একজন বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। বৈবাহিক সূত্রে তিনি এমন একটি পরিবারের সদস্য, আমাদের স্বাধিকার আর স্বাধীনতার সংগ্রামে যে পরিবারের রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা।
আমাদের আর দশজনের বাবার মতো আমার বন্ধুর বাবাও অবসর জীবন যাপন করছেন। বাড়ির পাশের মসজিদে গিয়ে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। বন্ধুটির ধারনা হয়তো মসজিদে বা যাওয়া আসার পথে কেউ সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে সরলমনা মুসুল্লীদের মধ্যে এ ধারনাটি প্রোথিত করে দিচ্ছেন। আমার বন্ধুর বাবা বয়োবৃদ্ধ হয়েছেন। বিতর্ক করলে তিনি কষ্ট পাবেন বিধায় বন্ধুটি বিতর্ক এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে একটা বিষন্নতা আর দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে।
সত্যিইতো। এমরান এইচ সরকার কি দেশ চালাচ্ছে! জাতীয় পতাকা উড়ানোর ঘোষনা দেয়ার তিনি কে? তিনি কি প্রধানমন্ত্রী? এ ব্যাপারে সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই বা কি?
প্রিয় পাঠক, কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্রকারীরা সব ফ্রন্টেই তাদের ষড়যন্ত্রে কূট কৌশল অব্যাহত রেখেছে। প্রথমে একজন ব্লগারের একাউন্ট মরোনোত্তর হ্যাক করে তার নামে অপবাদ দেয়া হলো যে তিনি নাস্তিক এবং মহানবীকে (সঃ) অপমান করে মন্তব্য করেছেন। একশ্রেণির মানুষ তাতে বিভ্রান্ত হলো, এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সেই বিভ্রান্তিতে ইন্ধন দিলেন। পবিত্র মসজিদে গিয়ে মিথ্যা উস্কানি দিয়ে মুসুল্লিদের বিভ্রান্ত করে, তাদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যাবহার করে দেশব্যাপী তান্ডব চালানো হলো। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর আর উপাসনালয়ে হামলা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানী দেওয়া হলো। তাতেও আশানুরূপ ফল না পেয়ে এখন খোলা হয়েছে ষড়যন্ত্রের নতুন ফ্রন্ট।
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সারা দেশে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে তার সংগঠকদের সাথে সরকারের দূরত্ব ও অবিশ্বাস সৃষ্টির দূরভিসন্ধি নিয়ে কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর। তারা গুজব ছড়াচ্ছে, জনমনে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের বীজ বপন করছে, বিভিন্ন প্রশ্ন প্রোথিত করছে গোপনে, সন্তপর্ণে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত সরকার, তরুন প্রজন্ম, মুক্তবুদ্ধির মানুষ নিজদের ভুলবোঝাবুঝি আর অভিমানকে পাশ কাটিয়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য অব্যাহত রাখতে না পারলে কাশিমবাজার কুঠির রায় দূর্লভ, উমিচাঁদ আর জগৎশেঠেরাই জয়ী হবে। তার জেগে আছে। তরুন প্রজন্মের ঘুমানোর সুযোগ নেই।
আমাদের কাজটি শুরু করতে হবে নিজেদের বাড়ি থেকে। দূর্বৃত্তদের গুজবে বা ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারে যাতে আমাদের নিজেদের পরিবারের কেউ বিভ্রান্ত হতে না পারেন সে ব্যাপারে আমাদেরই সজাগ থাকতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের সচেতন করা আমাদের সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার বন্ধুকে সেই পরামর্শই দিয়েছি।
সত্যিইতো, ইমরান এইচ সরকার আমাদের জাতীয় পতাকা উড়ানোর নির্দেশ দিতে পারেন না। তিনি তা দেনওনি। তিনি আহ্বান করেছেন আন্দোলনকারী প্রজন্মের পক্ষে, অনুরোধ করেছেন। তিনি তা করতেই পারেন। এই আন্দোলন সরকারের শক্তি এবং অবস্থানের পরিপূরক। সরকারের সাথে এই আন্দোলনের কোন সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। কাশিম বাজার কুঠির রায় দূর্লভ আর উমিচাঁদরা যে প্রশ্ন জনমনে প্রোথিত করছে তা আশু উপড়ে ফেলা জরুরি।
shuvo.sharif@gmail.com
বাংলাদেশ সময় ২১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৩
এমএমকে