ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

নীল শূন্যতা বিলিয়ে চলে গেলেন আবিদ রহমান

শাফিন রাশেদ, সিডনি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৩
নীল শূন্যতা বিলিয়ে চলে গেলেন আবিদ রহমান

গত পরশু অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি ফোন করেছিলাম আবিদ ভাইকে। অস্ট্রেলিয়া সময় রাত আটটা হবে ।

জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সদ্য প্রকাশিত বইটি আমরা অস্ট্রেলিয়ায় কবে পাচ্ছি? সিডনি বইমেলা ২৪ ফেব্রুয়ারি, তার আগে আসবে তো? আবিদ ভাই নিশ্চিত করলেন এবং বললেন, বই আসছে , ‘বাঙালি রাইটার্স গিল্ড, অস্ট্রেলিয়া’র স্টলে অবশ্যই আমার বই পাবেন। এরপর উনি যা বললেন, তাতে আমার মন খারাপ হল।

প্রায় দু’মাস আগে আবিদ ভাই এনজিওগ্রাম করিয়েছিলেন, ৪টা ব্লক ধরা পরেছে। ডাক্তাররা বলেছেন ‘বাইপাস’ করাতে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল মাত্রাতিরিক্ত ব্লাড-সুগার। সকালে অতি কম থাকলে, বিকালে থাকত অতি বেশি। কিন্তু আসল সমস্যাটা বাঁধল অন্য খানে। আবিদ ভাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না, অপারেশন কোথায় করাবেন, অস্ট্রেলিয়ায় না সিঙ্গাপুরে?

আমি ডাক্তার হওয়ায় বুঝছিলাম তাঁর বিপদের পরিমাণটা। তাকে বললাম, ভাই, আপনি এখন কোথায়? ৪টা ব্লক নিয়ে আপনার তো থাকার কথা হাসপাতালে। আপনি হাসপাতালে ভর্তি তো। উত্তরে উনি হাসলেন। বললেন, আরে, কিছু হবে না। আর হলেই বা কী, সুতোর ওপারে কে না যাবে? তা ঠিক, আমি বললাম, কিন্তু যাবার জন্য তাড়াহুড়োর দরকারটা কী? উত্তরে আবিদ ভাই আবার হাসলেন। এই হল আবিদ ভাই, কোন অবস্থাতে যিনি নিজেকে নিয়ে ভাবতেন না। ভাবতেন বন্ধুদের নিয়ে, শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে, দেশ নিয়ে ।

শাহবাগের প্রজন্ম স্কয়ারের গণজাগরণ নিয়ে আবিদ ভাই ইদানীং ফেসবুকে খুব লিখছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে অসাধারণ সব বাক্য। খুব অবাস্তব লাগে যখন ভাবি, আমাদের জন্য আবিদ রহমান আর লিখবেন না ।  

সদা হাস্যোজ্জল, সজ্জন এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক একজন আবিদ রহমান হঠাৎ চলে গেলেন, না ফেরার দেশে। আমরা কেউ জানলাম না, কী অভিমানে হঠাৎ এই অকাল চলে যাওয়া। শুধু বুকের মধ্যের নীল শূন্যতা আমাদের ক্রমশ: বেড়ে বড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময় ২১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৩

এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।