মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াত। সোমবার বিকেলে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় দিলে মঙ্গলবারের হরতাল লাগাতার হরতালে পরিণত হবে বলেও জানিয়েছে জামায়াত। বিষয়টিতে অবাক হবার কিছু নেই। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত কাদের মোল্লার পক্ষে রায় দিতে হবে – এমন দাবি করবে যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক শক্তি জামায়াত-শিবির – এ তো সবারই জানা। তবে এদের ঔদ্ধত্য বিস্ময়কর। আরো বিস্ময়কর ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পুলিশি নিরাপত্তায় জামায়াত বিক্ষোভ সমাবেশ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেই এ নিয়ে কৌতূহল, যা এখন উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।
বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় , সোমবার সকালে জামায়াত সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল করে ট্রাইব্যুনাল এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশ্লীল স্লোগান –বক্তৃতা দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্য জেহাদ ঘোষণা করলো। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার মুহূর্তে জামায়াতের তাণ্ডব বেড়েছে। জামায়াত-শিবিরের এই সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ব্যাপকভাবে এবং প্রকাশ্যে শুরু হয় গত নভেম্বরে।
এ পর্যন্ত পুলিশি অভিযানে জামায়াতের বেশ কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। তবে এটাই সত্যি ,জামায়াত -শিবিরের নির্বিঘ্ন সমাবেশ পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বারবার।
পেছন ফিরে তাকাতে হয়, সারাদেশে একসাথে হামলা হয়েছিল বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট । জঙ্গী সংগঠন জেএমবি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৬৩টিতে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ৫০০ বোমা হামলা করে। জামায়াতের ধর্মব্যবসায়ীরা এখন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই হামলা চালাচ্ছে। তাদের ঔদ্ধত্য বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে, তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এখন আর রাখঢাক নেই। প্রকাশ্যেই তারা দাবি তুলেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে তাদের নেতাদের চলমান বিচার বন্ধ করতে হবে; একাত্তরের ঘাতকদের মুক্তি দিতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ তার চারদলীয় জোটের অন্যতম শরীক অন্যান্য জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধে সমর্থন দিতে এতোটুকুও দ্বিধান্বিত নন ।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আসামিদের পক্ষে কাজ করছে চিহ্নিত কিছু গণমাধ্যম। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী শক্তি জামায়াতের পক্ষে কোনো গণমাধ্যমের এমন প্রকাশ্য অবস্থান দুর্ভাগ্যজনক।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আসামিদের তথাকথিত ‘সুষ্ঠু বিচার’-এর পক্ষে পশ্চিমা দেশগুলোর সুস্পষ্ট সমর্থন জানিয়ে প্রকাশ্য অবস্থান জামায়াতকে যেন আরো মরিয়া করে তুলেছে।
জামায়াত নেতারা ভালোই জানেন, মধ্যপ্রাচ্যের আর্থিক সহায়তা পেলেও মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশেও প্রকাশ্যে ধর্মপ্রচার , যা বাণিজ্যের পর্যায়ে পড়ে, বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও এসব দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা এক ধরণের বাণিজ্যেরই নামান্তর বটে ।
ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ওআইসির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৭। মুসলমানপ্রধান দেশগুলোর পাশাপাশি পশ্চিম আফ্রিকার কতগুলো দেশ ওআইসির সদস্য, যেখানে মুসলমান জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। এদের মধ্যে নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, আইভরিকোস্ট, ক্যামেরুন অন্যতম। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম সদস্য দেশ ।
সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ তার সাম্প্রতিক একটি লেখায় প্রশ্ন করেছেন, এই ৫৭টি দেশের কোনো একটিতেও কি বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের মতো এমন সন্ত্রাস, তাণ্ডব সম্ভব হতো? তার গবেষণানির্ভর লেখাটি আমাকে এই লেখায় উজ্জীবিত করেছে। শ্রদ্ধাভাজন মহিউদ্দিন আহমেদ আরো প্রশ্ন করেছেন, সৌদি আরব, বাহরাইন, আরব আমিরাত, কুয়েত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা অন্য কোনো দেশে ও এ ধরণের তাণ্ডব সম্ভব হবে কি?
যে মিসর নামের দেশটিতে জামায়াতে ইসলামের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর জনক ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ (ইখওয়ানুল মুসলিমুন)-এর জন্ম সেই মিসরে এখন কি হচ্ছে?
মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন সক্রিয় নেতা থাকলেও এই পার্টির নমিনেশনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেন নি গত বছর, কারণ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ নিষিদ্ধ ছিল তখন। তাই নতুন এক রাজনৈতিক দল “ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস” নামের রাজনৈতিক দলের আড়ালে মোহাম্মদ মুরসিকে প্রার্থী হতে হয়।
আমাদের দেশেও ’৬০-এর দশকের ইসলামী ছাত্রসংঘ এখন ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াতের উত্তরসূরী হিসেবে তারা রগ কেটে , জবাই করে এ দেশের নিরীহ মানুষের রক্তে উল্লাস করে। এখন নিরীহ বাসযাত্রী, পথচারী আর পুলিশের উপর ‘আরাম করে’ হামলা করে উল্লাস করছে বারবার।
বঙ্গবন্ধুর আমলে জামায়াত পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল; জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতে ইসলাম ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির নামের আড়ালে কিছুদিন তৎপরতা-অপতৎপরতা চালিয়েছে। এই আমলেই গোলাম আযম এবং জামায়াতের প্রত্যাবর্তন।
১৯২৮ সালে হাসান আল বান্না নামের এক মিসরীয় ইসমাইলিয়া শহরে “মুসলিম ব্রাদারহুড” নামের সাম্প্রদায়িক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই “মুসলিম ব্রাদারহুড” এর আদর্শে দুনিয়ার বিভিন্ন, মূলত মুসলমান প্রধান দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন।
১৯৪১ সালে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ এর অনুকরণে মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী লাহোরে প্রতিষ্ঠা করেন জামাত-ই-ইসলামী। বাহরাইনে এর নাম ‘আল মেনবার ইসলামিক সোসাইটি’, জর্দানে ‘ইসলামিক অ্যাকশন পার্টি’। এককালে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো এবং সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল যেমন দুনিয়ার সোশ্যালিস্ট পার্টিগুলোর কার্যকলাপ, প্রোগ্রাম সমন্বয়, তদারকি করতো- মুসলিম ব্রাদারহুড ও বিশ্বজুড়ে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিস্তৃতিতে সেই ধরণের তদারকি করে।
ঘোরতর সাম্প্রদায়িক এই ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ পছন্দ করে না ফিলিস্তিনি ফাতাহ সংগঠন বা “প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন” পিএলওকে। এ কারণে জামায়াত কখনো ইয়াসির আরাফাত এর নেতৃত্ব অথবা প্যালেস্টাইনের জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে সমর্থন দেয় নি।
কারণ, ফাতাহ এবং পিএলও সেক্যুলার, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছরের মধ্যে এই সংগঠনটির সন্ত্রাসী চরিত্র প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৮ সালে মিসরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আননকশি পাশাকে হত্যার অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। প্রতিশোধে ১৯৪৯ সালে হত্যা করা হয় ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নাকেও ।
১৯৫৪ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট এবং আরব জাতীয়তাবাদের জনক জামাল (সতান্তরে ‘গামাল’)আব্দেল নাসেরকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে এই দলটি। নাসেরের বিরুদ্ধে এমন আর এক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচার হয় ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর আর এক শীর্ষ নেতা এবং চিন্তাবিদ সাঈয়েদ কুতুবের। বিচারে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তার ফাঁসি হয় ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।
