বাংলাদেশের বর্তমান যে অবস্থা এটা কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে আমারও সংশয় আছে। কিন্তু আমি হতাশ না।
আজ এই পজিটিভ চিন্তার বড় অভাব লক্ষ্য করছি। বড় ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ আপনারাও ‘অল ইজ ওয়েল’ বলেন। দেখেন সব ঠিক হয়ে যাবে। জাদু না, এটাই সত্যি। ভালো চিন্তা মানুষকে সাহসী করে, উদ্যোগী করে তোলে-এটা আমার বিশ্বাস। ভালো চিন্তা মানুষকে সুপথেও নিয়ে আসে। আপনার হতাশা আমার মধ্যেও ছড়াবেন না প্লিজ।
সাঈদীর জন্য আত্মাহুতি দিতে নিজেরাই নিজেদের হত্যা করে দেশকে জামায়াত-শিবির মুক্ত করছে প্রতিপক্ষরা। এটা তো ভালো কথা। আমরা তো হাতিয়ার হাতে নেই নি। ওরাই নিয়েছে, ওরাই নিজেদের মারছে ও মরছে। আর যারা বেছে আছেন বা থাকছেন শুনেছি তারাও নাকি প্রস্তুত বাকি নেতাদের জন্য জীবন দিতে। ডালের আগায় বসে গোড়া কাটছেন আর কি! সুতরাং শিবির কর্মীদের ‘প্রতিহত’ করার পরিকল্পনা করার কোন দরকার নেই আসলে। তারা নিজেরাই তো নিজেদের মারার পরিকল্পনা করছে। সুইসাইড স্কোয়াড, শহীদ, গাজী...কি কি সব নাম দিয়ে রাত দিন পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা করছে। তথাকথিত ‘নেতা’দের নামে দিয়ে দিচ্ছে নিজেদের ‘অমূল্য’ জীবন
অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। এটাও তো আশার কথা। সবাই কর্ম অনুযায়ী ফল পাবেন। সর্বোচ্চ শাস্তিও পাবেন নিশ্চয়। আর বাকী থাকবে একটি দলের কর্মীরা, যাদের সাপোর্টে ভরসা করে মাঠে বল নিয়ে নেমে পড়েছে শিবির। যারা আসলে কোন চেতনায় বিশ্বাস করেন না। তো ওদের নিয়েও ভয়ের কিছু দেখছি না। নানা রকমের গুজব ছড়িয়ে তারা এটাও প্রমাণ করছেন, তারা আসলে হেরে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছে হার মেনেছেন তারা। তাই শেষ চেষ্টায় নিজেদের জীবন বিলীন করে প্রমাণ করতে চাইছেন তারা আছেন!! ত্রাস সৃষ্টিই এই মৃত্যু মৃত্যু খেলার এক ও অভিন্ন উদ্দেশ্য।
দুই-একদিন আগে রাজধানীতে হরতালের সমর্থন দিয়ে বিশাল এক মিছিল বের করে দলটি। তাদের দাবি লক্ষাধিক কর্মী যোগ দিয়েছিলো এই মিছিলে। হবে হয়তো, কারণ মতিঝিল থেকে পল্টন...লোকে লোকারণ্য..তিল ধরণের ঠাঁই নাই। কিন্তু এই এতো লোকের মিছিল সামাল দিতে আইন-শৃংখলা বাহিনীতে কর্মরত ছিল মাত্র ৩০০ সদস্য। আইনশৃংখলা বাহিনী প্রধান তো সংশয়ে..কিভাবে ছত্র-ভঙ্গ করবে এতো বড় মিছিল?
সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আঁটলেন কৌশল। ফাঁকা গুলি ছুড়লেন। দুই/তিনটা গাড়ি দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে টহল দিলেন মিছিলের শুরু থেকে শেষ। আর কিছু সদস্য দিয়ে দিলেন ধাওয়া। মুহুর্তেই লক্ষ জনতা গায়েব। এই হলো সেই দলের অবস্থা, আন্ত:সার শূন্য। সুতরাং ওরাও বাদ।
আর এ কয়দিনে দেশজুড়ে যে সম্পদ নষ্ট হলো বা হচ্ছে..তার জন্য সবাই মিলে না হয় একটা ব্যবস্থা করবো। আমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়েই না হয় পাশে দাঁড়াবো নির্যাতিতদের, ক্ষতিগ্রস্তদের। সমবেদনা জানাতে উপস্থিত হবো স্বজনহারাদের সামনে। ক্ষত ভরবে না হয়তো, কিন্তু সান্ত্বনা বা সাহস তো পাবে। সরকারকেও না হয় বাধ্য করবো সহযোগিতা করতে।
বাকি থাকলাম, আপনি আর আমি। আমরা তো শান্তিই চাই। তাই না। কিন্তু ঠিক মুহূর্তে আমি এমনই স্বপ্ন দেখছি। সুন্দর একটা সকাল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সে সকালের সূর্যে সাঈদী বা যুদ্ধাপরাধীর ছাঁয়াও দেখা যাবে না। সবচেয়ে বড় আশ্বস্তের ব্যাপার হলো সমুলে শেষ হবে জামায়াত-শিবির। নিষিদ্ধ হবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি। সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। এরপরও যেসব সহযোগিরা বেঁচে থাকছেন তারা আত্মগোপন করে আছেন। আর আমরা বুক ফুলিয়া রাস্তা দিয়ে চলতেছি। কোন ভয় নাই, শংকা নাই!
আমিও অনেকের মতো ভীষণ হতাশ। কি হবে, কি হচ্ছে ভেবে ভেবে দিন-রাত টেনশনে পার করছি। বিশেষ করে মানুষ খুন, জ্বালাও-পোড়াও, ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশজুড়ে নাশকতা, নিরাপত্তাহীনতা প্রতিক্ষণ ভাবাচ্ছে আমাকে। যখনি আমি নিরাশ হই ঠিক তখনি ‘উইল পাওয়ার’ বা ‘ইচ্ছাশক্তি’র কথা আমার ভীষণ মনে পড়ে।
কারণ আমি জানি, আমার এই হতাশাই আরো অনেক মানুষকে হতাশ করবে। যাদের কাছে আমি একমাত্র সাহস, কিংবা যারা আমার সাহস, তাদের হতাশা আমাকেও ভীত করে। ঠিক এই সময়টাতে আমি দ্বৈত দ্বন্দ্বে পড়ি। মনে এক, মুখে আরেক। মনে ভীষণ হতাশা..কিন্তু মুখে সবাইকে বলি ..আরে ধুর..কিছুই হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে!!
এটা দারুণ কাজ করে। অনেকক্ষেত্রে আসলেই সব ঠিক হয়ে যায়। বিপদও কেটে যায় কখনও কখনও। এটাই বোধহয় ‘ইচ্ছাশক্তি। ’ ইংরেজিতে যাকে বলে ‘উইল পাওয়ার’।
বিটিভির সাবেক প্রযোজক রফিকুল ইসলাম সরকার আমার দেখা সবচেয়ে ‘পজিটিভ’ মানুষ। ওনি এমন কোন বিষয় নাই, যেখানে খারাপ কিছু দেখেন। তার এই গুণটাই একটা অন্যরকম বৈশিষ্ট্য। একসাথে কাজ করেছি বেশ কয়েক বছর, সাথে ঘুরেছি। কথা বলেছি। তার মুখেই এই ‘উইল পাওয়ার’ এর কথা এতো শুনেছি যে গুনে শেষ করা যাবে না। এবার বোধহয় এই শব্দটার আসল ‘ক্ষমতা’ দেখার সময় এসেছে!!!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৩
আরআর