রাষ্ট্র যদি একটি পরিবার হয়, সরকার যদি হয় অভিভাবক আর জনগণ তার সন্তান, তাহলে পরিবারের নিশ্চয়তার দায়িত্ব এসে বর্তায় অভিভাবকের উপর।
অভিভাবক নিশ্চয় তার অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করতে যা করতে হয় তা করবেন।
কারণ সন্তান খারাপ হলে যে তাকেই শুনতে হবে প্রতিবেশীর কানকথা, তিরস্কৃত হবেন পদে পদে। তেমনি পরিবারকে ভালোভাবে আগলে রাখলে, সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চত করতে পারলে এই প্রতিবেশীরাই তো আসবে প্রশংসা করতে। চাইবে এই পরিবারটির সাথে সম্পর্ক রাখতে, চাইবে এই পরিবারের আত্মীয় হতে? সন্তান ভালো হলেও প্রশংসা পাবেন অভিভাবক, আর সন্তান খারাপ হলেও তিরস্কারটা পাবেন ওই অভিভাবকই। সুতরাং দায়টা আসলে অভিভাবকের, মানে সরকারের।
দেশের মানুষ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান দুই দলের। সাংঘর্ষিক তো বটেই। ভীষণ মুখোমুখি দুই দল। পরিবারের সদস্যরা আজ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত। একজন অন্যজনের রক্ত পিপাসু হয়ে উঠেছে। ঠিক এ সময়টাতে কোনভাবেই সন্তান বা জনগণের পক্ষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব নয়। প্রয়োজন শক্ত হাতের অভিভাবকের। যার ‘স্পষ্ট অবস্থান’ই সমাধান করে দেবে অনেক সমস্যা।
যেমন করে জীর্ণকায়, শীর্ণকায়-ধারী নাইট গার্ডদের ‘হুঁশিয়ার-সাবধান’ বাণী নিশ্চিন্তে ঘুমাতে সহযোগিতা করে সাধারণের। ঠিক তেমন করে হলেও সময় এসেছে জনগণকে আশ্বস্ত করার, যে তারা আছেন? তাদের ‘হুঁশিয়ার-সাবধান’ বাণী শুনলেও নিরাপদ বোধ করবেন আমজনতা। আর এই বাণীই কাউকে কাউকে সতর্ক করে দেবে, ‘জেগে আছে বাংলাদেশ’।
আমাদের অনেক সমস্যা আছে, যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা যায়, পাড়া-মহল্লাবাসী মিলেই সমাধান করতে পারে। কিছু সমস্যা আছে যেটা ইউনিয়নের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব। তেমনি কিছু সমস্যা আছে যেগুলো পর্যাক্রমে উপজেলা, জেলা কিংবা বিভাগীয়ভাবেই সমাধান করা সম্ভব। যার জন্য কোন সরকার বা রাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে না। স্থানীয় সমস্যার স্থানীয় সমাধান।
কিন্তু যখন প্রশ্ন জাতীয় চেতনার, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার, সার্বভৌমত্ব রক্ষার, তখন দায়িত্ব এসে বর্তায় রাষ্ট্রের কাঁধে। রাষ্ট্র তার সব শক্তি ব্যবহার করে হলেও নিরাপদ রাখবে তার জনগণ, জনগণের সম্পদ, সার্বভৌমত্ব। এটাই তখন রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ।
যাকে যেভাবে নয়, সত্য, ন্যায় আর সুন্দরকে বেছে নিয়ে কঠোর হাতে দমন করতে হবে অন্যায়-অসত্য আর অসুন্দরকে। কারণ সত্য যে বড় কঠিন। আমাদের আগামীকে সেই সত্য ও সুন্দরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে রাষ্ট্রকেই এ কঠিন দায়িত্বটি পালন করতে হবে।
কারো ভয়ে ভীত, দ্বিধাগ্রস্ত নয়, স্বমহিমায় উজ্জ্বল এক অগ্নিশিখা। যে শিখার আলোয় ঘুচে যাব সব অন্ধকার, দূর হয়ে যাবে সব পঙ্কিলতা, দ্বেষ-ক্লেশ-ভয়, জরাজীর্ণতা। যে আলোয় আলোকিত হবে দেশ। যে আলো ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়। বিশ্বের বুকে দাঁড়িয়ে জানান দেবে, আমি সেই রাষ্ট্র, আমি সেই সরকার যে ভাষার প্রশ্নে কখনও মাথানত করেনি, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করেনি কখনও। এ দেশের মা-মাটি-মানুষ তখনও নিরাপদ ছিল, এখনো নিরাপদ আছে এবং ভবিষ্যতেও নিরাপদ থাকবে।
সাজেদা হক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশন
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৩