আওয়ামী লীগ একসময় জামায়াত ইসলামীর সাথে একসাথে মিলে আন্দোলন করেছে। এজন্য এখনো আওয়ামী লীগকে গালাগাল কম শুনতে হয় না।
খালেদা জিয়া আসলে কি চাইছেন? আমার নিজস্ব মত, তিনি একটি অসাধারণ সুযোগ (তার মতে) নিতে চাইছেন। তিনি দেখছেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিহাস বলে, শুধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে বাংলাদেশে সুবিধা করা কঠিন। উদাহরণ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভোট পায়। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে, এই ভোট কার ঘরে উঠবে? বিএনপি এই ভোট কুড়িয়ে নিতে চাইছে। গণতন্ত্রের লেবাস পরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বাজার ভালো। সেই কাজটিই চালিয়ে নিতে চাইছেন খালেদা জিয়া। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জামায়াতের তথা দর্শভিত্তিক রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করার বিএনপির পরিকল্পনা। খালেদার জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্য সেদিকেই ইশারা করে। তিনি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলছেন, বিধর্মী বলছেন। এধরনের অভিযোগ আমরা ইসলামিক দলগুলোর কাছ থেকে পেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু খেয়াল করুন একটি ‘গণতান্ত্রিক’ দল এখন এসব শব্দ ব্যবহার করছে। কারো যেন নাস্তিক হওয়ার অধিকার থাকতে পারে না, সবাইকে আস্তিক হতেই হবে। নাস্তিকতাকে তিনি একটি গালির মতো করে ব্যবহার করছেন। ভাবতে অবাক লাগে এই স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এই বিএনপির ভূমিকা ছিল অসামান্য। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর যে জামায়াত হিন্দুদের ঘর-বাড়িতে আগুন দিল, লুটতরাজ চালালো সেই জামায়াতের বিরুদ্ধে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। করে লাভও নেই। তিনি জানেন বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ হিন্দু, তারা বিএনপিকে ভোট দেয় না। বেগম জিয়া আছেন তার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারকে নিয়ে।
অনেকের আশঙ্কা, জামায়াত ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হলে দলটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, জামায়াত ভিন্ন নামে নতুন দল খুলবে। আর আমার আশঙ্কা, নিষিদ্ধ জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত ঠাঁই হবে বিএনপিতে। জঙ্গি কর্মকাণ্ড বিএনপির চেয়ারে বসেও চালানো সম্ভব।
কয়েকদিন আগে তিনি জামায়াতি সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্সিগঞ্জের মন্দির পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তার সফরবিরোধী সমাবেশও হয়েছে। তার সত্যিই সফর হাস্যকর। জামায়াত ইসলামী তার জোটের প্রধান শরিক এবং গত চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার ও সুবিধাভোগী। সেই খালেদা জিয়া মনে করতেই পারেন, ১৯৭১ সালেও গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরীরা কোনো অপরাধ করেননি। সুতরাং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের বিচার করা অযৌক্তিক। তিনি যদি এখন বলেন, আসলে মুক্তিযোদ্ধারাই সেসময় ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছিল, হত্যা ও ধর্ষণ করেছিল তাতেও অবাক হব না। তার যুক্তি হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে জামায়াত সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়নি। সরকারের লোকরাই এজন্য দায়ী। তাহলে কি সরকারের পুলিশ বাহিনী সরকারেরই লোকজনের ওপর গুলি চালালো?
১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধীদের বেগম খালেদা জিয়া আশ্রয় দিয়েছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং দানব করেছেন। শেষে দানবদের পক্ষে মাঠে থেকে তিনি ষোলকলা পূর্ণ করলেন। এজন্য বাংলাদেশ তাকে ক্ষমা করবে না। এখনো সময় আছে নতুন প্রজন্মের দিকে আঙুল না তুলে তাদের দিকে সৌহার্দের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনারা বলছেন, গণজাগরণ মঞ্চ নাকি আওয়ামীলীগের ইশারায় চলছে। বিএনপি’র ইশারায় চলতে দোষ কি? আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে আপনাদেরকে বারণ করেছে কে? আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান, তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলুন, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’। অন্তত এই জাতীয় ইস্যুতে তো দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারতো। তাহলে সামনের জাতীয় সঙ্কটগুলোর সমাধানে আমরা সাধারণ জনগণ আশায় বুক বাঁধতে পারতাম। আওয়ামীলীগ হয়তো চাইবে না যুদ্ধাপরাধ-সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের সাথে বিএনপি’র ঐক্য তৈরি হোক। তাই বলে বিএনপি কেন এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করবে? বিএনপি হাতছাড়া করছে, তারা উল্টো জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে হেয় করছে, অপমান করছে। আর এজন্যই এদেশের সংগ্রামী ইতিহাসে স্বাধীনতাবিরোধী গোলাম আযমদের পাশেই লেখা থাকবে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল ও খালেদা জিয়ার নাম।
লেখক : ফটোসাংবাদিক ও লেখক
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৩