১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে এবং জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ তার নিজ দলের নেতাদের বাঁচাতে কখনো অর্থ খরচ, কখনো আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ, কখনো অন্য দেশের রাস্টপতিকে দিয়ে চিঠি লিখিয়ে, কখনো পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ মন্ত্রীকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে, দেশব্যাপী একের পর এক হরতাল দিয়ে, সহিংসতা চালিয়ে হত্যা, খুন, অগ্নিসংযোগ, প্রকাশ্যে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেস্টা করে এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আত্মঘাতি হামলার গুজব ছড়িয়ে দেশ জুড়ে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
কথিত আছে বিভিন্ন ক্ষমতাবান ব্যক্তির সাথে আঁতাত করারও চেস্টা করেছে।
ওই রায়ে দেশের সাধারন মানুষ সংক্ষুব্ধ। তরুণ প্রজন্মের ডাকে আপামর জনসাধারণ রাস্তায় নেমে আসে। লাখো জনতা সমবেত হতে থাকে শাহবাগে। শাহবাগ পরিণত হয়ে জনসমুদ্রে। ব্লগার এবং ফেইসবুক এক্টিভিস্টরা একের পর এক নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টিকারী কর্মসুচির মাধ্যমে দেশের মানুষকে ভয়ের জগত থেকে মুক্ত করে আনে। তরুণরা সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, অহিংস চেতনার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের আহবানে অভূতপূর্ব সাড়া দেয়। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে জেগে ওঠে দেশপ্রেম। প্রবাসীরাও একাত্মতা ঘোষণা করে। ইতোমধ্যে ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়। কিন্তু হত্যা নির্যাতন করে তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনকে এক মুহূর্তের জন্যও দমাতে পারেনি। দাবি তাদের একটাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই।
আন্দোলনের ২৩তম দিনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হলে জামায়াত ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির কখনো নিজেদের নামে কখনো বেনামে অন্য দলের সাথে সামিল হয়ে বিভিন্ন রকম নাশকতা চালানো শুরু করে। নানা রকম ধবংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জামায়াত শিবির আবারো ভয়াবহতম সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে। জামায়াত ইসলামী তাদের কথিত গৃহযুদ্ধ কিংবা সহিংসতা পুরোদমে শুরু করেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- জামায়াত ইসলামী এসব করছে কেন? তারা কি শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে রাজপথে প্রতিবাদ জানাচ্ছে? নাকি তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? তারা কেন প্রতিদিনই একের এক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে? অনেকেই মনে করছেন, জামায়াত ইসলামী এখন তার তুরুপের শেষ তাসটি খেলছে। কয়েকদিন আগে জামায়াত শিবিরের সমর্থক একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, একটা উল্লেখযোগ্য সময় ধরে দেশব্যাপী সহিংসতা চালাতে পারলে বিএনপি তাদের পূর্ণ সমর্থন দেবে এবং একই সাথে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এসব কথাকে তখন নিছক কথার কথা মনে করে পাত্তাই দেইনি। কিন্তু খালেদা জিয়ার (সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পর) বিবৃতি শুনে হতবাক হয়ে গেছি। অক্ষরে অক্ষরে সব ঘটে গেছে। এ পর্যন্ত যেসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছে তার প্রায় সব গুলো এলাকাই জামায়াত অথবা বিএনপি অধ্যুষিত (ফেনী, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, বগুড়া)। কিন্তু আওয়ামীলীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত কোনো এলাকায় জামায়াত কোনো রকম তৎপরতা চালাতে পারেনি। তার মানে কি? গণপ্রতিরোধের ভয়ে তারা তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকাকে বেছে নিয়েছে। এছাড়া একদিন ঢাকায় দুই দিন ঢাকার বাইরে হামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। উপরোক্ত স্থানগুলোর দিকে নজর দিলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, এরপর তারা কোথায় কি ধরনের নাশকতা চালাবে?
কিন্তু এরপর কি হতে পারে? তারা হয়তো মনে করছে, আগামী দুই এক সপ্তাহ যদি ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা চালাতে পারে তাহলে দেশে সেনাবাহিনী নামানো ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করার চেস্টা তো আছেই। তাই ১/১১ পরিস্থিতি সৃষ্টি করাটাই এই মুহূর্তে জামায়াতের অভীষ্ট লক্ষ্য। কোনোভাবে যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় সামরিক শক্তিকে আনা যায় তাহলেই কেবলমাত্র শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ উৎখাত করা যাবে। ট্রাইবুন্যালের কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে। তখন যুদ্ধাপরাধীদেরকে তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকো’র মতো চিকিৎসার্থে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
কিন্তু আওয়ামীলীগ এবং তার সমমনা দলগুলো কি ভাবছে? আওয়ামীলীগ তো ১৯৭৩-৭৪ সালে সর্বহারাদের শক্ত হাতে দমন করতে পেরেছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীদেরকে পথে আনতে পেরেছে। বৃহত্তর কুস্টিয়া, ঝিনাইদহসহ দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের দমন করতে পেরেছে। এবার কি আওয়ামীলীগ সরকার সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারবে? যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামায়াত ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে পারবে? তাদেরকে কি সমূলে ধবংস করতে সক্ষম হবে? সেটাই দেখার বিষয়। দেশের মানুষ অপক্ষার প্রহর গুনছে।
শাখাওয়াৎ নয়ন, ব্লগার, ঔপন্যাসিক, পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ সময় ১০২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৩