এই প্রসঙ্গে পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে হয়, অবিভক্ত ভারতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীকেও ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল লাহোরের একটি আদালত, ১৯৫৩ সালে। আহমদীয়াদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার উস্কানি দেয়ার অপরাধে মওদুদীর ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। । কিন্তু পরে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমউদ্দিন মওদুদীকে ক্ষমা করে দেন, ক্ষমা করেননি জামাল নাসের সাঈয়েদ কুতুবকে।
‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ এবং বিভিন্ন দেশে তাদের ছায়াদলগুলো মানুষকে সম্মান দিতে জানে না। তারা সংখ্যালঘুদের সমানাধিকারেও বিশ্বাস করে না; মহিলাদের শ্রদ্ধা জানানোতেও বিশ্বাস করে না । মুসলিম ব্রাদারহুড তথা বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির একই, শুধু ‘সেক্স অবজেক্ট’ বা পুরুষের ‘ভোগের বস্তু’ হিসেবেই তারা মহিলাদের দেখে থাকে।
মিসরের ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের এক শীর্ষ নেতা--এখন মিসরের প্রেসিডেন্ট-- মোহাম্মদ মুরসি গত সপ্তাহে মিসরীয়দের বিক্ষোভ দমনে, পোর্ট সাঈদ, পোর্ট সুয়েজ এবং ইসমাইলিয়া শহর তিনটিতে ‘কারফিউ’ জারি করেছেন; তার আগে পুলিশের গুলিতে মাত্র দিন কয়েকের মধ্যেই ৩৫ মিসরীয় নিহত হয়েছে।
মিশরের এই বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং কারফিউ জারির তাৎক্ষণিক কারণ পোর্ট সাঈদ শহরের ফুটবল দল ‘আল মাসরি’র ২২ সমর্থককে মিসরের একটি আদালত গত সাপ্তাহে ফাঁসির আদেশ দেয়। তাদের অপরাধ, এক বছর আগে স্থানীয় এই ফুটবল দল ‘আল মাসরি’ এবং কায়রোর ফুটবল দল ‘আল-আহলী’র মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচ শেষে দাঙ্গা, সংঘর্ষ এবং পায়ে চাপা পড়ে ৭৩ জনের প্রাণহানি। দণ্ডপ্রাপ্তরা সকলেই পোর্ট সাঈদের মানুষ। তারা এখানকার এক জেলে বন্দী। তাদের ছাড়িয়ে আনতে স্থানীয় জনতা জেলে হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রেসিডেন্ট মুরসি এসব কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে জরুরি অবস্থাও জারি করেন মুরসি।
মিসরের সাম্প্রদায়িক ‘জামায়াতি সরকার’ পুলিশি হামলা-জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে অস্থিতিশীলতা দমন করে তাদের দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অজুহাতে।
কিন্তু বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাস চালাচ্ছে প্রকাশ্যে; পেট্রোল বোমা হাতে নিয়ে তারা শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের তাড়া করছে। ঘরবাড়ি, যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। মিসরে জামায়াতি সরকার বিক্ষোভ দমনে যা করছে, তা জামায়াতি সন্ত্রাসীদের কি জানা নেই?
মহিউদ্দিন আহমেদের সাথে আমারও প্রশ্ন প্রেসিডেন্ট মুরসির প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের ওপর প্রয়োগ করাই কি যৌক্তিক নয়? এতদিনে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস দমন করা যেতো।
সন্ত্রাসী এ গোষ্ঠী সরকারে থাকলেও জনগণকে শান্তিতে থাকতে দেবে না, বিরোধী দলে থাকলে ও সাধারণ মানুষের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
মহাজোট সরকারের এই শাসনকালে অন্ধকারের এই শক্তি দমনে কঠোর হতে হবে। পুলিশের একটা বড়ো অংশ কি জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক? নাকি নীতিনির্ধারকদের মধ্যেই জামায়াতি ভূত ঘাপটি মেরে আছে?
