শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে প্রতিপক্ষ গ্রপ নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, উসকানিমূলক রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে একটি অহিংস আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন, খুন, ধর্ষণ, সহিংসতা চালাচ্ছে।
এমনকি তারা মিথ্যা, অপপ্রচার গুজব রটিয়ে সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে প্রলুব্ধ করছে, বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশে পল্লীবিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছে। আর এসব হীন কাজকে সমর্থন করার জন্য হিন্দু পুরানের বিদ্যাদেবী স্বরসতী প্রতিমাধারী, ডানপন্থী, মার্ক্সবাদী ফরহাদ মজহার, স্ত্রী পরিত্যক্ত স্বামী ডক্টর আসিফ নজরুল এবং রাজাকার পুত্র ডক্টর পিয়াস করিমের মতো কিছু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের তারা নিয়োগ করেছে।
কয়েকদিন ধরেই ভাবছি এসব বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের এবং তাদের প্রচারণা কৌশল নিয়ে লিখবো। ভাবতে ভাবতেই ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলামঃ ‘ফরাসি বিপ্লবেরও সমালোচনাকারী, বিরোধিতাকারী ছিল। তাই বলে ফরাসি বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যায় নি। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনও বৃথা যাবে না। ব্যর্থ হবে না কোনো দিন’।
ফেসবুকে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আরিফ জেবতিক এর অনেকগুলো স্ট্যাটাস পড়লাম। ভালো লাগলো। ব্লগার মারুফ রসুলের বুদ্ধিদীপ্ত মুখের বিনয়ী হাসিটা মনে পড়লো। ডাক্তার ইমরান, স্লোগান কন্যা লাকী’র কথা মাথায় আসলো।
তারপরেও এই সময়ে আরো কে কি ভাবছে, কে কি লিখছে তা দেখার জন্য সচলায়তন ব্লগে ঢুকলাম। একটি লেখায় চোখ আটকে গেল। লেখার শিরোনামঃ ‘এসো নিজে করিঃ আন্দোলনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সহজ ফর্মুলা। ` ব্লগটি লিখেছেন সৈয়দ মাইনুদ্দিন কামাল (বাবু)। এখানে তাঁর লেখাটি উদ্ধৃত করছিঃ
“কোনো আন্দোলন আপনাকে বেকায়দায় ফেলছে? কোনো ভাবেই আর সেই আন্দোলন সামাল দিতে পারছেন না? চিন্তা নেই, আন্দোলন মোকাবেলা না করতে পারলেও আপনার গাঁ বাঁচানোর জন্য আছে বিকল্প ব্যবস্থা। আন্দোলনে বিভ্রান্তি তৈরি করুন। বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য অনুসরণ করুন এই সহজ ৪-দফা ফর্মুলা।
এই ফর্মুলার কার্যকারিতার ব্যাপারে আমরা ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে থাকি। অতীতে এই ফর্মুলা আপনার বাপ-দাদারা বারবার কাজে লাগিয়েছে। আপনিও পারবেন।
আন্দোলনের চরিত্র হননের কৌশল নির্ধারণ করুন
আন্দোলনের নেতাকর্মীদের গাঁজাখোর, পতিতা বা ধর্ষক আখ্যা দিয়ে লোক খেপিয়ে তোলা কঠিন। লোক খাপানোর জন্য অবশ্যই ধর্ম নিয়ে খেলা করতে হবে। সুতারাং আন্দোলনের বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য আন্দোলনের “ধর্মবিরোধী” চরিত্র আবিষ্কার করুন।
নাস্তিকতায় বিশ্বাসী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করুন
আন্দোলনের “ধর্মবিরোধী” চরিত্র আবিষ্কারের সহজতম উপায় হল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কোনো নাস্তিককে খুঁজে বের করা। কোনো নামী দামী বিখ্যাত নাস্তিক খোঁজার প্রয়োজন নেই। হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন কোনো ছোট খাট অখ্যাত নাস্তিক হলেই চলবে। তাকে বিখ্যাত করার ব্যবস্থা আপনিই করবেন।
অবিশ্বাসী ব্যক্তিকে বিখ্যাত করে তুলুন
আপনার চিহ্নিত অবিশ্বাসী ব্যক্তিকে বিখ্যাত বানান। এক্ষেত্রে কাউকে বিখ্যাত বানানোর সহজতম উপায়গুলোর একটি হল রাজধানী শহরে রাতের অন্ধকারে ধরে জবাই করে দেয়া। নিশ্চিত, মুহূর্তেই সেটা নিউজ কাভারেজ পেয়ে যাবে।
“ধর্মবিরোধী” লেখালেখি নিয়ে প্রচারে নামুন
জবাই করে বিখ্যাত বানিয়ে নেওয়ার সহজ কাজটি শেষ। এবার আন্দোলনে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য আসল পদক্ষেপ নিন। আপনি জবাই করে যাকে বিখ্যাত বানিয়ে নিলেন, এবার তার নাস্তিকতা বিষয়ক লেখালেখি দিয়ে প্রচার চালিয়ে লোক ক্ষেপিয়ে তুলুন। জবাইকৃত লোকটির নাস্তিকতা বিষয়ক লেখালেখি পর্যাপ্ত না থাকলে সমস্যা নেই, আপনি মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজেই কিছু রচনা করে ফেলুন। আশা করি, আপনি অল্প চেষ্টাতেই নাস্তিকতা বিষয়ক লোক ক্ষেপানোর উপযোগী লেখা পয়দা করে ফেলতে পারবেন।
লক্ষ্যে অটুট থাকবেন...লাইন থেকে বিচ্যুত হবেন না। অবশ্যই আপনি কামিয়াব হবেন। মনে রাখবেন, ধর্ম প্রচার করা কিংবা ধর্মবিরোধী মতামত প্রতিরোধ করা আপনার কিংবা আপনার দলের আদর্শ নয়। আপনার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে একটি গণআন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। "
প্রিয় পাঠক, এই লেখাটি কি কাল্পনিক? আপনার কি মনে হয়? এই লেখাটির সঙ্গে আপনি কি সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনার মিল খুঁজে পাচ্ছেন? যদি কোনো ধরনের মিল খুঁজে পান তাহলে বুঝে নিব, আপনার বোধের দুয়ার রুদ্ধ নয়।
শাখাওয়াত নয়ন; ব্লগার, ঔপন্যাসিক, পিএইচডিরত গবেষক। ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২১০৩
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর