প্রশিক্ষণ দিলে সব দেশের পাখিরাই কথা বলতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার এডিলেইডে একটা চিড়িয়াখানা দেখতে গিয়ে আমার সেই বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হয়েছিল।
ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জনাব মনোয়ার রুবেল বাংলানিউজটোয়েন্টফোরডটকমে “জিহ্বার আস্ফালন” শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি হাল আমলে বেগম খালেদা জিয়ার জিহ্বার আস্ফালন সম্পর্কে খুব ভালো করেই বলেছেন। তার নিবন্ধটি পড়ে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের নেতা-নেত্রীদের পোষ্য তোতা পাখিদের ব্যাপারে তিনি কিছু লিখলে তার লেখাটি আরো সমৃদ্ধ হতো। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতা-নেত্রীরা যা-ই বলেন তাদের অনুসারী তোতা পাখিরা তা-ই বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। তাদের জিহ্বার আস্ফালনও কোনো কিছুতে কম নয়। বুলি শাখানো পাখির মতো কোনো কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা আল্লাহ তাদের দেন নাই অথবা তাদের সেই ক্ষমতা পুরোপুরি লোপ পেয়েছে।
এতে করে তারা যত শিক্ষিত ব্যক্তিই হোক না কেন? রাস্তার কালুও যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আইজুদ্দীনও তা। কোনো পার্থক্য নেই। তারা একবারও ন্যায়-অন্যায় কিংবা সত্য মিথ্যার ধার ধারেন না। এক কথায় নেতা নেত্রীরা দলের মধ্যে কোনো ভাবেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন না। জবাবদিহিতা বলে কিছু নাই। ফলে তাদের যার যা খুশি তাই বলতে পারেন। তারা সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে ককটেলবাহিনী, জাঙ্গিয়াবাহিনী পর্যন্ত উস্কে দিতে দ্বিধা করেন না। যখন তখন গণবিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন। এক সময় রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সেশনজটে পড়তে হতো, এখন হরতালের কারণে এসএসসি, এইচএসচি পরীক্ষার ছাত্ররা পর্যন্ত সেশন জটে পড়ছে। হরতালের কথা ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা গল্প তৈরি হলো। গল্পটি হচ্ছে-
হরতালের আগের দিন শেষ রাতের দিকে এক শালিকের বউ তার স্বামীকে আস্তে করে ঠ্যালা দিয়ে বলেঃ
-এই ওঠো না?
-এখনো তো রাইত পোহায় নাই। ডাকো ক্যান?
-রাইত পোহাইলে কি আর বাইর অইতে পারবা? পোলাপানগুলা না খাইয়া থাকবো না?
-তাই বইলা এত রাইতে?
-হু। জানো না ৬টা থেকে তো আবার হরতাল?
-হরতালে আমাগো কি? আমরা কি রাজনীতি করি? কইতর ছাড়া আর কোনো পাখির তো কোনো রাজনৈতিক কাম নাই।
-এতোদিনেও তোমার হুঁশ হইলো না? দেখো না, পুলিশ খালি আকাশের দিকে শতে শতে গুলি করে? এই গুলিতে মরার ভয় তো আমাগোই বেশী, নাকি?
-হু, ঠিকই কইছো। আমরা মরলে তো কেওই একটু হরতালও দিব না। শোক পালন তো দুরের কথা।
-হরতাল দিব কোন দুঃখে? আমাগো কি কোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক পরিচয় আছে?
-না। তা নাই...। তয় আমাগো কি কোনো দুঃখ নাই?
-তা আছে। তয় এই দ্যাশে জালালী কইতর অইয়া জন্মাইলেই ভালো আছিল। কোনো এট্টা মাজারে গিয়া পইড়া থাকতাম। লিল্লাহ বোর্ডিং। খাওন পড়নের কোনো চিন্তাই করতে অইতো না।
লেখকঃ ব্লগার, কলামিস্ট, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, পিএইচডিরত গবেষক। ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৩