শাহবাগ- “আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি”। কথাটির খানিকটা সংশোধন প্রয়োজন কারণ আমরা “তোমাদের” সঙ্গে নয় আমরা “আমাদের” সঙ্গেই আছি, নয় কি? শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে যারা গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাগ্রত করেছে ঘুমন্ত বাঙ্গালির জাতীয় সত্ত্বা, যারা শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয়, ফাঁসি চায়; যেই শিবির দেশের পতাকা ছেঁড়ে, পতাকা পোড়ায়, যেই রাজাকার শহীদ মিনার ভাঙ্গে, যেই দেশদ্রোহী বই মেলায় আগুন জ্বালায়, যেই জামায়াত পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে, ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয় আমাদের স্বাধীন দেশের মাটিতে, তাদেরই বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার কন্ঠে উচ্চারণ করে “জামায়াত, শিবির, রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়” তারা কি আমাদের থেকে ভিন্ন? তাদের চিন্তা, চেতনা, নীতি, আদর্শ, বোধ, দাবি কী আমাদের থেকে আলাদা? না, নিশ্চয়ই না, অবশ্যই না, কখনই না।
নাহলে হয়তো ইতিহাসের এই মুহূর্ত প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে আমাদের উত্তরসূরিদের কাছে।
ওদের যেন আমাদের মতন স্বাধীনতার ৪২ বছর পর “সঠিক” ইতিহাস হাতড়ে বেড়াতে না হয়। ওরা যেন নিজেদেরকে সেই ব্যর্থ জাতির অংশীদার মনে না করে যে জাতি “জয় বাংলা” উচ্চারণ করার আগে প্রশ্ন করে এইটা কোন দলের স্লোগান? আওয়ামী লীগ না বিএনপির? যে জাতি, জাতির জনককে শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতা বা ব্যক্তিত্ব বলে সম্মোধন করে, তাঁকে নির্দলীয় বলে, জাতীয় সম্পদ বলে একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে সঠিক মূলায়্যন করতে পারে নি, যে জাতি ধর্মের নামে অধর্ম চর্চা করতে দেয় গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে, আমরা যেন ওদেরকে সেই ব্যর্থতা, অপারগতা, অপূর্ণতা-মুক্ত করে যেতে পারি।
চলুন আমরা, এই প্রজন্ম, অতীতের সেই অপূর্ণতাগুলো এমন মজবুতভাবে শক্ত হাতে পূরণ করি যেন সেখানে কোন ভাগ, প্রশ্ন, বা সংশয় না থাকে। যেন আমাদের উত্তরাধিকার দৃঢ়তার সঙ্গে সর্বদা উচ্চারণ করতে পারে “জয় বাংলা” “জয় বঙ্গবন্ধু” একটি বাস্তবে, সত্যিকার অর্থে ধর্ম নিরপেক্ষ ভূখণ্ডে সেই সততার সঙ্গে, সেই বোধের সঙ্গে, সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যেই চেতনা আমাদের ৫২র ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করার শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। যেই শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করে আমরা আজ ২০১৩তে শুধু ঢাকার রাজপথ নয়, সমগ্র পৃথিবীকে গড়ে তুলেছি একটি রাজপথ হিসেবে, আমাদের রাজপথ হিসেবে। চলুন আমরা সজীব থেকে, সচেতনতার সঙ্গে, সুসংগঠিত রূপে আবার আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের ভাষা, আমাদের বর্ণমালা, আমাদের সত্ত্বা, আমাদের মা, আমাদের দেশের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করে সেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারি, যে বিজয় আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করবে ও বাস্তবায়িত করবে। রাজাকার মুক্ত শুধু নয়, দেশদ্রোহী মুক্ত একটি সুস্থ, শিক্ষিত, উন্নত, অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা প্রত্যেকে যেন এক মুহূর্ত শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি আমাদের এই বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ সময় ০৮০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৩
এমএমকে