প্রেসিডেন্ট মুরসীর প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের ওপর প্রয়োগ করলে এতদিন অনেক জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী পুলিশের গুলিতে মারা পড়ত।
সৌদি আরবের দীর্ঘ তিরিশ বছরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম প্রিন্স নায়েফ এই মুসলিম ব্রাদারহুড সম্পর্কে বলেছেন, ইসলামী দুনিয়ার সকল সমস্যার উৎস হচ্ছে এই মুসলিম ব্রাদারহুড। এই মুসলিম ব্রাদারহুড সম্পর্কে তার আরও কিছু কঠোর কথাবার্তা আছে। কঠোর কথাবার্তা আছে ওমানের শাসক সুলতান কাবুসেরও। বস্তুত যেখানেই মুসলিম ব্রাদারহুডের ছায়া গিয়েছে সেখানেই ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস হয়েছে। বাংলাদেশেও তা এখন নোংরাভাবেই আমরা দেখছি। ’
কোনো দেশের ভেতরেও যদি কোন সংগঠন সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে, তার সমর্থন কেউ কোথাও করবে না। জামায়াতের সন্ত্রাসও দুনিয়ার সকল সচেতন মহল নিন্দা করবে। কারণ গণতন্ত্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সরাসরি সাংঘর্ষিক সম্পর্ক। পাকিস্তানের এবং বাংলাদেশের মিলিটারি শাসকদের সাথে জামাতের ঘনিষ্ঠতা আমরা বার বার লক্ষ্য করেছি।
জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মিথ্যাকে কেমন আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে তার উদাহরণ দেখলাম গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিবিসি বাংলার খবরে। জামায়াতের এক নেতা সফিকুল ইসলাম মাসুদ বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে বলছিলেন, জামায়াত-শিবিরের কেউ কোনো বাস-ট্রাকে বা কোথাও আগুন দেয় না। আগুন দেয় সরকারের লোকজন, মানুষজনের কাছে জামায়াত-শিবিরকে হেয় করতে; জামায়াত-শিবিরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে। ইসলাম ও রসুলের (স.) নামে এরা রাজনীতি করে, দেশে শরিয়াহ শাসন তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ নির্জলা মিথ্যা বলতে এদের এতটুকু লজ্জা, সঙ্কোচ, শরমবোধ নেই।
মানুষ টিভিতে দেখে জামায়াত-শিবির পুলিশকে মারধর করছে, বাসে আগুন-বোমা ছুড়ছে, রিকশা উল্টে দিচ্ছে, বাস থেকে ড্রাইভারকে নামিয়ে চারদিক থেকে কিল-ঘুষি মারছে । এর সবই নাকি সরকারের এজেন্টদের কাজ।
আমাদের মহানবী (স.) সত্যবাদী ছিলেন বলে তাঁকে ‘আল-আমিন’ উপাধি দেয়া হয়েছিল। আর তাঁর তথাকথিত এই অনুসারীরা ইসলাম এবং সুন্নাহকে কেমন অপবিত্র করে চলেছে, কোনো অপরাধবোধ ছাড়া!
মহিউদ্দিন আহমেদের প্রশ্ন এখানে হুবহু তুলে ধরলাম- এমন সন্ত্রাস যে আর কোন দেশেই, রাজতন্ত্র-গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র কোথাও সম্ভব নয় এই বিষয়টা চ্যানেল ৭১-এর ‘টকশো’ বা অন্য কোনো আলোচনায় আসেনি কেন? ইসলামী ঐক্য জোটের একনেতা, জামায়াতিদের এক ...মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে এখন পর্যন্ত চ্যানেল ৭১-এর কোনো টক শো বা আলোচনা অনুষ্ঠানে দেখছি না কেন? জামায়াত-শিবিরকে এক্সপোজ-উন্মোচন করার এমন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতা আর কোনো বাংলাদেশী ধর্মীয় নেতার মধ্যে দেখি নি।
এমন বিদগ্ধজনের এ প্রশ্ন তোলার পর আমার এখানে কিছু আর বলার থাকে না।
তবে সবশেষে একটি কথা না বললেই নয়, এ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে শনাক্ত করতে হবে জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকদের। একাত্তরের খুনিদের বিষদাঁত ভেঙ্গে না দিলে একাত্তরের মতো আবারো রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবে এই খুনিরা। গণমাধ্যম তাদের দায়িত্ব পালনে আগের চেয়ে অনেক সতর্ক। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল সঠিক সিদ্ধান্তগ্রহণে ব্যর্থ হলে তার দায় বইতে হবে গোটা জাতিকে।
লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, Sumikhan29bdj@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর