ঢাকা: জামায়াত-শিবির চায় হিংস্র হয়ে উঠি আমরা। রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে জ্বালিয়ে দেই-পুড়িয়ে দেই সবকিছু।
সেই পথ বেছে নিয়েই তাদের ‘গণমাধ্যম’, তাদের ‘মানুষ’, তাদের সাইবার নেটওয়ার্ক দিয়ে নানা কৌশলে উস্কানি দিচ্ছে অনবরত। তারা চাইছেই, সহিংতায় রূপ নিক শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন। তারা চাইছেই, আমরাও তেমন কিছু করি।
কিন্তু, আমরা তা করব না। কারণ আমরা জানি শান্তি কি, সম্প্রীতি কি, অহিংসা কি! আমরা জানি, অহিংস আন্দোলনের ফলাফল। আমরা ভাল-মন্দে, সত্য-মিথ্যায়, ন্যায়-অন্যায়, শান্তি-অশান্তির তফাৎ করতে জানি। বাংলার দামালেরা জানে, কখন কি করতে হয়, হবে? তার প্রমাণ দিয়ে গেছেন রাজীব, শান্ত।
আমরা অধিকার কেড়ে নেই না, আদায় করতে জানি। আমরা অন্ধকারে আঘাত হানি না, আলোয় আলোকিত হয়ে উদ্দীপ্ত হই, জাগরণ তৈরি করি। আমরা মা-মাটি-দেশকে অন্যের হাতে তুলে দেই না, রক্ষা করি, সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি।
আমরাও যদি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে জ্বালাও-পোড়াও করি, খুন-জখম করি তাহলে জামায়াত-শিবিরের অনেক লাভ। ওদের লাভ বেশ কয়েকটি কারণে।
প্রথমত, সহিংসতার (রগ কাটা-গলা কাটায়) ওপর জামায়াত-শিবির কর্মীদের যে প্রশিক্ষণ, তা আমজনতার নেই। এমন আক্রমণে ওদের কর্মীদের সাথে পেরে উঠতে পারব না আমরা- এ ধারণা থেকেই এমন উস্কানি।
দ্বিতীয়ত, ‘জীবন বাজি রেখে হয় মরবো, নয় মারব’ এ জাতীয় যে মানসিকতা কর্মীদের মগজে নানা কায়দায় ঢুকিয়ে দিয়েছে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতারা। যা হয়তো আমাদের মগজে নেই।
কিন্তু ওরা জানে না, বাঙালির হয়তো প্রশিক্ষণ নেই, আত্মবিশ্বাস আছে। হয়তো দৃশ্যমান অস্ত্র নেই, কিন্তু সাহস আছে। হয়তো জেহাদি স্লোগান নেই, কিন্তু দীপ্ত অঙ্গীকার, দৃঢ় মনোবল ঠিকই আছে। সামনে এসেই দেখুক, কত মানুষ প্রতিরোধে, প্রতিবাদে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত।
জামায়াত-শিবির যদি ভাবে, এভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে, উস্কানি দিয়ে আমাদের একতাকে গুড়িয়ে দিতে পারবে, তবে তারা ভুল করছেন। যদি তারা ভাবে এই আন্দোলনকে ইসলাম বিরোধী আন্দোলন বলে চালিয়ে দিতে, তবে তারা আরো বড় ভুল করবেন। যদি তারা ভাবে যে গুটি কয়েক গণমাধ্যম, কয়েকজন কর্মী আর কিছু ভণ্ড নেতার বয়ান দিয়ে আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে পারবে, তবে তারা ভুল করছেন।
তবে হ্যাঁ। একটা বিষয় তারা ভালো করছেন। তা হলো, এই আন্দোলনটাকে যে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন, তার জানান দিয়ে। তাদের অপপ্রচারই এই আন্দোলনের প্রচার। এ আন্দোলনের বড় জয়। তাদের হরতাল আহ্বান, গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে মিথ্যা খবর প্রচারই বলে দেয় এ আন্দোলন ওদের ভয় পাইয়ে দিয়েছে। মানসিকভারে হেরে গিয়েছেন তারা। কেবল দম্ভ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জামায়াত-শিবিরের মুন্ডুবিহীন নেতারা।
মুন্ডুবিহীন রাজনীতিতে যা হয়, ঠিক তাই করছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। শাহবাগের অহিংস আন্দোলনকে সহিংসতার আন্দোলনে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে তারা। যে কোন মূল্যে আন্দোলনকারীদের থামিয়ে দিতে তৎপর সন্ত্রাস প্রিয় এই দলটি। শুধু তাদের জন্য কবির ভাষায় বলতে চাই----
প্রবল অটল বিশ্বাস যার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে
যৌবন যার জীবনের ঢেউ
কলতরঙ্গে হাসে
মরা-মৃত্তিকা করে প্রাণায়িত
শস্য কুসুমে ফলে
কোনো বাধা তার রোধে নাকো পথ
কেবলি সম্মুখে চলে। ।
সাজেদা হক: সহকারি বার্তা সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশন