। বর্তমান অনলাইন মিডিয়ার যুগে বেশ কিছু শব্দ সংযোজন এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। ছাগু শব্দটি তো অবশ্যই...। হাল জমানার ডিজিটাল শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত হোক অভিধানে।
ছাগু শব্দটি ভাষার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পাক। যুক্ত হোক অভিধানে।
ছাগু (বিশেষণ)= নব্য রাজাকার। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যে বিভ্রান্ত বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায়। পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন তরুণ।
মনোয়ার রুবেল: ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
monowarrubel@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৩