টেলিভিশন খবরে দেখলাম বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে হরতাল দেওয়া ছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি-র অস্ত্বিত্ব রাখা যাবে না! এই একই কারনে ১/১১-র সময়ে সেনাবাহিনীর হাতে সঙ্গতঃ কারনেই তারেক জিয়াসহ অসংখ্য বিএনপি নেতার ওপর ক্রুর আচরণের পরেও এবারের বগুড়া সফরে ম্যাডাম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে পরিত্রাতা হিসেবে ডাকাডাকির প্রানান্তকর চেষ্টা করেছেন। পরে অবশ্য বর্ষীয়ান নেতাদের পরামর্শে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের ডেকে "শাক দিয়ে মাছ ঢাকা”র মতো বোঝানোর চেষ্টা করেছেন!
আসলে ব্যাপার হচ্ছে এক সময়ের আওয়ামীলীগ বিরোধী পিকিংপন্থি ও মুসলিম লীগের সুবিধাবাদি আর একাত্তরের মূক্তিসংগ্রাম বিরোধী শক্তি এক হয়ে ঢাকা সেনানিবাসে বসে প্রয়াত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ওস্তাদ মেনে ও স্যার স্যার ডেকে (শাহ আজিজুর রহমান, যাদু মিয়া ইত্যাদি) প্রথমে "উলসী-যদুনাথপুর" এর ধান চাষ আর খাল কেটে কুমীর আনার গল্প শুনে ও পরে জিয়ার সহকারী জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশুর সাথে "দিশারী" লঞ্চে ঢাকা-খুলনা-বরিশাল রুটে কয়েকবার চক্কর মেরে "জাগদল" বা জগদ্দল নামে একটি "ককটেল" কিসিমের দল তৈরি হয়েছিল।
পবিত্র হজ্বের জাহাজ "হিজবুল বাহার" এ করে সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাছাই করা ছাত্র-ছাত্রীদের সামুদ্রিক প্রমোদ ভ্রমনে রাষ্ট্রীয় খরচে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান (হাবিবুল্লা হাবিব বা হেলেন জেরিন খানরা ভাল বলতে পারবেন!)! তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি এনামুল করিম শহীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নাজেহালের শোধ তুলেছিলেন! সেইটাই ছাত্র সন্ত্রাসের সিস্টেমিক আসল শুরু, তার আগের গুলো ছিলো বিক্ষিপ্ত!
পরবর্তীতে কাজী জাফর আহমেদের ইউ পি পি, হাজী দানেশের "জাগমুই", ছাড়াও আরো কতিপয় পিকিংপন্থি আর জামায়াতী ও সমমনাদের নিয়ে পরবর্তীতে দলটি তৈরি করে দেয় সেনানিবাসের এক শ্রেনীর অফিসার! এই দলটিই বিএনপি যারা এখন কিনা গণতন্ত্রের জনক বলে নিজেদের দাবি করে! তো এরা যে সেনাবাহিনীকে ডাকবে ঘুমের ঘোরেও তাতো নিশ্চিতই, কিন্তু ১/১১-এর কথা মনে পড়ে যাওয়াতেই আবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে সাফাই বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, বেগম জিয়া অমন কথা বলেন নাই।
আসল কাহিনী হলো বিএনপির সুবিধাবাদী নেতৃত্বের ভেতর এখন "রিস্ক" নেয়া কিসিমের নেতা আর নেই বা শর্ট পড়ে গেছে, তাই ঢাকা জেলার হরতাল হয় নি! এমন কি এদের নিজেদের মিটিং মিছিল করবার মতো সাহস ও এরা হারিয়ে ফেলেছে শুধু বগুড়ার মতো নিজেদের কিছু এলাকা ছাড়া! তাই হরতাল দিয়ে জামায়াতী তাণ্ডব চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে এখন বিএনপি মরিয়া! বিএনপির একদফা আসলে নিজেদের দল বাঁচানোর প্রকারন্তরে নিজেদের কামাই করা বিপূল বৈভব বাঁচানোর শেষ চেষ্টা, তাই এখন তারা জামাতের অন্তর্ঘাতমূলক রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপকেও মেনে নিচ্ছে নিজেদের বাঁচিয়ে অবশ্য!
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের বোরকা অভিযান, রিজভির অফিস কে বাড়ী বানানোর কৌশল সবই একই সুত্রে গাঁথা! তার ওপর অফিস ঘুঘু বিএনপি নেতারা এখন সবাই ভেতরে, খোকা ডায়াবেটিস হাস্পাতালের সাথে ব্যাবস্থা করে রেখেছে, সালাম সহজে আর কিছু করার সাহস পাবে বলে মনে হয় না! শফিউল আলম প্রধানের বিরুদ্ধে "বায়তুল মোকাররমের" জুয়েলারি ডাকাতির মামলা মাথা চাড়া দিলেও আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই!
তাই এবারের ৩৬ ঘন্টার হরতাল হবে জামাতের অন্তর্ঘাতমূলক "ঝটিকা মিছিল" প্রধান, এমনটাই সকলে মনে করছেন!
সত্যি, বড়ই দুঃখের কথা, ঢাকাতে একটি কেন্দ্রীয় মিছিল বের করার মতো সাংগঠনিক শক্তিও এখন বিএনপির নেই! কাল বিএনপি কোন কেন্দ্রীয় মিছিল করতে পারবে বলে মনে হয় না, চেষ্টা করবে শিবির স্টাইলে "ঝটিকা" ধরনের কিছু একটা করে ম্যাডামকে তুষ্ট রাখতে ও নিজেদের টিকিয়ে রাখতে!
তাই আজ-কালের হরতালে জনগণ গাড়ি বের করবে না ভাংচুরের ভয়ে, সতর্ক থাকবেন বোমা ও ককটেল আতংকে, দিন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যতই স্বতঃস্ফুর্ত হরতালের দাবি করুন না, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি কখনই চাপের মুখে টিকে থাকতে পারেনি (এক সময় ডাঃ মতিন আলাদা বিএনপি বানিয়েছিলেন!)!
সঙ্গত কারণেই জনগণের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ বেধড়ক পিটুনী ও গ্রেফতার বাড়িয়ে দেবেই, সেটা বিএনপি নেতাদের সবাইই জানেন! আজ কাল সহ বহু রাত্রি তারা বাড়ী থাকেন না, আজ তাদের বড়নেতার বেশীর ভাগকেই (যারা গ্রেফতার হন নি) গুলশানে কূটনৈতিক পাড়ার আশেপাশে আত্মীয় বা সুহৃদের বাড়িতে পাওয়া যাবে বলেই অনেকের ধারনা!
বাংলাদেশ সময় ১৭৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৩।